আসছে বাজেটের জন্য ২২ প্রস্তাব ব্যবসায়ীদের
৩১ মার্চ ২০২২ ১৬:০১
ঢাকা: আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের জন্য ২২টি প্রস্তাব দিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে আয়কর ও মূসক সম্পর্কিত প্রস্তাব রয়েছে সাতটি, আর্থিক খাত সম্পর্কিত পাঁচটি, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পর্কিত ছয়টি এবং অবকাঠামো খাত সম্পর্কিত চারটি।
শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন এসব প্রস্তাব আমলে নিয়ে বাজেট করলে একদিকে সরকারের যেমন রাজস্ব বাড়বে, অন্যদিকে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটবে। সেইসঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও আসবে। তবে সব কিছুর মূলে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সহজ করার জোড় তাগিদ দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা শীর্ষক প্রাক বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। রাজধানীর বঙ্গবব্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), সমকাল ও চ্যানেল টুয়েন্টিফোর এ আলোচনার আয়োজন করে।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রহমানের সঞ্চালনায় প্রাকবাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন। সভাপতিত্ব করেন সমকালের ভঅরপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে সমস্যাটা একটু বেশি। এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। তবে কথা হলো এক জায়গায় হাত দিলে ২০/২৫ জায়গা নড়াচড়া করে। ফলে ভয়ে বসে যেতে হয়। তারপরও কাজ কাজ করে যেতে হবে। অথরিটি কথাটা বাদ দিতে হবে। কেননা অথরিটি মানেই যেন অন্য কিছু।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের সঙ্গে চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও ভাবতে হবে। সরকার এবং ব্যবসায়ীরা মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আগে এনবিআর’র কোনো কিছু পরিবর্তন করা হলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হতো। কিন্তু এখন কোনো আলোচনাই করা হয় না। পোশাক খাতের মতোই অন্যান্য রফতানিমুখী শিল্পকে সহায়তা দিতে হবে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেস পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রাক বাজেট আলোচনায় উপস্থাপন করা প্রস্তাবগুলো হলো-
আয়কর ও মূসক সম্পর্কিত প্রস্তাব: সাধারণত করপোরেট কর হ্রাস করা হলে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের করপোরেট করের হার ৩০ শতাংশ। বর্তমান বিশ্বে গড় করপোরেট কর হার ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে এশিয়ায় ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ, ওসিডিভুক্ত দেশগুলো ২৩ শতাংশ এবং ভারতে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া দেশে কর্পোরেট কর হার ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ, শ্রীলংকার তুলনায়ও ৬ শতাংশ বেশি। বিদ্যমান কর প্রদান ব্যবস্থা সহজ করা, কর জালের আওতা বৃদ্ধিসহ কর-জিডিপি হার বৃদ্ধির জন্য আয়কর অধ্যাদেশ ও মূসক আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ অটোমেটেড কর ব্যবস্থাপনা জরুরি।
আর্থিক খাত সম্পর্কিত: টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে আর্থিক খাতের সার্বিক ও টেকসই উন্নয়ন জরুরি। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করা এবং দীর্ঘমেয়াদি পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক বিকল্প অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টির বিকল্প নেই। ব্যাংক সুদের হার মূল্যস্ফীতির থেকে বেশি হওয়ায় ব্যাংকে সঞ্চয় নিরুৎসাহিত হচ্ছে। গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ডিপোজিটের উপর সুদ ৩ থেকে ৪ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আমানতের সুদ বৃদ্ধি করলে প্রান্তিক বিনিয়োগ ও সঞ্চয় বৃদ্ধি পাবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও সামগ্রিক অর্থনীতির কল্যাণে এনপিএল কমানোর জন্য একটি রোডম্যাপ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে ব্যবহার, এডিআর’র প্রয়োগ ও ইনসোলভেনচি অ্যাক্টকে আরও যুগপোযোগী করলে আর্থিক খাতের ঋণের ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পাবে। সিএমএসএমই ব্যবসায়ের পুনঃসংজ্ঞায়ন এবং মাঝারি ব্যবসাকে আলাদা করা। এ খাতে কালেক্টটেরেল ভিত্তিক ঋণ দেওয়ার পরিবর্তে টার্নওভার ভিত্তিক ঋণ প্রদান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং প্রয়োজন। পুঁজিবাজারকে বিকশিত করা ও দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সুকুক এবং অন্যান্য সিকিউরিটাইজড বন্ড যেমন- ইক্সচেঞ্জ ট্রেডস ফান্ডস (ইটিএফএস) ও মরটেগ-বেকেড সিকিউরিটিজ (এমবিএস) ইত্যাদি প্রর্বতন করা প্রয়োজন। গ্রিনফিল্ড অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতি।
শিল্প ও বাণিজ্য সম্পর্কিত প্রস্তাব: ইলেকট্রিক ভেহিকেল চার্জিং স্টেশন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ ও উপকরণ দেশীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য আমদানির উপর কর অব্যাহতি দেওয়া হলে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি উৎসাহিত হবে। স্থানীয় বাজারে পাটপণ্য বিক্রয়ে মূসক রহিতকরণ আরো পাঁচ বছর বৃদ্ধি এবং পাটপণ্যের রফতানি বহুমুখীকরণের জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য শিল্পকে সুবিধা দেওয়া, সিইটিপি কার্যকর করে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা হলে এ খাতের রফতানি ও বিনিয়োগ বহুমুখী হবে। এ খাতে বন্ড লাইসেন্স প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস করে ৩ বছর পর্যন্ত বন্ড লাইসেন্স সুবিধা দেওয়া। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর আমদানি বিকল্প স্থানীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাসহ নতুন নতুন সম্ভাবনাময় খাতে রফতানি বহুমুখীকরণের জন্য রূপরেখা প্রণয়ন। ইকোনোমিক জোনে স্থাপিত শিল্পের জন্য নিবন্ধিত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেজার লিজ রেন্ট’র উপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া। কৃষির আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্পের কাঁচামালের সরবরাহ ও এসএমই ডেভলপমেন্ট নিশ্চিত করার জন্য উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা।
অবকাঠামো খাত সম্পর্কিত প্রস্তাব: জ্বালানি নিরাপত্তা ও উৎপাদনশীল বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য জ্বালানির নিশ্চয়তা প্রয়োজন। বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাত এবং বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা। লজিস্টিক নীতি দ্রুত বাস্তবায়ন ও একটি দীর্ঘমেয়াদী লজিস্টিক স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করা। ইকোনোমিক জোনকে বিনিয়োগযোগ্য করার জন্য সেখানে সব ইউটিলিটি সার্ভিস ও সংযোগ সড়ক দ্রুততার সঙ্গে নির্মাণ করে সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে হবে।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম
টপ নিউজ ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রাকবাজেট আলোচনা