‘বিএনপি ও জামায়াত একই মায়ের সন্তান, জন্ম পাকিস্তানে’
১৮ মে ২০২২ ১৭:৪০ | আপডেট: ১৮ মে ২০২২ ২০:১৭
ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে একই মায়ের দুই সন্তান বলে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, দু’টি দলের জন্মই পাকিস্তানে। পাকিস্তানি জামায়াতের অংশ হলো বাংলাদেশের জামায়াত। আর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। এই দু’টি দল একই মায়ের পেটের সন্তান। এই কথাটা ওরাও খুব গর্ব করে বলে। এরা বাংলাদেশের কেউ না। এই দল দুইটি বাংলাদেশবিরোধী রাজনৈতিক দল।
বুধবার (১৮ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে একটি পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের যৌথ আয়োজনে ‘আগামী নির্বাচন: রাজনৈতিক সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশ গুপ্ত, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল দেবনাথসহ অন্যরা।
আলোচনায় মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, নির্বাচনে কে অংশ নেবে কে নেবে না— এটা নিয়ে আলোচনার সময় এখন নয়। নির্বাচনের আরও দুই বছর বাকি। এ আলোচনা নির্বাচনের তিন থেকে চার মাস আগে হওয়ার কথা। তাহলে আমরা এ বিষয় নিয়ে কেন আলোচনা করছি?
তিনি বলেন, কারণ এখন থেকেই বিএনপি বলছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। তারা একটা ইস্যু তৈরি করতে চাচ্ছে। কারণ সরকারের উন্নয়ন মোকাবিলা করার মতো রাজনৈতিক সক্ষমতা বিএনপির নেই।
হানিফ আরও বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কারণ তাদের মূল শক্তি জামায়াতের নেতারা তখন যুদ্ধপরাধের দায়ে কারাগারে ছিল। সে সময় বিএনপির প্রধান দুই নেতা আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ছিল। তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এখন কেন নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে না?
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি না, সেটি নির্বাচন কমিশন বলবে। ওই নির্বাচনে বিএনপি সারাদিন বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিল যে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। যখন তারা দেখল তারা শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছে, তখন তাদের সুর পাল্টে গেছে। তখন তারা বলতে শুরু করল, ভোট সুষ্ঠু হয়নি। আমরা কোনটা বিশ্বাস করব?
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে জানিয়ে হানিফ বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, সংবিধান অনুযায়ী হবে এবং সব দলকে নিয়েই হবে। আর সেই নির্বাচন যদি সুষ্ঠুও হয়, তাও অন্য সব দলের কিছু অভিযোগ থাকবে। এটাই আমাদের আচরণগত স্বভাব। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, আমরা করোনা সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। তাই আমাদের অর্থনীতি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে একটু অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করছি আমরা। সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই আমরা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারব।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এ দেশের সংকটগুলোতে বেশি আক্রান্ত হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। কাজেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তি একটি প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াতে পারেনি। আওয়ামী লীগও সেটা করতে পারেনি। মৌলবাদীদের আস্ফালন এখনো আছে। তার চেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, তারা যুথবদ্ধ, তাদের কিছু জনপ্রিয়তাও আছে। এটাকে ইস্যু করে তারা এখনো এ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আমি এখন দেশে কোনো সংকট দেখছি না। কীসের সংকট? স্বাভাবিক নিয়মে নির্বাচন হবে। সরকার সেদিকেই যাচ্ছে। এজন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রয়োজন ছিল, সেটাও হয়েছে। ফলে সংকট নেই। যারা সংকট তৈরি করতে চায়, তারা মূলত দেখতে চায়— দেশটা শ্রীলংকা হয়ে যাক।
গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, রাজনৈতিক সরকার রাজনৈতিক নেতৃত্বে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাড়ছে। বাণিজ্য সচিব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছেন। পরে মন্ত্রী কথা বলছেন। এসব জায়গায় রাজনৈতিক সংকটের জায়গা নিয়ে চিন্তা করার বিষয় আছে।
ঢাবি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, প্রতিবছর নির্বাচনের আগে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শুরু হয়। আমি বলব— নিবন্ধিত দলগুলো নির্বাচনে আসুক। তবে আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চাকে অনুধাবন করতে হবে। রাজনৈতিক চর্চা করতে হবে। রাজনীতি বাদ দিয়ে কিছু চিন্তা করতে পারি না। এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের অনেক দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ নারী। আর এ নারীদের ৩৩ শতাংশ আসন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের কতটুকু জায়গা দিচ্ছে? ভাইয়েরা কি প্রস্তুত বোনদের ছেড়ে দিতে?
কাজল দেবনাথ বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রাজনীতিতে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজনীতিতে আজ একজনের প্রতি আরেকজনের আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়েছি। বিশ্বাস রাখতে পারছি না। রাজনীতি কি জনগণের জন্য, নাকি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য?
সারাবাংলা/টিএস/টিআর
আগামী নির্বাচন টপ নিউজ নির্বাচন ঘিরে সংকট মাহবুবউল আলম হানিফ মুক্ত আলোচনা