তেঁতুলতলা মাঠ দখলের প্রতিবাদে কলাবাগানবাসীর সমাবেশ
২৬ এপ্রিল ২০২২ ০০:১৬ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২২ ০০:২১
ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কলাবাগান এলাকায় তেঁতুলতলা মাঠ দখলের প্রতিবাদ করায় সৈয়দা রত্না ও তার নাবালক ছেলের আটকের একদিন পর সেই মাঠেই প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী। সঙ্গে ছিল বিভিন্ন মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিকেল তিনটায় মাঠে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা। আন্দোলন চলাকালীন তেঁতুলতলা মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ চলতে দেখা যায়। এসময় সেখানে অর্ধ শতাধিক ইউনিফর্মধারী পুলিশ সদস্য দেখা যায়। এছাড়াও অনেকেই সাদা পোশাকে সেখানে অবস্থান করছিলেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাদের দাবি অগ্রাহ্য করে জোর করে থানা বানানো হচ্ছে তেঁতুলতলা মাঠে। শিশুদের আন্দোলনের সঙ্গে পরে বড়রা যোগ হলে তাদেরও নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। গতকাল রোববার (২৪ এপ্রিল) সৈয়দা রত্না ও তার নাবালক ছেলেকে ১২ ঘণ্টার বেশি আটক করে রাখা হয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন আন্দোলনকারী অভিভাবক জানালেন তিনিসহ অন্যরা ব্যাপক চাপের মধ্যে রয়েছেন। আন্দোলন সংক্রান্ত ফেসবুক পোস্ট, ভিডিও ডিলিট করতে বাধ্য করা হয়েছে। এমনকি তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও যাওয়া হয়েছে খোঁজ করার জন্য। তারপরও আজ তিনি মাঠে এসেছেন কারণ এই মাঠ তাদের আবেগের সঙ্গে জড়িত। এই মাঠে খেলাধুলা করে তাদের পাড়ার শিশুরা বড় হয়েছে। এখানে শুধু খেলাধুলাই নয়, নানারকম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও এখানেই হয়। তারা চাঁদা তুলে এখানে লাশ গোসল করানোর জন্য আলাদা ঘর করেছেন। তার বাবাসহ এলাকার সবার গোসল-জানাজেও এখানেই হয়। স্মৃতিবিজড়িত এই মাঠে যেন থানা বা অন্য কোন স্থাপনা না হয় তাই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন তিনি।
মাঠের আশপাশের দেওয়ালে শিশুদের হাতের রঙিন ছাপ চোখে পড়ে। জানা গেল এভাবে নানারকম অনুষ্ঠান এখানে নিয়মিতই হয়। শিশুদের নিয়ে জাতীয় শিশু দিবসে কেক কাটাসহ অন্যান্য উৎসবও থাকে।
আশপাশের কয়েকটি স্কুলের ছাত্ররা জানায়, তারা এখানে নিয়মিত ক্রিকেটসহ নানারকম খেলাধুলা করে। কিন্তু কয়েক মাস হল পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তানভীর জানায়, তারা যদি নিষেধ না শোনে তাহলে তাদের বাবা-মাকে ধরে আনবে বলে ভয় দেখিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া গতকাল ‘রত্না আন্টি’ ও ‘প্রিয়াংশু ভাইয়াকে’ ধরে নিয়ে আটকে রাখায় তারা বেশ ভয় পেয়েছে। কিন্তু তবুও তারা চায় এই মাঠটি যেন দখল না হয়।
মাঠের পাশের বাসিন্দা ফারুক জানালেন, তারা এই মাঠে খেলাধুলা করে বড় হয়েছেন। তার আগে তার বাবারাও এখানেই খেলতেন। এখন খেলেন তার সন্তানরা। সেই মাঠটি যেন দখল না হয় তাই এসেছেন এখানে।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এলাকাবাসীর সঙ্গে এদিন আন্দোলনে যোগ দেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি ইকবাল হাবীবসহ বিভিন্ন পরিবেশ, মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
সমাবেশ থেকে পরিবেশ আইনজীবী রিজওয়ানা হাসান জানান, তারা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সারাবাংলা/আরএফ/এমও