১৫% নমুনা পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতি: টিআইবি
১২ এপ্রিল ২০২২ ১৯:০৪ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৫৩
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও প্রয়োজনের চেয়ে ল্যাব স্বল্পতা, সক্ষমতার চেয়ে বেশি সেবাগ্রহীতা, দূর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে নমুনা পরীক্ষায় নানান সমস্যার অভিযোগ তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবি বলছে, কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে ২৬.১ শতাংশ মানুষ বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ শতাংশ অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি এসব দাবি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নমুনা জমা দেওয়ার সময় ল্যাবগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি না মানা, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা, কর্মীদের দুর্ব্যবহার, বাসা থেকে নমুনা দেওয়া নিয়ে জটিলতা, নমুনা দিতে একাধিকবার কেন্দ্রে যাওয়া, ভুল ফলাফল দেওয়ার কারণে পুনরায় পরীক্ষা করতে বাধ্য হওয়া ইত্যাদি অভিযোগের জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট পেতে গড়ে আড়াই দিন থেকে সর্বোচ্চ নয় দিন পর্যন্ত এবং ল্যাবে নমুনা দিতে গিয়ে গড়ে তিন ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরামের গবেষণাটি উপস্থাপন করেন একই বিভাগের রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন ও রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কাওসার আহমেদ।
টিআইবির গবেষণা বলছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হলো- ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় সিরাম ইন্সটিটিউটের একক উৎস থেকে ভ্যাকসিন রফতানি বন্ধ হওয়ার পর সরকারের প্রচেষ্টায় দ্বি পাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে চীন থেকে ভ্যাকসিন কেনা। কোভ্যাক্স উদ্যোগ থেকে কস্ট শেয়ারিং বা বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সংগ্রহ এবং বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত অনুদান দিয়ে জুলাই ২০২১ থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করা। এ সময় সরকারের তৎপরতায় ৩১ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত প্রায় ২৯.৬৪ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত ভ্যাকসিন থেকে ৩১ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত প্রায় ১২.৭৭ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ (মোট জনসংখ্যার ৭৪.৯৬ শতাংশ) এবং ১১.২৪ কোটি মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ (৬৬.০ শতাংশ) ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রায় ৯৫ লাখ মানুষকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়।
সরকারি ল্যাবে যারা নমুনা দিয়েছেন তাদের ১৪.৯ শতাংশকে নির্ধারিত ফির চেয়ে ১১৬ টাকা, যারা বাড়ি থেকে নমুনা দিয়েছে তাদের গড়ে ৬৪২ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে গড়ে চার হাজার ৪২৫ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়েছে। অনেক সময়ই বেসরকারি পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি অন্য পরীক্ষা করাতে বাধ্য করা হয়েছে। যথাসময়ে বা দ্রুত প্রতিবেদন পেতে ৪.৪ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে গড়ে ১৩৩ টাকা এবং পরীক্ষাগারে ভিড় এড়িয়ে দ্রুত নমুনা দিতে বা আগে সিরিয়াল পেতে ৬.১ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে গড়ে ৬৬ টাকা নিয়ম-বহির্ভূত দিতে হয়েছে।
এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় নেগেটিভ সার্টিফিকেট পেতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে প্রত্যাগতদের গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিতে হয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, কোভিড-১৯ সংক্রমণের দুই বছরে পরীক্ষাগার ও আইসিইউ শয্যার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলেও তা অল্প কিছু জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখনও ৩৪টি জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষার সুবিধা নেই। ২০২০ সালের জুন মাসে সরকার থেকে সকল জেলা হাসপাতালে ১০টি করে আইসিইউ শয্যা স্থাপনের ঘোষণা করা হলেও এখনো ৩১টি জেলা হাসপাতালে এখনো আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়নি।
গবেষণায় প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়নেও সুশাসনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রণোদনা ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ২৩ শতাংশ উদ্যোক্তা অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়েছে। দু-একটি ক্ষেত্রে ব্যাংকার কর্তৃক ১০ শতাংশ কমিশন দাবির অভিযোগ উঠে এসেছে। সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ১০টি প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে; যার মধ্যে, বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাত ঋণ সুবিধা প্যাকেজে ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত দুই ধাপে প্রদত্ত প্রণোদনার ৫৭.৮ শতাংশ এবং কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ঋণ সুবিধা প্যাকেজে ৫২.০ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে। আবার এই প্রণোদনা ঋণের আবেদন করতে গিয়েও ৬৭.৫ শতাংশ উদ্যোক্তা নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে ও আদিবাসী এলাকাগুলোতে ঋণ দেওয়া নিয়ে বৈষম্যের তথ্য পাওয়া গেছে।
সারাবাংলা/জিএস/একেএম