তালাকের প্রতিশোধ নিতেই স্ত্রীর আগের পক্ষের সন্তানকে হত্যা
১৮ মে ২০২২ ১৮:৩৫
বগুড়া: তালাক দেওয়ার প্রতিশোধ নিতেই স্ত্রীর আগের পক্ষের সন্তান মাদরাসা শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম সাব্বিরকে (১০) হত্যা করেন তারই সৎ বাবা ফজলুল হক (৩৫)। হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ফজলুল হক ও তার সহযোগী অনিতা রানীকে গ্রেফতার করেছে।
বুধবার (১৮ মে) দুপুর ১২টায় বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সংবাদ সম্মলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, মঙ্গলবার (১৭ মে) শাজাহানপুর থানার মানিকদীপা কমলা চাপড় গ্রামের একটি লাউ ক্ষেত থেকে অজ্ঞাত এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ জানতে পারে, উদ্ধার হওয়া মরদেহটি একই উপজেলার সাজাপুর পূর্ব দক্ষিণপাড়া তালিমুল কোরআন হাফেজিয়া মাদরাসার আবাসিক ছাত্র সামিউল ইসলাম সাব্বিরের।
জানা যায়, সাব্বিরের মা সালেহা বেগম। তিনি শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর গ্রামের মৃত তালেব আলীর মেয়ে। সালেহা পুলিশকে জানান, ১২ বছর আগে মাঝিড়া কাগজিপাড়া গ্রামের মৃত মনছুর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের ঘরে জন্ম নেয় সাব্বির। মাদক সেবনের কারণে সালেহা বেশ কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীরকে তালাক দেন। এরপর সন্তানকে সঙ্গে রেখে ফজলুল হককে বিয়ে করেন।
সালেহা পুলিশকে বলেন, বিয়ের পর ফজলুল হক সন্তানকে মেনে নেন না। সন্তানকে সরানোর জন্য সালেহার ওপর চাপ তৈরি করেন এবং সাব্বিরকে মারধরও করেন। পরে গত ১১ জুলাই সালেহা তালাক দেন ফজলুল হককে এবং সন্তান সাব্বিরকে মাদরাসায় রেখে আসেন।
পুলিশ সালেহার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে আটক করেন ফজলুল হককে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানান, তালাক দেওয়ার কারণে সাহেলার ওপর ক্ষুব্ধ হন তিনি। সন্তানের কারণেই সালেহা তাকে তালাক দিয়েছেন— এই ক্ষোভ থেকে তিনি সাব্বিরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী সোমবার (১৬ মে) বিকেলে মাদরাসায় গিয়ে তিনি সাব্বিরকে বাড়িতে নিয়ে যাবেন বলে বের করেন। মাদরাসার আবাসিক শিক্ষক আবু মুছা ওই সময় ফজলুলকে জানান, মায়ের অনুমতি ছাড়া সাব্বিরকে তার কাছে দেওয়া যাবে না।
পুলিশ বলছে, এসময় আনিতা রানীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন ফজলুল হক। তাকে সাব্বিরের মা সাজিয়ে ফোন করেন মাদরাসায়। অনিতা ফোন করে মাদরাসার শিক্ষককে অনুরোধ করেন ফজলুল হকের কাছে ছেলেকে দেওয়ার জন্য। পরে সাব্বিরকে ফজলুল হকের কাছে দিয়ে দেয় মাদরাসা।
এরপর সাব্বিরকে খরনা ইউনিয়নের মানিকদীপা কলমা চাপড় গ্রামের মাঠে নিয়ে যান ফজলুল হক। সেখানে একটি লাউ ক্ষেতে রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বাঁশের খুঁটির সঙ্গে তাকে বেঁধে রেখে চলে যান।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, মঙ্গলবার সকালে শিশুটির মরদেহ উদ্ধারের পর ডিবি ও থানা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে। তার পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর সব তথ্য পুলিশের কাছে চলে আসে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফজলুল হক ও তার সহযোগী অনিতা রানীকে গ্রেফতারও করা হয়।
সারাবাংলা/টিআর