ইছামতি নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা কাটল
২৪ এপ্রিল ২০২২ ১৮:১৯
ঢাকা: পাবনা শহরের ইছামতী নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ওপর জারি করা স্থিতাবস্থা তুলে নিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে ইছামতি নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
রোববার (২৪ এপ্রিল) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে এদিন রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ, আইনজীবী সঞ্জয় মন্ডল এবং আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া।
নদী কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এন.এম আহসানুল হক। আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনিক আর হক এবং আইনজীবী রওশন আলম খান।
আদালত রায়ে বলেন, ঢাকার চার পাশের চার নদীর মামলায় নদীর সীমানা সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে নদীর সীমানা ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সিএস রেকর্ড) অনুযায়ী ধরিতে হইবে এবং আপিল বিভাগও সেই রায় বহাল রেখেছেন। অন্যদিকে, আপিল বিভাগ তুরাগ নদীর মামলায় নদীর সীমানা সিএস রেকর্ড অনুযায়ী জরিপের নির্দেশ দেন। এমতাবস্থায় এই মামলায় রায় সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই।
শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে শুরু করে আজ অবধি হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগ বিভিন্ন সময়ে নদীর সীমানা সংশ্লিষ্ট জরিপ করার বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন। আদেশে নদীর সীমানা সিএস অনুসারে জরিপের রায় দেওয়া হয়। সুতরাং রায় সংশোধনের সুযোগ নাই।’
এর আগে, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ইছামতি নদীর দুই পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইফুল্লাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাউসার হাবিবসহ আরও অনেকে।
ওইদিন ডিসি রোডের আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সামনে থেকে রায় বাহাদুর গেটের পেছন পর্যন্ত এ অভিযান চলে। দিনব্যাপী অভিযানে বড় বড় দ্বিতল ও তিনতলা ভবনসহ কমপক্ষে অর্ধশত অবকাঠামো ভেঙে নদীর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়।
এর আগে, ইছামতি নদীর তীরে চারটি মৌজায় নদীর জমিতে থাকা স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদের জন্যে নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। নোটিশ প্রদানের পর ৪৩ ব্যক্তি ২০২০ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে। একইসঙ্গে নদী কমিশনকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশের পর নদী কমিশনের পক্ষে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান প্রশাসন ও সকলের উপস্থিতিতে সরজমিনে পরিদর্শন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে হাইকোর্ট বিভাগের ৩৫০৩/২০০৯, আপিল বিভাগের ৩০৩৯/২০১৯ এবং হাইকোর্ট বিভাগের ১৩৯৮৯/২০১৬ এর রায় এবং এসএটি অ্যাক্ট’র ধারা ৮৬(৪), ১৪৪,১৪৯ (৪) অনুযায়ী আবেদনকারীদের উক্ত দখলের জায়গা সিএস রেকর্ড অনুসারে ইছামতী নদীর জায়গা হিসাবে মতামত দেন। নদী কমিশনের উক্ত প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করে দখলকারীরা একটি রিট দায়ের করে এবং আদালত থেকে কোন আদেশ না পাওয়ায় ঢাকার চার নদীর মামলার (মামলা-৩৫০৩/২০০৯) রেফারেন্স দিয়ে একটি আবেদন দাখিল করে।
এরপর ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা হাইকোর্ট বেঞ্চ উক্ত আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দেন। এরপর, দীর্ঘ শুনানির পর আজ রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিনে বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ উক্ত আবেদন খারিজ করে দেন এবং একইসঙ্গে স্থিতাবস্থা বজায় থাকার আদেশ প্রত্যাহার করে নেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম