ত্বিন চাষে ভাগ্য বদল টাঙ্গাইলের যুবকের
২৪ মার্চ ২০২২ ০৯:৫৪ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২২ ১৭:০২
টাঙ্গাইল: মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় ফল ত্বিন (ডুমুর জাতীয় ফল)। অল্প করে হলেও ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও এই ফলের চাষ শুরু করেছেন অনেকে। তেমন একজন হলেন জাবিদ আল মামুন। ত্বিন ফলের চাষ করে সফল হয়ে নিজের ভাগ্য বদলেছেন টাঙ্গাইলের মাস্টার্স পাস এই যুবক।
জেলার সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কীর্তনখোলা গ্রামের জাবিদ আল মামুনের বাড়ি। ২০১৮ সালে করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেন তিনি। অনেক চেষ্টা করেও একটা চাকুরি না পেয়ে বেকার জীবন পার করছিলেন তিনি। এর মধ্যে ২০২০ সালে করোনার থাবা। ঘরে বেকার বসে না থেকে কী করা যায়- এমন ভাবনা থেকেই ত্নিন ফল চাষের বিষয়টি তার মাথায় আসে। পরে দেশের মাটিতে ত্বিন ফল চাষ করা সম্ভব কি না জানতে চেষ্টা করেন তিনি। পরে ইউটিউব থেকে জানতে পারেন কুরআনে বর্ণিত ত্বিন ফল চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে।
এরপর তিনি খোঁজ নিতে থাকেন দেশের কোথায় ত্বিন ফল চাষ হচ্ছে। পরে জানতে পারেন পার্শ্ববতী জেলা গাজীপুরে চাষ হচ্ছে ত্বিন ফলের। এরপর গাজীপুরের শ্রীপুরে ত্বিন ফলের চাষ বিষয়ক কর্মশালায় যোগদান করেন। প্রশিক্ষণ শেষ করে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ৬০০ চারা কিনে বাড়ির পাশে ৩৫ শতাংশ জমিতে রোপন করেন। প্রতিটি চারা কিনতে খরচ হয়েছে ৫২০ টাকা।
মামুনের ত্বিন বাগানের ছোট বড় সব গাছেই ত্বিন ফল ধরেছে। ইতোমধ্যে অনেক গাছেই ফল পাকতে শুরু করছে। প্রথমবারের মতো ত্বিন গাছে ফল আসতে শুরু হওয়ায় দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দের। এই ফল চাষ করে উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি।
জাবিদ আল মামুন বলেন, প্রথমে কিছুটা শঙ্কায় ছিলাম। পরে কঠোর পরিশ্রম, নিবিড় পরিচর্যা আর কৃষি অফিসের লোকজনের পরামর্শে সফল হয়েছি। দুই মাসের মধ্যে গাছে ফল আসতে শুরু করে। ৬ মাসের মধ্যে ফল বিক্রি শুরু করি। এ বছর ফেরুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ত্বিন ফল পাকতে শুরু করে। প্রতি কেজি ত্বিন বিক্রি করা হয় ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা করে। এ পর্যন্ত ৬০ কেজি ত্বিন ফল বিক্রি করে ৫৪ হাজার টাকা পেয়েছি। এ বছর ৯ থেকে ১২ লাখ টাকার ত্বিন ফল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।
তিনি আরও জানান, এ বছর প্রতিটি গাছ থেকে ৩ থেকে ৪ কেজি ফল পাবেন বলে আশা করছেন। দ্বিতীয় বছরে প্রতিটি গাছ থেকে ৭ থেকে ১০ কেজি ফল আসবে। তিন বছর পর থেকে এককেকটি গাছ থেকে পাওয়া যাবে ২০ থেকে ২৫ কেজি ত্বিন ফল। টানা ৩৫ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে একটি ত্বিন গাছ। আকারে দেশিয় ডুমুরগুলোর চেয়ে বেশ বড় হয়। পাকলে বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়।
স্থানীয় যুবক নুর আলম জানান, মামুনের পরামর্শ নিয়ে নিজদের ১৮ শতাংশ জমিতে ২০০ ত্বিনের চারা রোপন করেছে তিনি। তার গাছগুলোতে ফল এসেছে এবং পাকতে শুরু করছে। আশা করছেন ত্বিন ফল চাষ করে লাভবান হবে তিনি।
কৃষক শহীদুল হক জানান, মামুনের কাছে থেকে ৩টি ত্বিনের চারা বাড়িতে নিয়ে টবের মধ্যে রোপন করেন তিনি। সে গাছেও ফল ধরেছে। এখন ত্বিন ফলের চাষ করার উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনিও।
সখীপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিয়ন্তা বর্মন জানান, মালটা, কলা ও কুল চাষের পর সখীপুর উপজেলায় ত্বিন ফল নতুন সংযোজন হয়েছে। এ উপজেলায় ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। মামুন ৩৫ শতাংশ জমিতে ত্বিন ফল চাষ করেছেন। তার ত্বিন ফলের বাগান পরিদর্শন ও নিয়মিত কৃষি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তার সফলতা দেখে ইতোমধ্যে অনেক কৃষক ত্বিন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
সারাবাংলা/এনএস