মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বাদ দেওয়া হলো রাশিয়াকে
৮ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৫৯ | আপডেট: ৮ এপ্রিল ২০২২ ১১:২৫
ইউক্রেনে পরিকল্পিতভাবে নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে জেনেভাভিত্তিক ৪৭ সদস্যের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বরখাস্ত করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। নিউইয়র্কের অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্র এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করলে তার পক্ষে ভোট পড়ে ৯৩টি, বিপক্ষে ২৪টি। বাংলাদেশসহ ৫৮টি দেশ এ প্রস্তাবে ভোট দেয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে শেষ পর্যন্ত মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বাদ পড়ে রাশিয়া।
রয়টার্স ও বিবিসির খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার বিপক্ষে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়াকে কাউন্সিল থেকে বাদ দিতে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন ছিল ভোটে। সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ৫৮টি দেশ ভোট না দেওয়ায় তাদের অনুপস্থিত ধরে নেওয়া হয়। বাকি ১৩৫টি দেশকে উপস্থিত ধরলে রাশিয়াকে বাদ দিতে হলে ৯০ ভোটের প্রয়োজন ছিল। ৯৩টি ভোট প্রস্তাবের পক্ষে পড়ায় সেটি রাশিয়াকে কাউন্সিল থেকে বাদ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায়।
এই প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটগ্রহণের আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইউক্রেনের দূত সের্গেই কিসলিতসিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভয়াবহ নিপীড়নের অভিযোগ আনেন। তিনি বুচা শহরে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার অভিযোগও করেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে।
তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত গেন্নাডি কুজমিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব ও ভোট আয়োজনের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন ‘নাটক পরিবেশনে’র সময় নয়। পশ্চিমা দেশ ও তাদের মিত্রদেশগুলোর বিরুদ্ধেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন তিনি।
সিরিয়া, বেলারুশ ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলো এই প্রস্তাবে রাশিয়াকেই সমর্থন জানিয়েছে। আরও সমর্থন জানিয়েছে চীন। দেশটি এর আগে ইউক্রেন সংঘাতের জের ধরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে ওঠা দুইটি রেজ্যুলেশনে ভোট দেয়নি। তবে এবারে চীন ভোট দিয়েছে প্রস্তাবের বিপক্ষে তথা রাশিয়ার পক্ষেই।
ভোটের আগে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ খুবই তাড়াহুড়ো করে এরকম প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। তারা সদস্য দেশগুলোকে একটি পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য করছে। এসব কার্যক্রম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিভক্তি বাড়িয়ে দেবে।
তবে এই ভোটের খবরে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা। তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষার জন্য জাতিসংঘ যে সংস্থা করেছে তাতে যুদ্ধাপরাধীদের কোনো স্থান নেই। যারা রাশিয়াকে বরখাস্ত সমর্থন করেছেন, তারা ইতিহাসের সঠিক পক্ষের পাশে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপন করা এটি তৃতীয় রেজ্যুলেশন। এর আগের দুই রেজ্যুলেশনে রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানানো হয়, ইউক্রেনের পক্ষে সংহতি জানানো হয়। ওই দুই প্রস্তাবের প্রথমটিতে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট পড়েছিল ১৪১টি, দ্বিতীয়টিতে ১৪০টি।
সাধারণত তিন বছরের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ দেওয়া হয় কোনো দেশকে। এই কাউন্সিলটি যেসব সিদ্ধান্ত নেয়, সেগুলো সদস্য দেশগুলোর জন্য অনুসরণ বাধ্যতামূলক নয়। তবে এসব সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে স্বীকৃত। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তদন্ত কার্যক্রম অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ারও রয়েছে এই কাউন্সিলের।
মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে সদস্য দেশকে বাদ দেওয়ার নজির খুব একটা নেই। ২০১১ সালে লিবিয়াকে এই কাউন্সিল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এখন রাশিয়া বাদ পড়ায় রাশিয়ার প্রতিনিধিরা কেউ এই কাউন্সিলের কোনো ভোটে অংশ নিতে পারবেন না। তবে তারা কাউন্সিলের বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন।
সারাবাংলা/টিআর