আধিপত্যের দ্বন্দ্বে খুন, ৭ জনের যাবজ্জীবন
২০ এপ্রিল ২০২২ ১৪:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: এলাকায় দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে এক যুবককে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। একই রায়ে আদালত তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
বুধবার (২০ এপ্রিল) চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ কে এম মোজাম্মেল হক এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিতরা হলেন- মো. আজম, আলী আজগর হৃদয়, ওমর উদ্দিন, মো. ফারুক প্রকাশ আশিক, শওকত হোসেন, আশরাফুল আলম সুমন ও মো. পারভেজ। এদের মধ্যে আশরাফুল ও পারভেজ পলাতক আছেন।
২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের শাহ মীরপুর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জমাদরপাড়া এলাকায় মামুনুর রশিদ মামুন (২৬) নামে এক যুবককে কুপিয়ে খুন করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন আবদুল আজিজ (২৩) নামে আরেক যুবক। নিহত মামুন ওই এলাকার আবু তাহেরের ছেলে।
ঘটনার এক দিন পর নিহত মামুনের বড় ভাই মোহাম্মদ ইয়াসিন বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় মামুনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়। তবে সেসময় এলাকার লোকজনের বরাতে গণমাধ্যমে তথ্য এসেছিল, মামুন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। মাদকের বিরোধিতা এবং আধিপত্য বিস্তারের জেরে নিজ সংগঠনের প্রতিপক্ষের হাতে তিনি খুন হন।
রায় ঘোষণার পর মামুনের বন্ধু আবদুল আজিজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের গ্রামের পাশেই পাহাড়। আসামিরা পাহাড়ে বসে ইয়াবা, মদ, গাঁজা খেত। এরপর গ্রামের মধ্যে এসে মাতলামি করতো। স্কুলছাত্রীদের ইভ টিজিং করত। মামুন এবং আমি এর প্রতিবাদ করেছিলাম। সেজন্য তারা আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা ছাত্রলীগের সমর্থক ছিলাম। তবে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতাম না। আমরা কোনোদিন মিটিং-মিছিলে যাইনি। এটা রাজনৈতিক কোনো বিষয় না। মাদকের প্রতিবাদ করায় হামলা হয়েছিল।’
তবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি আইয়ূব খান সারাবাংলাকে বলেছেন, ‘মামুনের সঙ্গে আসামিদের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল, এলাকায় আধিপত্যের দ্বন্দ্ব ছিল। মাদকের বিরোধিতা করায় মামুনকে আসামিরা টার্গেট করেছিলেন। মামলার এজাহার, পুলিশের তদন্ত এবং সাক্ষ্যে এসব তথ্য উঠে এসেছে।’
তিনি জানান, খুনের ঘটনায় গ্রেফতারের পর আসামি আজম, আলী আজগর ও ওমর উদ্দিন খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
নিহত মামুনের ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় ২০১৯ সালের ১১ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসান ইমাম। এতে সাতজনকে আসামি করা হয়। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মোট ২৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষে আদালত এ রায় দিয়েছেন।
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামিদের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। সুনির্দিষ্ট কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই এ রায় দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
রায়ে খুশি হননি নিহত মামুনের মা হোসনে আরাও। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি এই রায়ে খুশি নই। আমার ছেলে কোনো খারাপ কাজে ছিল না। সে এলাকার মানুষের ভালো করতে গিয়েছিল, তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আসামিরা সবাই চোর-ডাকাত, খারাপ মানুষ, ইয়াবা খায়। আমি তাদের ফাঁসি চাই।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম