কৃষিযন্ত্র তৈরিতে ভর্তুকি চান দেশীয় উদ্যোক্তারা
২২ মার্চ ২০২২ ২০:৫৭ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২২ ১০:০৪
ঢাকা: দেশে কৃষিযন্ত্র তৈরিতে ভর্তুকি চান দেশীয় উদ্যোক্তারা। সেজন্য একটি নীতিমালা তৈরির দাবিও তারা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে খাতটির জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা, প্রচলিত ঋণের সুদ হার কমানো ও দেশেই যেসব যন্ত্র উৎপাদন করা সম্ভব বাইরে থেকে সেসব কৃষিযন্ত্র আমদানি বন্ধ করার দাবিও জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘এগ্রিকালচার মেকানাইজেশন ইন বাংলাদেশ— দ্য ফিউচার’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালার শেষ দিনে এক সেমিনারে দেশীয় উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন।
ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ সিরিয়াল সিস্টেম ইনিশিয়েটিভ ফর সাউথ এশিয়া- মেকানাইজেশন অ্যান্ড এক্সটেনশন অ্যাকটিভিটি (সিসা-এমইএ) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে। সেমিনারের ওই সেশনটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আইয়ুব হোসাইন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বগুড়ার রেজা ইঞ্জিনিয়ার্সের রেজাউল করিম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রতিনিয়তই আমাদের পণ্যের দাম বাড়ছে। এটি একটি সমস্যা। অনেকেই খাতটি থেকে সরে যাচ্ছে। এই খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছেন, সেই ঋণের সুদের হার কমিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। দেশেই এখন পাওয়ার টিলার, সেচ মেশিন উৎপাদন করা সম্ভব। সেজন্য এ খাতে ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন।
যশোরের শিল্পী মেটাল ফাউন্ড্রির সামসুল আলম স্বপন বলেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য দেশে শিল্প পার্ক নেই। আমাদের শিল্প পার্ক প্রয়োজন। খাতটির উন্নয়নে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রয়োজন। দেশে কোনো খনিজ পদার্থ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। লোহার সংকটে অনেক ওয়ার্কশপ এখন বন্ধ। অনেক অর্ডার আছে। কিন্তু আমরা মেশিনারি ডেলিভারি দিতে পারছি না। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে যে অর্ডার নিয়েছি, সেই মেশিন বানাতে এখন ৮০ হাজার টাকা লাগবে। আমরা কাজ করতে পারছি না। খাতটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ঋণ প্রয়োজন।
আলিম ইন্ড্রাস্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, পার্টস তৈরি করতে গেলে ক্যাপিটল মেশিনারি লাগে। এই খাতে সুদ মুক্ত দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিতে হবে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতও কৃষিভিত্তিক। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১০ থেকে ১৫ বছর মেয়াদি ঋণ প্রয়োজন। আমাদের ওয়ার্কশপে যে ইঞ্জিনিয়ার আছেন বা যারা কাজ করছেন, তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। সেজন্য সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে কাঁচামালের বাজার নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। যখন আমরা কোনো একটি টেন্ডারে অংশ নিই, তখন একটা দাম ধরি। কিন্তু পরে দাম বেড়ে যায়। এতে আমরা ক্ষতির মুখে পড়ি। সে বিষয়টিও সরকারকে ভাবতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই খাতে কারিগরি পরামর্শক প্রয়োজন। কোনো একটি যন্ত্র নষ্ট হলে কিংবা পেরে না উঠলে তখন আমরা কোথায় যাব, কী করব— কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। সেজন্য কারিগরি পরামর্শক জরুরি। যেসব যন্ত্র দেশে তৈরি করা সম্ভব এবং দেশেই উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি হয়ে গেছে, সেই সব কৃষিযন্ত্র যেন দেশের বাইরে থেকে আমদানি না করা হয়, সেজন্য নীতিমালা তৈরি করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, কৃষিযন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে দেশীয় প্রস্তুতকারীরা পিছিয়ে পড়ছে। বাইরে থেকে যন্ত্র আমদানি হচ্ছে। এতে উদ্যোক্তারাও আগ্রহ হারাচ্ছেন। দেশীয় কৃষিযন্ত্র তৈরিতে ভর্তুকি প্রয়োজন। সেজন্য একটি নীতিমালা এখন সময়ের দাবি।
সারাবাংলাা/ইএইচটি/টিআর