Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এপ্রিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন-‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৭

স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট
১ মে ২০২২ ১৭:০৩ | আপডেট: ১ মে ২০২২ ১৭:০৫

ঢাকা: এপ্রিল মাসে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন ও ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধে’ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে র‌্যাবের সঙ্গে ৭টি বন্দুকযুদ্ধে ২ জন ও নৌ পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া যায়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফে’র সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এপ্রিল মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা বন্দুকযুদ্ধের ৭টি ঘটনায় র‌্যাবের সদস্যসহ গুলিবিদ্ধ হয়ে ছয়জন আহত ও অপর ঘটনাগুলোতে ১৩ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে দু’টিতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বিজ্ঞাপন

এমএসএফ জানায় ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাত ২টার সময় কুমিল্লার গোলাবাড়ি সীমান্তে সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাইম হত্যা-মামলার প্রধান আসামি রাজু র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। র‌্যাবের দাবি রাজু একাধিক মাদক মামলার আসামি ছিল। আর ২০ এপ্রিল রাত ২টার দিকে সিংগাইরের চারিগ্রাম ইউনিয়নের আলমমারা গ্রামে র‌্যাবের সঙ্গে ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধে’ কাওসার হোসেন (৪৫) নামে এক যুবক নিহত হন। র‌্যাবের দাবি, কাওসার ডাকাত দলের সর্দার ছিলেন।

অন্যদিকে, ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে মেঘনা নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরার সময় লক্ষ্মীপুর নৌ পুলিশের একটি দল জেলেদের ধাওয়া করে এবং একপর্যায়ে তাদের ওপর গুলি চালালে আমির রাঢ়ী (২৫) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। রোববার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন এবং হয়রানি
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১ জন পুলিশের ধাওয়ায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান। এছাড়াও পুলিশের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণ, নির্যাতন ও লুটপাট, ভাঙচুর এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

১৪ এপ্রিল দিবাগত রাত ১ টার দিকে লালমনিরহাটের হারাটি ইউনিয়নের হিরামানিক এলাকায় চলমান বৈশাখী মেলা থেকে জুয়া খেলার অভিযোগে পুলিশ দুই ব্যক্তিকে আটক করে। এদের মধ্যে রবিউল খান (২৫) পুলিশ ভ্যানে উঠতে রাজি না হলে পুলিশ ঘটনাস্থলেই তাকে বেদম মারপিট ও লাথি মারলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরিবারের দাবি, আটকের পরই পুলিশের নির্যাতনে রবিউল গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।

২০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে লক্ষ্মীপুর পুলিশ পরোয়ানাভুক্ত আব্দুল কুদ্দুছকে (৪৫) নিজ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেফতার করে। থানা হেফাজতে নেওয়ার পর তার বুকে ব্যাথা অনুভব হলে সদর হাসপাতালে নিলে রাত পৌনে ১১টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

২১ এপ্রিল রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানা পুলিশের হেফাজতে নাজির আহমেদ সাফু (৪০) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, নাজির আহমেদ সাফুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নাজির আহমেদ সাফুর মৃত্যু হয়।

এছাড়া ৩ এপ্রিল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরামা জেলেপাড়া এলাকায় পুলিশের ধাওয়ায় মো. মামুন (২৪) নামের এক যুবক শীতলক্ষ্যা নদীর বানার অংশে ঝাঁপ দেয়। নিখোঁজ মামুনের মরদেহ ৫ এপ্রিল সকালে উদ্ধার করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ
কথিত বন্দুকযুদ্ধ ছাড়াও এপ্রিল মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণের ঘটনাও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী এমাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় ৩ জন নাগরিককে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমএসএফ মনে করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণে নামে যে অপতৎপরতা চলছে তা অন্যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও ন্যায়বিচার না পাওয়ার ক্রমবর্মান অবক্ষয়ের চিত্র উঠে এসেছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ ধরণের ঘটনায় ভিকটিমদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।

পুলিশি হয়রানির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা হলো, গত ২ এপ্রিলের। এদিন সকাল সাড়ে ৮টার সময় ফার্মগেট মোড় পার হয়ে তেজগাঁও কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার। এসময় তাকে টিপ পরাকে অপরাধ হিসেবে নিয়ে পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তি ‘টিপ পরছোস কেন’ বলে বাজে গালি দেন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) মনে করে, পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়গুলো যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহও অপ্রতাশিত যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যেকোনো ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা পুলিশের আইনি দায়িত্ব।

কারা হেফাজতে মৃত্যু
এপ্রিল মাসে কারা হেফাজতে একজন নারীসহ ৫ জনের মৃত্যু হয় যা গত মাসের তুলনায় কমলেও উদ্বেগজনক। গত মাসে কারা হেফাজতে ১০ জন বন্দির মৃত্যু হয়। কারাগারে অপর্যাপ্ত চিকিৎসার কারণে বন্দিরা যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বন্দি অসুস্থ হলে তাকে কারাগারের বাইরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এমএসএফ মনে করে, কারাগারে অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে বন্দিরা যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বন্দি অসুস্থ হলে তাকে কারাগারের বাইরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কারাগারের অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার ও পরিস্থিতি উন্নয়নের পাশাপাশি, হেফাজতে মৃত্যুর সঠিকভাবে তদন্ত করা গুরুত্বপূর্ণ বলে করে সংগঠনটি।

সারাবাংলা/আরএফ/এমও

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমএসএফ টপ নিউজ নির্যাতন বন্দুকযুদ্ধ মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর