মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিলেই বাড়তি সুবিধা নয়: রেলওয়ে
৮ মে ২০২২ ২১:১১ | আপডেট: ৯ মে ২০২২ ০০:২০
ঢাকা: মন্ত্রীর আত্মীয় বা স্বজন পরিচয় দিলেই তার জন্য ট্রেনে বিশেষ কোনো সুবিধা না দিতে কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের স্বজন পরিচয় দিয়ে সুবিধা দাবি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে টিকিট পরীক্ষককে (টিটিই) সাময়িক বরখাস্তের ঘটনার জের ধরে মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেছে।
রোববার (৮ মে) রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের সই করা এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ পাঠানো হয়েছে রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক, স্টেশন ম্যানেজার, স্টেশন মাস্টার ও ট্রেনের পরিচালকদের।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে— সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, রেলপথমন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের অগোচরে তাদের রেফারেন্সে আত্মীয়/পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্টেশনে টিকেট দাবি করা, ট্রেনে উঠে বিশেষ সুবিধা চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া অনেকেই মন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে রেলের পরিচালকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করছেন বলে জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন-
- টিটিইকে বরখাস্ত করায় এবার ডিসিওকে শোকজ
- টিকিট ছাড়া ভ্রমণকারীরা আমার আত্মীয় না: রেলমন্ত্রী
- বিয়ে মাত্র ৯ মাস, অনেক আত্মীয়ই চেনেন না রেলমন্ত্রী
- মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে রেল ভ্রমণ, ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন
বিষয়টি রেলপথমন্ত্রীকে জানানোর পর তিনি এ ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে এবং সংশ্লিষ্ট মোবাইল নম্বরগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়ে তাদের পরিচয় জানার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে অফিস আদেশে।
এ ধরনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য এবং দাফতরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য অফিস আদেশে বলা হয়েছে।
এর আগে, রেলপথমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ, তাদের জরিমানা করা এবং টিটিই’র বরখাস্ত হওয়ার ঘটনাটি গত কয়েকদিন ধরেই দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছে। জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) রাতের পাবনার ঈশ্বরদী থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে ঢাকাগামী ট্রেন আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেসে উঠে এসি কামরায় বসেন। ওই ট্রেনের টিটিই শফিকুল ইসলামের টিকিট চাইতে গেলে তারা নিজেদের রেলপথমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় বলে পরিচয় দেন। কিন্তু টিটিই তাতে না দমে গিয়ে তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেন এবং এসি কামরা ছেড়ে সুলভ কোচে বসতে বলেন।
পরদিনই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হলে জানা যায়, ওই তিন যাত্রীর মধ্যে এক জন রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর মামাতো বোনের ছেলে, বাকি দু’জন তার মামা। তিন জনকে জরিমানা করার পর মন্ত্রীর স্ত্রী রেলওয়ে পাকশী বিভাগের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (ডিসিও) ফোন করেন। এর পরপরই পাকশীর ডিসিও বরখাস্ত করেন ওই টিটিই’কে।
শনিবার (৭ মে) এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা যাত্রীরা তার আত্মীয় নন। কেউ হয়তো তার নাম ভাঙিয়ে সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন। তবে পরদিন, তথা আজ রোববারই (৮ মে) তিনি নিজ দফতরে এক ব্রিফিংয়ে স্বীকার করে নেন, তারা তার স্ত্রীর আত্মীয়। বিয়ের মাত্র ৯ মাস হওয়ায় এখনো তিনি স্ত্রীর পক্ষের আত্মীয়দের চিনতে পারেননি বলেই আগের দিন আত্মীয়তার কথা অস্বীকার করেছিলেন।
এদিন মন্ত্রী আরও জানান, এরই মধ্যে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন তথা যিনি টিটিই’কে বরখাস্ত করেছিলেন, তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বলা হয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর