Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জমিতে পানি দেয়নি পাম্প অপারেটর, ক্ষোভে কৃষকের আত্মহত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৪ মার্চ ২০২২ ২২:১৯ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২২ ০৮:৫৭

বিষপানে আত্মহত্যা করা দুই কৃষকের স্বজনরা

রাজশাহী: গোদাগাড়ী উপজেলায় বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুই কৃষক কীটনাশক পান করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে একজন মারা গেছেন। অন্যজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পাম্প অপারেটরের পেছনে ঘুরে পানি না পেলেও কীটনাশক পান করার পর তাদের জমিতে পানি সেচ দেওয়া হয়েছে।

মৃত ব্যক্তির নাম অভিনাথ মারান্ডি (৩৬)। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমঘুটু গ্রামের মৃত বাবুচাঁদ মারান্ডির ছেলে। চিকিৎসাধীন অন্যজনের নাম রবি মারান্ডি (২৭)। তার বাবার নাম গয়ানাথ মারান্ডি। অভিনাথ ও রবির বাড়ি পাশাপাশি। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই।

বিজ্ঞাপন

গত বুধবার সন্ধ্যার আগে তারা কীটনাশক পান করেন।

স্থানীয়রা বলছেন, অভিনাথ দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। আর নিজের দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন রবি। পানি না পেয়ে অভিনাথ ও রবি গভীর নলকূপের কাছেই কীটনাশক পান করেন। এরপর দু’জনকেই প্রথমে নিজ নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর অভিনাথ মারা যান। এরপর রবিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) বেলা ৩টার দিকে বাড়ি থেকে অভিনাথের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম, গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, অভিনাথের বাবার বাড়ির উঠোনে অভিনাথের লাশ। প্রচুর আদিবাসী নারী বাড়িটিতে ভিড় করেছেন। লাশ ঘিরে বিলাপ করছেন মা সুমিতা টুডু, বোন রুপিনা মারান্ডি ও ফুফাতো বোন সুমিতা টুডু। নিজেদের ভাষায় বিলাপ করায় তাদের কথা বোঝা গেল না। তবে সুমিতা টুডু বাংলায় বললেন, ‘আমরা কোথাও বিচার পাই না রে।’

বিজ্ঞাপন

অভিনাথের বাড়িতে টিন দিয়ে ঘেরা একটাই ঘর। ঘরের দরজায় হেলান দিয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে ছিলেন স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম। তিনি জানালেন, পানির জন্য তার স্বামী ১০-১২ দিন ধরে ঘুরছিলেন। গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন পানি দিচ্ছিলেন না। এই ক্ষোভে তার স্বামী কীটনাশক পান করেন। একই কারণে অভিনাথের চাচাতো ভাই রবিও কীটনাশক পান করেছিলেন।

থানা পুলিশ, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াতের সামনেই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্মী সাখাওয়াত পানি দিতে স্বজনপ্রীতি করেন। পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে আদিবাসীরা বৈষম্যের স্বীকার হন। রবি ও অভিনাথ কীটনাশক পানের পর রাতে তাদের জমিতে নিজেই পানি দিয়েছেন সাখাওয়াত।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাখাওয়াত। তিনি রবি ও অভিনাথের জমিতে নিয়ে গিয়ে পানি দেখান। তিনি দাবি করেন, গত মঙ্গলবার তাদের জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে পটল নামের এক ব্যক্তির জমি দেখিয়ে সাখাওয়াত বলেন, ‘এই জমিতে গতকাল পানি দিয়েছি। তাও পানি নাই।’

তাহলে দু’দিন আগে রবি ও অভিনাথের জমিতে এত পানি কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

সাখাওয়াত জানান, সোমবার রবি ও অভিনাথের জমিতে পানি দেওয়ার কথা খাতায় লেখা নেই। তখনও স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, ‘রবি ও অভিনাথ সন্ধ্যার আগে কীটনাশক পানের পর তাদের জমিতে রাতে পানি দেওয়া হয়েছে।’

রামেক হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রবির মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। কীটনাশক পান করার কথা তিনি স্বীকার করেছেন। এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারেননি।

গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন চৈত্র মাস। পানির সঙ্কট। তার জন্য আত্মহত্যা করতে হবে? আমরা লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাচ্ছি। এ ব্যাপারে একটা অপমৃত্যুর মামলা হবে। পরিবার যদি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করে সেটাও নেওয়া হবে।’

ইউএনও জানে আলম বলেন, ‘ঘটনাটা বড়। তাই দেখতে এসেছি।’

সারাবাংলা/এমও

আত্মহত্যা কৃষকের আত্মহত্যা জমিতে পানি টপ নিউজ পাম্প অপারেটর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর