Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিরায়ত উৎসবের শান্ত-স্নিগ্ধ উদযাপন

আসাদ জামান
১৪ এপ্রিল ২০২২ ১৩:৩০ | আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২২ ১৯:৫৪

ঢাকা: পয়লা বৈশাখ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। সকাল ঠিক সাড়ে ১০টা। আজিমপুর মোড় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ভাস্কর্য পর্যন্ত আসার পর পায়ে হাঁটার রাস্তা (ফুটপাত) থেকে সড়কে নামতে হলো। তবে ইচ্ছে করে নয়; দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্যের ‘চমৎকার’ অনুরোধে- ‘ওদিক দিয়ে যান।’

অর্থাৎ ফুলার রোডের মাথায় যে অস্থায়ী প্রতিবন্ধক (ব্যারিকেড) তৈরি করা হয়েছে, সেই প্রতিবন্ধকে কর্তব্যরত পুলিশ তল্লাশিতে সন্তোষজনক উত্তর দিয়েই ঢুকতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। অন্যথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝ দিয়ে যে সড়কটা পূর্ব-পশ্চিম দিয়ে চলে গেছে, সেখান থেকেই বেছে নিতে হবে পছন্দের একটি দিক। চলে যেতে হবে নিজ গন্তব্যে।

বিজ্ঞাপন

ওই প্রতিবন্ধক পার হতে খুব বেশি বেগ পেতে হলো না। কারণ ওই মুহূর্তে ফুলার রোড দিয়ে ঢাকা ক্যাম্পাসমুখী লোকের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। মূলত, যানবাহন এবং ‘ঝাঁকঝাঁক লোকের’ গমানাগম নিয়ন্ত্রণ করতেই বসানো হয়েছে এই অস্থায়ী প্রতিবন্ধক।

ফুলার রোড দিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় শান্ত-স্নিগ্ধ একটা পরিবেশ যেন মোহাচ্ছন্ন করে ফেলল। নেই রিক্শা, যান্ত্রিক কোনো যানবাহন, গাড়ির হর্ন, রিকশার টুংটাং অথবা পিলে চমকানো গতিতে ব্যক্তিগত গাড়ির শপাং করে চলে যাওয়া।

সুনশান নীরবতা ভাঙতে ভাঙতে ঢাবি উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবন পর্যন্ত আশার পর প্রথম মনে হলো আজ পয়লা বৈশাখ। লাল-সাদার মিশেলে চিরায়ত বাঙালি ললনার শাশ্বত শাড়ি, লাল-সাদা-হলুদ রঙের পাঞ্জিবতে বাঙালি পুরুষ জানান দিচ্ছে ‘আজ পয়লা বৈশাখ’।

ভিসির বাস ভবন থেকে টিএসসি পর্যন্ত ছোট ছোট জটলা। তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীর সরল সমীকরণের ঊর্ধ্বে উঠে শিশু-কিশোর, আবাল বৃদ্ধ বনিতা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-স্বজন নিয়ে হাজির ঢাবি ক্যাম্পাসে। কলাভবন, হাকিম চত্বর, টিএসসি ও চারুকলা জুড়ে লাল-সাদা-হলুদের দারুণ সমাবেশ। দল বেঁধে আড্ডা, গল্প-গুজব, ছবি তোলা ও হাঁটা-হাঁটিতে উদযাপিত হচ্ছে বাঙালির চিরায়ত উৎসব পয়লা বৈশাখ।

বিজ্ঞাপন

তবে করোনাকাল কাটিয়ে দুই বছর পর ঢাবি ক্যাম্পাস, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি এলাকায় যে বৈশাখী আয়োজন তাতে দেখা মেলেনি ঢাক-ঢোল, কাঁসি-বাঁশি, ভুভুজেলা। এমনকি তালপাতার বাঁশি, হাতপাখা, কাঁচের চুড়ির পসরাও বসেনি সেখানে।

টিএসসি হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢোকার যে গেট, সেটি বন্ধ করে বসে আছে অগণিত পুলিশ। বস্তুত ঢাবি ক্যাম্পাস এবং শাহবাগ এলাকার পুরোটা জুড়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি। বেশ কয়েকজন বিদেশিরও দেখা মিলল ক্যামেরা হাতে।

বিকল্প পথ হিসেবে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা প্রচাীরের অরক্ষিত ‘ফাঁক’ দিয়ে অনেকেই ঢুকছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তারপরও বিশাল এ উদ্যানের প্রায় পুরোটাই ফাঁকা। স্বল্প সংখ্যক তরুণ-তরুণী বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বেছে নিয়েছে উদ্যানের নিরিবিলি পরিবেশ। ছবি তোলা, গল্প করা, প্রেম বিনিময়ে কেটে যাচ্ছে বেলা।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট গেট দিয়ে বের হবার পর চোখে পড়ল রমনা পার্কের বৈশাখী আয়োজন। মূলত এই জায়গাতেই প্রথিত থাকে বাংলা বর্ষবরণের প্রাণ। রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজন শেষ হওয়ার পর যথারীতি খুলো দেওয়া হয় রমনার সব গেট। উৎসবে যোগ দিতে আসা নর-নারী স্রোতের মতো ঢোকে রমনা পার্কে। অবশ্য সেই স্রোত এবার আর তেমনটি চোখে পড়ল না।

তবে মৎসভবন মোড়ের প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে শিল্পকলা একাডেমির সামনের সড়কে আসতেই পাওয়া গেল বাংলা নববর্ষ বরণের সেই আদি স্বাদ। এখানে মিলে আছে ছোট-খাটো মেলা। কাগজের কলস, কাগজের ফুল, বাঁশের বাঁশি, ভুভুজেলা, নানা আকৃতির বেলুন, ছোটদের ঢোল-বাদ্যযন্ত্র সর্বপরি লাল-সাদা-হলুদ রঙের পোশাক পরা লোকজনের ভিড়। ‍কিন্তু এতো কিছুর পরও অতীতের তুলনায় এবারের আয়োজন অনেকটাই শান্ত, সমাহিত, স্নিগ্ধ ও শাশ্বত।

সারাবাংলা/এজেড/এসএসএ

টপ নিউজ পহেলা বৈশাখ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর