Saturday 28 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সব ধরনের ক্রেতার জন্য দেশি পণ্য নিয়ে গো-দেশি

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট
৮ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৪৪ | আপডেট: ৮ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৪৭

ঢাকা: ভাষা, উৎসব, পোশাক, কারুকার্য থেকে শুরু করে দৈনিক জীবনাচারণে বাংলা অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক সংস্কৃতি। কিন্তু নানা জাতির আগ্রাসন আর শাসনে বারবার হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর জীবনাচরণ। দেশীয় জীবনযাপন আর পোশাক সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে অনেক প্রতিষ্ঠানই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও একটি নাম- ‘গো-দেশি’।

অনলাইন মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে মাত্র এক বছরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বনানীতে নিজস্ব আউটলেট উদ্বোধন করেছে তারা। জামা-কাপড়, জুতা-ব্যাগ-গয়না থেকে শুরু করে এখানে রয়েছে ঘর সাজানোর ও নিত্য প্রয়োজনীয় নানা দেশি পণ্যের সমাহার।

বিজ্ঞাপন

গো-দেশি’র উদ্যোক্তা ডিজাইনার সাবেরা আনোয়ার। সারাবাংলাকে তিনি জানান, এর আগে ২০১৬ সাল থেকে পানাশ হাব নামে তার আরেকটি উদ্যোগ ছিল। বনানীতেই শো-রুম ছিল পানাশ হাবের। সেই হাবে যুক্ত ছিলেন ৩৩ জন তরুণ ডিজাইনার। পরে ২০২০ সালে গো-দেশি’র চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। এর পেছনেও ছিল আসলে করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব।

২০২০ সালের শুরুতে তারা তখন পহেলা বৈশাখ ও ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলছেন বা নিচ্ছেন। এমন সময় বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ শুরু হওয়ায় তারা চিন্তা করছিলেন অনলাইনে কিছু করার। এরপর বিভিন্ন সময়ে একাধিক লকডাউনে ব্যবসায় পরস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায়। এভাবে চিন্তাভাবনা ও প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে গো-দেশি।

শুরু থেকেই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানালেন সাবেরা আনোয়ার। এই এক বছরে গো-দেশির রেজিস্টার্ড সদস্য ৭৮৭ জন ডিজাইনার ও সেলার। তারা বিভিন্ন ধরনের দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করেন। কেউ ফ্যাশন নিয়ে কেউ বা আবার লাইফস্টাইল নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

শুরু থেকেই তাদের লক্ষ্য ছিল শুধু বিক্রি না, ক্রেতাদের দেশি কাপড় পরাতে হবে। দেশি পণ্যের প্রতি আগ্রহী করতে হবে। কীভাবে করা যায় সেই চিন্তা থেকেই অনলাইন থেকে যাত্রা শুরু করে শো-রুমের চিন্তা বলে জানালেন সাবেরা আনোয়ার।

বর্তমানে তাদের টার্গেট কাস্টমার মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং ধনীশ্রেণি হলেও পর্যায়ক্রমে সবধরনের ক্রেতার কাছে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখেন সাবেরা। তিনি জানান এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ডিজাইনার পণ্য বানাচ্ছেন। তাই দামটা তুলনামূলক কিছু কিছু পণ্যের বেলায় বেশি। তবে এখানে একদম এক হাজারের নিচে যেমন পণ্য পাওয়া যাবে। তেমনি রয়েছে লাখ টাকার ডিজাইনার পোশাক। এমনিতে বেশিরভাগ পোশাকই মধ্যবিত্ত ক্রেতার হাতের নাগালেই।

২৮ স্কয়ার ফিটের ডুপ্লেক্স এই শো-রুমের প্রথম তলায় লাইফ স্টাইল পণ্য আর দ্বিতীয় তলায় পোশাকের সমাহার। নিচ তলাতেই রয়েছে ছোট্ট কফিশপ। শো-রুমে কেনাকাটা করুন বা না করুন, কফিশপে উপভোগ করতে পারবেন যে কেউ। নানারকম নান্দনিক কারুকাজের দেশিয় পণ্যের সমাহারে পূর্ণ নিচতলা। আধুনিকতা আর দেশীয় ঐতিহ্যের মিশেল দৃষ্টি কেড়ে নেবে। এখানে রয়েছে কাঠ, মাটি, পাট, বেত, রট আয়রনের তৈরি নানারকম ঘর সাজানোর উপকরণ। রয়েছে দেশে তৈরি গয়না জুতা, ব্যাগ, নান্দনিক বাক্সসহ নানা কিছু। পাবেন কাঠের ওপর রঙ দিয়ে নকশা করা একসেসরি বক্স, ব্যবহার করা যাবে সুইট বা নাট বক্স হিসেবেও।

পাকিস্তানি আর ভারতীয় নাগরায় প্রাধান্যের এ বাজারে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানই দেশে নাগরা তৈরি করে। গো-দেশিতে পাবেন দেশীয় চামড়ায় তৈরি নান্দনিক কারুকাজের নাগরা। কাপড়ের তৈরি ব্যাগে হ্যান্ডপেইন্ট বা সুতার কাজে দেওয়া হয়েছে নতুনত্ব। হারিকেন, কেতলি, জগ, গ্লাস, ট্রে, মশার কয়েল হোল্ডারের মত পণ্যের গায়ে রিকোশা পেইন্টের মাধ্যমে অন্যরকম নান্দনিকতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

সাবেরা আনোয়ার জানালেন এখন পর্যন্ত ১৭ জন উদ্যোক্তার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে নিচতলায়। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ২০ জন ডিজাইনারের কাপড়। নতুন করে আরও অনেক ডিজাইনার যুক্ত হচ্ছেন এই উদ্যোগের সঙ্গে। ফেব্রিক, ডিজাইন, রঙ আর বৈচিত্রের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে দ্বিতীয় তলায় একাধিক ডিজাইনারের নানাবিধ পণ্য যুক্ত হওয়ায়। কথা হল বেলী’স এর ডিজাইনার বেলীর সঙ্গে। মূলত ফিউশন নিয়ে কাজ করেন তিনি। তার ল্যাবেলের নিচেই লেখা ফিউশন ও ট্র্যাডিশন। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ওয়েস্টার্ন, ক্যাজুয়াল সব পণ্যই নিজে ডিজাইন করে দেশে তৈরি করেন তিনি।

তিনি বলেন, সব ফেব্রিক দেশে তৈরি হয় না তাই কিছু কাপড় তাদের দেশের বাইরে থেকে আনতেই হয়। তবে সব পোশাক দেশে তৈরি করান, কারচুপি থেকে শুরু করে সব কাজও দেশি কারিগর দিয়ে বানানো। দেশীয় ক্রেতাদের বিদেশমুখিতার এই সময়ে তাই ডিজাইনে ভিন্নতা আনার চেষ্টা থাকে তার যেন সব ধরনের ক্রেতাই তার পছন্দের পোশাকটি খুঁজে পায় বেলীসে। জানালেন সাবেরা আনোয়ারের পানাশ হাবেও তিনি ছিলেন। এখন গো-দেশির এই প্রথম শো-রুম উদ্বোধনে তিনি দারূণ আনন্দিত।

জানা গেল, ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য জামদানি ঘিরে আলাদা কর্নার থাকবে এখানে। সাবেরা আনোয়ার জানালেন বিভিন্ন শো-রুমে সাধারণত বিভিন্ন ডিজাইনার হাউজের নামে কাস্টমাইজড জামদানি পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে তারা সরাসরি তাঁতিকে তুলে ধরার চিন্তা করছেন। উপতলায় যেমন বিভিন্ন ডিজাইনারের নামে আলাদা র‍্যাক আছে তেমনি একজন তাঁতির নামে আলাদা র‍্যাক থাকবে গো-দেশির এই শো-রুমে।

বনানীর শপেই কথা হলো নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে আসা জামদানি কারিগর ও ব্যবসায়ী শাহ আলমের সঙ্গে। বংশ পরম্পরায় জামদানি তৈরি ও বিক্রি করেন তারা। বর্তমানে তাদের তাঁতের সংখ্যা ২০টি। তাদের ব্র্যান্ডের নাম ‘তাঁতি বয়ন’। সেই নামেই গো-দেশিতে আলাদা র‍্যাক থাকবে তাদের।

শাহ আলম জানান, সেই মসলিনের যুগ থেকে তারা তাঁতে জামদানি বোনেন। এখন অনেকেই মেশিনের মাধ্যমে জামদানি ডিজাইনের তাঁতের বা হাফসিল্ক শাড়ি বানিয়ে জামদানি নামে বিক্রি করছেন। ওইসব শাড়ির খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় তাদের ব্যবসা এখন হুমকির মুখে। গো-দেশির এই শো-রুমে নিজেদের নামে খাটি জামদানী শাড়ি বিক্রি করতে পারায় তিনি দারুণ আনন্দিত।

শাহ আলম বলেন, জামদানি শাড়ির সুতা আর কারুকাজের ওপর দাম নির্ভর করে। সুতা যত মিহি হয় তত দাম বাড়ে। সুতার ধরন, রঙের সংখ্যা, কর্মীসংখ্যা আর দিনের ওপর ভিত্তি করে শাড়ির দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আসল জামদানি করতে এটুকু করতেই হবে। তাই ক্রেতাদের কাছে আসল জামদানি তুলে দিতে গো-দেশির এই শো-রুমে যুক্ত হওয়া।

এর আগে, চলতি বছরের ১১ মার্চ বনানীর ১৯/১ রোডের ২২ নম্বর ভবনের নিচতলায় গো-দেশির প্রথম শো-রুমের সফট উদ্বোধন হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই অবশ্য এখানে পাওয়া যাচ্ছে লাইফস্টাইল ও ফ্যাশনের নানারকম পণ্য।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

জামদানি দেশি গো সাবেরা আনোয়ার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর