Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছাত্রীকে যৌন-নিপীড়ন: ‘বড় শাস্তি’ থেকে পার পাচ্ছেন বিশ্বজিৎ ঘোষ

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
২৪ এপ্রিল ২০২২ ১৭:০৫ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২২ ১৭:২৯

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের ‘প্রাথমিক সত্যতা’ মিললেও বড় ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন না তিনি। তার বিরুদ্ধে আনীত ছাত্রীকে যৌন-নিপীড়ন সংক্রান্ত অভিযোগপত্রটি ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ কাছে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি। তবে একাডেমিক সবধরনের কার্যক্রম থেকে তাকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকছে। এছাড়া বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে দোষ স্বীকার করে নেওয়ার পরও গণমাধ্যমে ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের মন্তব্যগুলো নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন বাংলা বিভাগের শিক্ষকরা।

বিজ্ঞাপন

গত ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয় বিভাগটির একাডেমিক কমিটি। সভার কার্যবিবরণীর একটি কপি সারাবাংলার হাতে এসেছে। ওইদিন দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেন বিভাগের ১৭ জন শিক্ষক।

এর আগে, দ্বিতীয় বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন-নিপীড়নের অভিযোগের দায়ে গত ২৯ মার্চ একাডেমিক কমিটির এক সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষককের বিরুদ্ধে বিভাগের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যহতি প্রদান, বরাদ্দকৃত বিভাগীয় কক্ষ বাতিলসহ কয়েকটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা বিভাগ। গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল— ‘আরও বৃহত্তর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে কি না সেটি অভিযোগকারীর সম্মতি সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।’

তবে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী বিভাগ কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থায় ‘সন্তুষ্ট ও ভয়মুক্ত’ উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগপত্রটি প্রেরণের অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একাডমিক কমিটির সভায় উপস্থিত ১৭ জন শিক্ষক অভিযোগপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে, বিভাগ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যেই অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ সংশ্লিষ্ট সেমিস্টারের মিডটার্মের উত্তরপত্র ও বিভাগীয় কক্ষের চাবি যথাসময়ে বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছেন বলে বাংলা বিভাগের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

গত ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একাডমিক কমিটির সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে ঘটনার বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি ‘তাকে রক্ষা’ করার জন্য তিনটি প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবগুলো হলো— ১. অভিযোগকারীর পত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে না পাঠানোর অনুরোধ, ২. শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার প্রস্তাব এবং ৩. স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত।

বিজ্ঞাপন

পরদিন ১৭ এপ্রিল অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বিভাগ বরাবর তিনটি আলাদা চিঠি লিখিত আকারে পাঠান। একটি চিঠি চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, দ্বিতীয় চিঠি সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তৃতীয় চিঠি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর স্বেচ্ছা অবসরের আবেদন করে লেখা।

আরও পড়ুন:

সূত্র জানায়, ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের পাঠানো তিনটি চিঠিই অনুষ্ঠিত একাডেমিক কমিটির সভায় পাঠ করে শোনান বিভাগটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ কর্তৃক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগপত্র না পাঠানোর অনুরোধ প্রসঙ্গে আলোচনা হয় সভায়।

এ ব্যাপারে সভায় বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, ‘সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর অভিযোগ ও বিচার প্রার্থনার চিঠিটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে কি না ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক হোসনে আরা ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের উপস্থিতিতে সে-ব্যাপারে তার মত নেওয়া হলে শিক্ষার্থী জানায়, বিভাগ যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে সে সন্তুষ্ট ও ভয়মুক্ত। অতএব এর পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সে অভিযোগপত্রটি পাঠাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।’

পরে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর এই মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক কমিটির সভায় উপস্থিত থাকা শিক্ষকরা সর্বসম্মতভাবে অভিযোগপত্রটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।

এছাড়া, চেয়ারম্যানের মাধ্যমে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষের স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণের চিঠি প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার একাডেমিক কমিটির নয় বলে মন্তব্য করেন সভায় উপস্থিত শিক্ষকরা।

এদিকে, গত মাসের ২৯ তারিখ একাডেমিক কমিটির সভায় ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত’ বলে মনে করছেন সভায় উপস্থিত বিভাগের শিক্ষকরা।

মার্চের ২৯ তারিখ অনুষ্ঠিত সভায় অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করে নিলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি এসব কিছু অস্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসমূহ প্রসঙ্গে ‘নাটকীয়তা’, ‘ষড়যন্ত্রমূলক’, ‘তার খ্যাতিতে ঈর্ষান্বিত হওয়া’ বা ‘সংখ্যালঘু হওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ’ প্রভৃতি প্রসঙ্গ তুলে আনেন। একাডেমিক কমিটির সভায় ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের এমন কর্মকাণ্ডকে নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য বলেন উপস্থিত শিক্ষকরা।

সারাবাংলার হাতে আসা একাডেমিক কমিটির সভার বিবরণীতে এই প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘তবে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ পত্রিকায় নিজেকে নির্দোষ বলা ছাড়াও যেসব উক্তি করেন তাও ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। বিগত একাডেমিক কমিটির সভায় এবং আমাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তিনি দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও পত্রিকায় তিনি ভিন্ন কথা বলেন। …একাডেমিক কমিটির সদস্যগণ সর্বসম্মতভাবে মনে করেন যে, পত্রিকায় অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ যেসব মন্তব্য করেছেন (যেমন- ‘নাটকীয়তা’, ‘ষড়যন্ত্রমূলক’, ‘তার খ্যাতিতে ঈর্ষান্বিত হওয়া’ বা ‘সংখ্যালঘু হওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ’ প্রভৃতি) তা আপত্তিকর, অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়।’

বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, ‘তারা( উপস্থিত শিক্ষকগণ) অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ পত্রিকায় যেসব মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারণ, বিভাগের শিক্ষকদের কাছে প্রদত্ত তার বক্তব্য ও পত্রিকায় প্রদত্ত বক্তব্য ছিল পরস্পরবিরোধী ও সাংঘর্ষিক।’

সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম

অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ শাস্তি

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর