Wednesday 22 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খাদ্য সংকট থেকে মানবিক বিপর্যয় দেখছে বিশ্ব ব্যাংক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২১ এপ্রিল ২০২২ ১৫:৩৬ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২২ ১৯:২০

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জেরে বেড়ে চলা খাদ্য সংকট বিশ্বকে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস।

বুধবার (২০ এপ্রিল) এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিবিসিকে বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ চলতে থাকলে খাদ্য পণ্যের দাম রেকর্ড বৃদ্ধি লাখ লাখ মানুষকে অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

তিনি বলেন, এই যুদ্ধ একইসঙ্গে মানবিক বিপর্যয় এবং রাজনৈতিক সংকট। যারা এই সংকট মোকাবিলায় কিছুই করতে পারছে না এবং এর জন্য তারা দায়ীও নয়, তারা খাদ্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি দেখছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে চলমান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্ব ব্যাংকের বৈঠকের কর্মসূচির মধ্যেই বিবিসিকে এই সাক্ষাৎকার দেন ডেভিড ম্যালপাস।

এদিকে, বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে খাদ্য পণ্যের দামে বড় ধরনের (৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি) উল্লম্ফন হতে পারে যা গরীব জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক বেশি বলে মনে করেন ম্যালপাস।

তিনি বলেন, তারা নিজেরা কম খেতে এবং সন্তানকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করতে বাধ্য হবে খরচ কমানোর জন্য। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, এটা সত্যিকারের একটা অন্যায্য সংকট। এটা দারিদ্র্যপীড়িতদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে। কোভিড মহামারিতেও এই বাস্তবতাই দেখা গেছে।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বিবিসিকে বলেন, পণ্যের দাম বৃদ্ধির পরিসর বিস্তৃত এবং গভীর। ভোজ্য তেল, দানাদার শস্য, অন্যান্য খাদ্যশস্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। ভুট্টার মত খাদ্য পণ্যের দামেও প্রভাব পড়ছে, কারণ গমের দাম বাড়লে এসব পণ্যের দামও বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, পৃথিবীর সবাইকে প্রতিদিন খাওয়ানোর মত পর্যাপ্ত খাবার এখন আমাদের রয়েছে, বৈশ্বিক খাদ্য মজুতও এখন ঐতিহাসিক মানের বিচারে বড়। কিন্তু এই খাদ্য পণ্য বাটোয়ারা বা বিক্রির একটি প্রক্রিয়া থাকতে হবে, যাতে যেখানে খাদ্যের দরকার, সেখানে তা পৌঁছানো সম্ভব হয়।

বিজ্ঞাপন

খাদ্য উৎপাদনে ভর্তুকি দেওয়া বা দাম বেঁধে দেওয়ার পদক্ষেপকে নিরুৎসাহিত করে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, তার পরামর্শ, বিশ্বজুড়ে সার ও খাদ্য সামগ্রীর সরবরাহ বাড়াতে মনোযোগ দিতে হবে। আর হতদরিদ্র মানুষের জন্য বিশেষ সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

এক সংকটের মধ্যে আরেকটি সংকটের জন্ম হওয়ার যে ঝুঁকি সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন ডেভিড ম্যালপাস।

মহামারির সময়ে উন্নয়নশীল অনেক দেশের ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে, অনেক কিস্তি জমে গেছে। এখন খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বিদেশি মুদ্রার সংকটে পড়ে কিস্তি পরিশোধে সমস্যায় পড়ছে অনেক দেশ। এ রকম সংকটে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ভেঙে পড়ার দশা হয়েছে।

তিনি বলেন, আশঙ্কা খুবই বাস্তব। কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটতে শুরু করেছে। এটা কতদূর গড়াতে পারে, কেউ জানে না। দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর ৬০ শতাংশই হয় ঋণের নিচে চাপা পড়ছে অথবা ঝুঁকিতে রয়েছে।

এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে মার্চে বিশ্বে খাদ্যের দামের বৃদ্ধিতে রেকর্ড হয়েছে। সূর্যমুখী তেলের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাই, বিকল্প উৎসগুলোর খরচ বেড়ে গেছে।
গম ও ভুট্টার মতো পণ্যেরও অন্যতম উৎপাদনকারী দেশ ইউক্রেন। এ যুদ্ধের কারণে ওই দুই পণ্যের দামও বেড়েছে।

আবার, কৃষ্ণসাগর অঞ্চল যুদ্ধের আওতায় থাকায় ভেজিটেবল অয়েল ও খাদ্যশস্যের বিশ্ব বাজারে বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। জাতিসংঘের খাদ্য মূল্য সূচক বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা করা ভোগ্য পণ্যের দরের ওঠানামা পর্যবেক্ষণ করে। এসব পণ্যের মধ্যে আছে – শস্য, ভেজিটেবল অয়েল, দুগ্ধজাত পণ্য, মাংস ও চিনি।

বিজ্ঞাপন

৬০ বছর আগে শুরু হওয়া এই সূচকের হিসাব বলছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে খাদ্য পণ্যের দাম প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি হিসেবে ধরা হচ্ছে।

সারাবাংলা/একেএম

ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্য সংকট টপ নিউজ ডেভিড ম্যালপাস বিশ্ব ব্যাংক মানবিক বিপর্যয় রুশ আগ্রাসন

বিজ্ঞাপন

‘মানুষ অবদান মনে রাখে না’
২২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৬

আরো

সম্পর্কিত খবর