Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

টাকার অভাবে ‘ঢিমেতাল’ প্রস্তুতি চট্টগ্রামের মঙ্গল শোভাযাত্রার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ এপ্রিল ২০২২ ২১:১১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কোভিড মহামারি কাটিয়ে দুই বছর পর বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে চট্টগ্রামে। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে প্রস্ততিতে ঢিমেতাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সে কারণে আয়োজকদের উৎসাহেও পড়েছে ভাটা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য অন্যান্য বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে অর্থ পাওয়া যেত। কিন্তু আয়োজনের মাত্র চারদিন বাকি থাকলেও এবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়নি। আদৌ অর্থ দেওয়া হবে কি না সেটিও জানায়নি। সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য উৎস থেকেও কোনো অর্থ সাহায্য পাওয়া যায়নি। এমন অবস্থায় নিয়ম মেনে ‘নামকাওয়াস্তে’ মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বর্ষবরণের আয়োজনের কথা জানিয়েছেন আয়োজকরা।

বিজ্ঞাপন

হাটহাজারী উপজেলার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস হলেও চারুকলা ইনস্টিটিউটের অবস্থান নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে। পাহাড়ের গা ঘেঁষে সবজু গাছগাছালি ঘেরা এই ক্যাম্পাসে প্রতিবছর বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। তবে মূল আকর্ষণ থাকে চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের করা মঙ্গল শোভাযাত্রায়।

দেশজুড়ে কোভিড সংক্রমণের কারণে গত দুইবছর চারুকলা ইনস্টিটিউটের এ আয়োজন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এবার কোভিড সংক্রমণ প্রায় বিদায় নেওয়ায় ব্যাপক উৎসাহের মধ্য দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সাধারণত চারুকলার স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এই কর্মযজ্ঞে শামিল হন প্রতিবছর।

বিজ্ঞাপন

এবার পহেলা এপ্রিল থেকে চারুকলার ক্যাম্পাসে শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। বাঁশ-কাঠ দিয়ে বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি, রঙের আলপনায় বর্ণিল মুখোশ-ফেস্টুনসহ শোভাযাত্রার নানা অনুষঙ্গ তৈরির কথা রয়েছে আয়োজকদের। গত ১০দিন ধরে তারা কাজও করে যাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো উৎস থেকে অর্থ বরাদ্দ না পেয়ে তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে প্রস্তুতির উৎসাহেও।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাঁশ-কাঠের অন্তত ৭/৮টি ডামি তৈরির প্রস্তুতি তারা নিয়েছিলেন, যেগুলো শোভাযাত্রার সময় নিয়ে প্রদক্ষিণ করার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র একটি ঘোড়া ও একটি মোরগের দু’টি ডামি ছাড়া বাকিগুলোর কাজই শুরু করতে পারেননি তারা। ঘোড়া ও মোরগের ডামির কাজও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। যে পরিমাণ মুখোশ-ফেস্টুন বা অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরির কথা ছিল, তার এক-তৃতীয়াংশও তৈরি হয়নি।

জানতে চাইলে চারুকলার স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জহির মাহমুদ অভি সারাবাংলাকে বলেন, ‘একেকটি ডামি বানাতে রঙ, তুলি, বাঁশ, কাঠসহ আরও নানা আসবাবপত্র কিনতে হয়। আমাদের হাতে টাকা নেই। স্যারদের কাছে টাকা চেয়েছিলাম। উনারা কিছু বলছেন না। দু’টি ডামির কাজ হয়ত আমরা শেষ করতে পারব। বাকিগুলো এবার সম্ভব হবে না।’

শিহাব শাহরিয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গল শোভযাত্রার জন্য আমরা যেসব মুখোশ, ফেস্টুন এবং গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী সরঞ্জাম বানাই, এবার অর্ধেকও বানাতে পারিনি। এগুলো তৈরি করতে যে টাকার প্রয়োজন সেটা আমাদের দেওয়া হয়নি। আমরা জানতাম, প্রতিবছরের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু পহেলা বৈশাখের মাত্র চারদিন বাকি থাকলেও আমাদের কোনো টাকা দেওয়া হয়নি।’

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষবরণ উপলক্ষে এবার চারুকলা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা, দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ক্যাম্পাসে লোকজ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ সকাল ১০টায় ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাস থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে কাজির দেউড়িতে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

কোভিড সংক্রমণের দুই বছর আগের বছরের মতো এবারও মোট পাঁচ লাখ টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছিল। অন্যান্য বছর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পাওয়া যেত। বাকি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে দেওয়া হতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চারুকলার এক শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কাছে টাকার জন্য গিয়েছিলাম। ‍উনি আমাদের কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে দেখাই দেননি। আমরা বুঝতে পারলাম, জেলা প্রশাসন থেকে এবার কোনো টাকা পাওয়া যাবে না। তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চেয়ে একটা আবেদন করেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকেও কোনো টাকা আদৌ দেওয়া হবে কি না, সেটি আমাদের জানানো হচ্ছে না। আমরা তো প্রতিবছরের মতো এবারও টাকা পাব ভেবেই প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। কিন্তু এখন টাকা না পেয়ে কাজই বন্ধ হওয়ার উপক্রম। হয়তো আমাদের সাংস্কৃতিক আয়োজন বাদ দিতে হবে। নামকাওয়াস্তে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা করে আয়োজন শেষ করতে হবে।’

জানতে চাইলে চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রা করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে বরাদ্দের জন্য একটা আবেদন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটা দেখবে বলে আমাদের জানিয়েছে। আশা করি টাকা পাব। পহেলা বৈশাখের যে কয়েকদিন বাকি আছে, তার মধ্যে টাকা পেয়ে যাব।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের বর্ষবরণের আয়োজন আছে। চারুকলা ইনস্টিটিউটে আলাদা আয়োজন আছে। মূল ক্যাম্পাসের আয়োজনের প্রস্তুতির জন্য চারুকলার কয়েকজন শিক্ষককে ডাকা হয়েছিল। তখন উনারা বললেন যে, উনাদের টাকা লাগবে। এর আগ পর্যন্ত উনারা কখনও বলেননি যে টাকা লাগবে। উনারা পাঁচ লাখ টাকা চেয়ে দরখাস্ত করেছেন। এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে উনাদের জানানো হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা প্রস্তুতি মঙ্গল শোভাযাত্রা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর