মে দিবস: জীবন যাপনের উপযোগী মজুরি নিশ্চিতের দাবি
১ মে ২০২২ ১৩:০৪ | আপডেট: ১ মে ২০২২ ১৪:৫৩
ঢাকা: লাল টুকরো কাপড়গুলোতে সাদা রঙ দিয়ে গোটা গোটা করে লেখাগুলো শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলছে। প্রশ্ন রাখছে, মালিকদের প্রফিট বাড়লে, শ্রমিকের মজুরি কেন বাড়ে না? কারখানায় শ্রমিক মারা গেলে কেন দায়ী অপরাধীর বিচার হয় না? এমন হাজারো প্রশ্ন আর দীর্ঘদিনের জিইয়ে থাকা অধিকার আদায়ের কথা জানাতে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যানার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শ্রমিকরা। যাদের হাতে সমৃদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের শিল্প।
রোববার (১ মে) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। গেল দুই বছর মহামারি করোনা কাটিয়ে এবার অনেকটা ঘটা করেই দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে শোভাযাত্রা করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয় শ্রমিক সংগঠনগুলো। পাশাপাশি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করছেন এমন সংগঠনগুলোর নেতা কর্মীরাও শোভাযাত্রা নিয়ে সমবেত হোন জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের ভিড় বাড়তে থাকে। তাদের কণ্ঠে অধিকার প্রতিষ্ঠার সুর। তারা বলেন, শ্রমিক – কর্মচারীদের রেশনিং, জীবন যাপনের উপযোগী মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) এবং ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানে বক্তারা বলেন, ১৩৬ বছর আগে শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতা নিয়ে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তা আজও থামেনি। শ্রমিকদের অধিকার আদায় হয়নি। তারা বলেন, এখনও কারখানায় শ্রমিকদের ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। ছোট ছোট কারখানাগুলো অতিরিক্ত সময় কাজ করায় কিন্তু পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক দেয় না।
শোভাযাত্রা বের করে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। সেখানে বক্তারা বলেন, অধিকার আদায়ে এখনও শ্রমিকদের মাঠে নামতে হয়। শ্রমিকেরা নিজেদের কথা বলতে পারেন না। শ্রমিকদের কণ্ঠ রোধ করা হয় নানা ভাবে। বর্তমান বাজার মূল্য বিবেচনা করে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার্স সমিতির কর্মসূচী থেকে জানানো হয়, কোনো হকারকে পুনর্বাসন না করে যেন উচ্ছেদ না করা হয়। বক্তারা বলেন, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো ফুটপাতে হকারদের বসার ব্যবস্থা করে, কিন্তু কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করেই তাদের উচ্ছেদ করা হয়, এটা হকারদের জন্য বিপদ। তাদেরকে উচ্ছেদ করলে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
জাতীয় শ্রমিক জোটের নেতাদের অভিযোগ, শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কাজ করা যায় না। কারণ মালিকদের দালালরা প্রতিবাদের কণ্ঠ চেপে ধরে। করোনার মধ্যেও মালিকরা কারখানা খোলা রেখেছে। তারা প্রণোদনার নামে হাজার কোটি টাকা সরকারের কাছ থেকে নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা হোক।
জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন নারী শ্রমিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কারখানায় শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
শ্রমিকদের এই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরাও। তারাও বললেন শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নের কথা। কর্মসূচি থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের রেশনিং, জীবনযাপনের উপযোগী মজুরি নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন রকম দাবি দাওয়া তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি বাংলাদেশ, বহুমুখী শ্রমজীবি হকার সমিতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, প্রগতিশীল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন নারী শ্রমিক কেন্দ্র, ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার, গ্রীন বাংলা ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক বাংলাদেশ, বহুমুখী শ্রমজীবি সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশসহ বহু সংগঠন শোভাযাত্রা বের করে ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ