স্বাধীনতা দিবসে চট্টগ্রামে শহিদদের শ্রদ্ধায় স্মরণ
২৬ মার্চ ২০২২ ১৬:০৪ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ ১৬:২৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন, কুচকাওয়াজ, আলোচনা, গান-কবিতাসহ নানা আয়োজনে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেয়া বীর সন্তানদের স্মরণ করছে বন্দরনগরী। যে মানুষটির ডাকে বাংলার মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিও এদিনে প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।
শনিবার (২৬ মার্চ) ভোরে নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহিদ মিনারে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি শুরু হয়। এসময় চট্টগ্রাম সিটিকরপোরেশনের (চসিক) কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা মেয়রের সঙ্গে ছিলেন। পরে মেয়র নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালামও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর ডিআইজি ও পুলিশ সুপার নগরীর হালিশহরে জেলা পুলিশ লাইনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেন। সিএমপি কমিশনার নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের শহিদ মিনারেও শ্রদ্ধা জানান।
আজ সকালে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ শুরু হয়। কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে ডিসপ্লেতে অংশ নেয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এখানে অতিথি ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরসহ প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সকালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নগরীর বড়পোল এলাকায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনসহ নেতাকর্মীরা ছিলেন। এছাড়া দারুল ফজল মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন নেতাকর্মীদের নিয়ে শহিদ মিনারে ফুল দেন। নগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আরও বিভিন্ন সংগঠনও শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা নগরীর ষোলশহরে বিপ্লব উদ্যানে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এসময় নগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, উত্তরের আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার এবং দক্ষিণের আহবায়ক আবু সুফিয়ান উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির উদ্যোগে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এসময় জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা, সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য উত্তম চৌধুরী, ফরিদুল ইসলাম, সিতারা শামীম উপস্থিত ছিলেন। জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ্যানি সেন ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরীর নেতৃত্বে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
চট্টগ্রাম জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আবু হানিফের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শহিদ মিনারে ফুল দেন। যুব মৈত্রী, ছাত্র মৈত্রীও পৃথকভাবে ফুল দিয়েছে। ন্যাপ, জাসদ, বাসদসহ আরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন উদীচী চট্টগ্রাম। এসময় সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশ, সহ-সভাপতি প্রবাল দে, বিধান বিশ্বাস ও তপন শীল, সহ-সম্পাদক জয় সেন ও ভাস্কর রায় উপস্থিত ছিলেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সংক্ষিপ্ত জমায়েতে মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা, বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান প্রতিহত করা এবং একাত্তরের মানবতা বিরোধীদের অসমাপ্ত বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়েছে।
বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরসহ আরও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। একুশে পদকপ্রাপ্ত ঢোলবাদক বিনয়বাঁশী জলদাসের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত ‘বিনয়বাঁশী শিল্পীগোষ্ঠী’র উদ্যোগে বোয়ালখালী উপজেলার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এসময় ঢোলবাদক বাবুল জলদাস, সংগঠনের সভাপতি প্রণব রাজ বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব জলদাস ছিলেন।
এদিকে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর অবস্থায় থাকা বিদেশি বিভিন্ন জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বন্দরের কর্মকর্তারা। এসময় বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ফুল ও উপহার সামগ্রী তাদের দেওয়া হয়।
বেসরকারি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে নগরীর জিইসি মোড়ে ক্যাম্পাসের শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় উপাচার্য ড. অনুপম সেন, উপ-উপাচার্য কাজী শামীম সুলতানা ও ট্রেজারার একেএম তফজল হকসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ছিলেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সমবেতদের উদ্দেশে অনুপম সেন বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার মাধ্যমে এদেশে গণহত্যার সূচনা করে। তারা ঢাকার পিলখানার ইপিআর সদর দফতর, রাজারবাগ পুলিশলাইনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্যাংক, মেশিনগান ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভয়াবহ আক্রমণ চালায়। সেই রাতে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে অগণিত নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করা হয়। গণহত্যা শুরুর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।’
স্বাধীনতা দিবসে বীর শহিদদের স্মরণে সংগ্রামের সেই অগ্নিগর্ভ দিনগুলোর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও তথ্যচিত্র নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)। সারাবাংলার চবি করেসপন্ডেন্ট চলন্ত চাকমা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ‘সংবাদচিত্রে স্বাধীনতা সংগ্রাম’ শিরোনামে প্রদর্শনী শুরু হয়। উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
এসময় স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন ও স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীয়, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রায় শতাধিক সংবাদ ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া চবি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের লিখা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্থাপনা ও ভাস্কর্য নিয়ে করা প্রতিবেদনও প্রদর্শিত হয়।
পরে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। চবি সংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিনের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি সাইফুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান, প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া এবং সমিতির সাবেক সভাপতি ইমরান হোসাইন।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস