সহজেই টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না সহজে, চাপ বাড়ছে কাউন্টারে
২৬ এপ্রিল ২০২২ ১৮:০৭ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২২ ২১:২৯
ঢাকা: চতুর্থ দিনের মতো চলছে ইদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি। আগের তিন দিনের মতো মঙ্গলবারও ( ২৬ এপ্রিল) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ছিল টিকিট প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড়। কাউন্টার থেকে শুরু হয়ে লাইন চলে গেছে স্টেশনের বাইরে। চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রেলকর্মীদের। অনলাইনে সহজে টিকিট কাটতে না পেরে কাউন্টারে ছুটে এসেছেন টিকিট প্রত্যাশী অনেকে। যে কারণে কাউন্টারে চাপ কমছে না।
মঙ্গলবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যে ১৬ কাউন্টারে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে, সেখানে মানুষের দীর্ঘ সারি। মানুষের ভিড়ের কারণে ট্রেনে চলাচল করা সাধারণ যাত্রীদের চলাচল ব্যহত হচ্ছে। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দিনাজপুরগামী ট্রেনের টিকিট প্রত্যাশী নাজমুস সাকিব বলেন, ‘সকাল ঠিক আটটায় সহজের ওয়েবসাইটে টিকিটের জন্য ঢুকতে গিয়েও পারিনি। পনেরো মিনিট পড়ে যখন ঢুকি তখন দেখি টিকিট শেষ। এরপর চলে এলাম এখানে। সামনে এখনো ৭০/৭৫ জন। কাউন্টার পর্যন্ত যেতে টিকিট থাকবে কি না সেটাই সন্দেহ।
দেখা গেল, পাশের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মোবাইলে সহজে ঢোকার চেষ্টা করছেন। সোহাগ নামের ওই ব্যক্তি সারাবাংলাকে জানান, তিনি যাবেন রংপুর। সকাল থেকে সহজে টিকিট কাটার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর আগের দিনও করেছেন। একবার ওয়েবসাইটে ঢুকতে পেরেছেন অনেক চেষ্টার পর। কিন্তু ততক্ষণে টিকিট শেষ। এরপরে আরেকবার চেষ্টা করে দেখা গেল- টিকিট আছে কিন্তু এক স্টেপ থেকে আরেক স্টেপে যাওয়া কঠিন। সেজন্য কাউন্টারে চলে এসেছেন তিনি। আজ লাইনে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করছেন। যদি টিকিট পাওয়া যায়। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন অনেকেই।
যাত্রীসেবা আরও উন্নত করতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকম’র সঙ্গে ঘটা করে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ইন্টিগ্রেটেড টিকিটিং সিস্টেম-বিআরআইটিএস, ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট সাপ্লাই, ইনস্টল, কমিশন, অপারেট, রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠানটি সার্ভিস শুরুর দিন থেকে তাদের সেবা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। প্রথম দিন সেবা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সার্ভিস বন্ধ করে দিতে হয়। যদিও সহজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, তাদের সার্ভারে সাইবার আক্রমণ হয়েছে। যে কারণে হঠাৎই সার্ভিস বন্ধ করে দিতে হয়। সে সমস্যা এখন কেটে গেছে।
ইদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি নিয়ে সহজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একসঙ্গে লাখ লাখ যাত্রী সার্ভারে হিট করায় অনেক সময় প্রবেশে দেরি হয়। কিন্তু যে পরিমাণ টিকিট প্রতিদিন বিক্রির টার্গেট দেওয়া হয় তার সবই সুষ্ঠুভাবে বিক্রি হয়। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ইদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে প্রতি মিনিটে ৫ লাখ মানুষ হিট করেছে। যা সহজ ডটকম সহজেই পরিচালনা করতে পেরেছে। আরও বলা হয়, গত চারদিন দেশের ৭৭ স্টেশন কাউন্টারে সফলতার সঙ্গে সহজের টিকিটিং সিস্টেম সম্পন্ন হয়েছে। তাদের দাবি, আধুনিক প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারের ফলে যুগান্তকারী সফলতা এসেছে রেলওয়ের টিকিট পরিচালনায়।
চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি টিকিটের জন্য সহজ ডটকমকে ২৫ পয়সা করে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। আগের প্রতিষ্ঠান সিএনএসকে দিতে হতো প্রায় তিন টাকা। ২০০৭ সালে সিএনএসের সঙ্গে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতদিন মেয়াদ বাড়িয়ে বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটি সেবা দিয়ে আসছিল।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বিক্রি করা হচ্ছিল ৩০ এপ্রিল ভ্রমণের টিকিট। জানা গেছে, অনলাইনে টিকিট না পেয়ে কমলাপুর কাউন্টারে মানুষ ছুটে আসছেন, ফলে এখানে চাপ বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারোয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘টিকিটের সংখ্যার চেয়ে লাইনে দাঁড়ানোর মানুষের সংখ্যা অন্তত দশগুণ বেশি। আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা ২৭ হাজার। সেখানে ৫০ হাজার চেষ্টা করলে তো সমস্যা দেখা দেবেই।’
এর আগে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ইদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি পরিদর্শনে গিয়ে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, চাহিদার তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা কম। যে কারণে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি আরও বলেছিলেন, ইদ উপলক্ষে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু থাকবে। কিন্তু তারপরও টিকিটের জন্য মানুষের হাহাকার। আর স্টেশনগুলোর কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম