‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তেঁতুলতলা মাঠে থানা নির্মাণ বন্ধ’
২৮ এপ্রিল ২০২২ ১৪:৪৯ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২২ ১৫:৫৬
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর কলাবাগান এলাকার তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবনের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, তেঁতুলতলা মাঠ যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। তাই সেখানে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা দেখছি ওই এলাকায় খেলার মাঠ বা খোলা জায়গাই নেই। সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও পরামর্শ দিয়েছেন, যেহেতু এলাকাটায় খোলা জায়গা নেই, বিনোদনের কিছু নেই, সেহেতু পুলিশের জমি পুলিশেরই থাক। মাঠটি যেভাবে আছে সেভাবেই থাকুক। এখানে যেন আর কোনো কনস্ট্রাকশন না হয়। মাঠটি যেভাবে ব্যবহার হচ্ছিল সেভাবেই চলতে থাকুক।’
এর আগে, বুধবার (২৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘তেঁতুলতলা মাঠটি থানার জন্যই নির্দিষ্ট জায়গা। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই জায়গা টাকা দিয়ে পুলিশের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই জায়গার বিকল্প এবং উপযুক্ত স্থান যদি কেউ দিতে পারে তাহলে সেখানে থানা নির্মাণ না করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘রাজধানী ঢাকায় নতুন যেসব থানা স্থাপন করা হয়েছে বা হচ্ছে তার বেশিরভাগই ভাড়া বাড়িতে। এ কারণে পুলিশের ফোর্সকে নানাধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। সেজন্য এগুলোকে স্থায়ী জায়গায় নেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কাছে জমি অধিগ্রহণের জন্য বলা হয়। কলাবাগানের ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে। এই জায়গা পরিত্যক্ত থাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এই জায়গা থানার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই জায়গার যা মূল্য তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জমা দেওয়ার পর ডিসি জায়গা বুঝিয়ে দেন।’
এর আগে, তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণ না করার জন্য সমাজকর্মী খুশী কবির, আইনজীবি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি ইকবাল হাবিব, সাংস্কৃতিক কর্মী সংগীতা ইমাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে খুশি কবীর বলেছিলেন, ‘আমরা চাচ্ছি মাঠটি রক্ষা করতে। আমরা চাই এবার ইদের জামাত হোক তেঁতুলতলা মাঠে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আলোচনা করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বিষয়টি জানাবেন।’
এর আগে, গত ৩১ জানুয়ারি কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা করার প্রতিবাদে এলাকার শিশুরা ওই মাঠে খেলা করলে খেলতে যাওয়া শিশুদের কান ধরে উঠবস করিয়েছেন কলাবাগান থানা পুলিশের সদস্যরা। এছাড়া ওই শিশুরা যাতে মাঠে আর খেলতে না যায় সেজন্য নির্যাতনের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে হুমকি দেওয়া হয়। এতে শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় অবশ্য চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পান্থপথে কনকর্ড টাওয়ারের সামনে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানার ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। ‘কলাবাগান এলাকাবাসী’ নামে ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে স্থানীয় শিশু-কিশোর ও এলাকাবাসী অংশ নিয়েছিল।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কলাবাগান এলাকার খোলা একটি জায়গা তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবে পরিচিত। শিশুদের খেলাধুলার পাশাপাশি সেখানে ইদের নামাজ, জানাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন হয়ে থাকে। স্থানীয় লোকজন বহুদিন ধরে জায়গাটি মাঠ হিসেবেই ব্যবহার করে আসছেন।
সর্বশেষ গত ২৪ এপ্রিল তেঁতুলতলা মাঠে ভবন নির্মাণ কাজের প্রতিবাদ করে ফেসবুকে লাইভ করার অপরাধে সাংস্কৃতিককর্মী সৈয়দা রত্না ও তার কিশোর ছেলেকে কলাবাগান থানায় বেআইনিভাবে প্রায ১২ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এর প্রতিবাদে বেশ কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চলছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা জেলা প্রশাসন ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট এক নোটিশে জানায়, মাঠের এই জমিকে পতিত হিসেবে উল্লেখ করে ডিএমপির কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন-
তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে পুলিশি হয়রানির নিন্দা অর্টিকেল নাইনটিনের
তেঁতুলতলা মাঠ দখলের প্রতিবাদে কলাবাগানবাসীর সমাবেশ
তেঁতুলতলা মাঠ উন্মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলন: মা-ছেলেকে ছেড়ে দিল পুলিশ
খেলার জন্য মাঠ চাই— তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় মানববন্ধন
‘তেঁতুলতলায় বরাদ্দ বিধি মেনে, শিশুদের জন্য কলাবাগান মাঠ আছে’
তেঁতুলতলা মাঠে থানা নির্মাণ না করার দাবি কেন্দ্রীয় খেলাঘরের
তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় মা-ছেলে আটক
তেঁতুলতলা পুলিশের জায়গা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ/পিটিএম