৩২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া আকাশনীলের এমডি-পরিচালক গ্রেফতার
২১ মার্চ ২০২২ ১৮:২৭ | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২২ ২২:০২
ঢাকা: ‘আকাশনীল’ নামে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান খুলে প্রায় ৩২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমান ওরফে সাদ্দাম (২৮) ও পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রনিকে (৩০) গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর সেই টাকায় অফিস স্টাফদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও ধানমন্ডিতে নিজের নামে তিন কোটি টাকার ফ্ল্যাট কেনেন সাদ্দাম। নিজে ব্যবহার করতেন ৬০ লাখ টাকার গাড়ি। তিন দফায় প্রায় ৯ হাজারের মতো গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। এক পর্যায়ে রনিকে নিয়ে দুবাইয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ভিজিট ভিসাও নিয়েছিলেন। পরে অভিযান চালিয়ে সাদ্দাম ও রনিকে গ্রেফতার করে র্যাব।
সোমবার (২১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা জানান।
আরও পড়ুন- এবার ৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘আকাশনীল’
র্যাব কমান্ডার বলেন, মশিউর ও রনি ২০১৯ সালে ‘আকাশনীল’ নামে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ খোলেন। ট্রেড লাইসেন্সও নেন। প্রথমে শাক-সবজি কিনে অনলাইনে হোম ডেলিভারি শুরু করেন। করোনায় সুবিধা করতে না পেরে শুরু করেন প্রতারণামূলক ব্যবসা। কোম্পানিকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মতো ডিসকাউন্ট অফারে মোটরসাইকেল বিক্রি শুরু করেন। তিন দফায় তিনি ৯ হাজারের বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করে হাতিয়ে নেন প্রায় ৩২ কোটি টাকা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইভ্যালিসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানের ফলে গ্রাহকরা পণ্য অথবা টাকা ফেরতের চাপ দিতে শুরু করলে অফিস গুটিয়ে নেন। নিজেদের ফোন বন্ধ রাখেন। এক পর্যায়ে দুবাই যাওয়ার জন্য ভিসা ও টিকিট নেন এমডি মশিউর।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, তাদের প্রথম ক্যাম্পেইন ছিল গত মে মাসে। ওই সময় ৩০ শতাংশ ছাড়ে দুই মাসের মধ্যে ডেলিভারির আশ্বাসে দুই শতাধিক মোটরসাইকেলের অর্ডার পান। পরে জুলাই মাসে ২৫ শতাংশ ছাড়ে ৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারির নিশ্চয়তায় এক হাজারেরও বেশি মোটরসাইকেলের অর্ডার পায় আকাশনীল। সবশেষ গত আগস্টে তৃতীয় ক্যাম্পেইনে ২৩ শতাংশ ছাড়ে ২৫ দিনে মোটরসাইকেল ডেলিভারির বিজ্ঞাপন দেন। এ পর্যায়ে প্রায় ৯ হাজার মোটরসাইকেলের অর্ডার জমা পড়ে।
র্যাব বলছে, মোটরসাইকেলের পাশাপাশি লোভনীয় ছাড়ে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যসহ গৃহস্থালির অন্যান্য পণ্য বিক্রি নিয়েও ক্যাম্পেইন চালায় আকাশনীল। এসব লোভনীয় অফার দেখে গ্রাহকরাও হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তাদের টাকা সরাসরি জমা হতে থাকে মশিউরের নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
র্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অন্যান্য ই-কমার্স ব্যবসার মতো আকাশনীলেরও গেটওয়ে সিস্টেম ছিল। কিন্তু গ্রাহকদের কাছ থেকে সরাসরি টাকা জমা নেওয় হতো। ই-কমার্স নীতিমালার কারণে পণ্য ডেলিভারি না হলে টাকা গেটওয়েতে আটকে থাকার কারণে সেসব টাকা গ্রাহকদের রিফান্ড করা হতো। কিন্তু সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া টাকা নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন মশিউর-রনি।
গ্রেফতার এই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব জানাচ্ছে, আকাশনীলে প্রায় ৪০ জন অস্থায়ী কর্মচারী ছিলেন। তাদের মাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা বেতন দেওয়া হতো। এর বাইরে গ্রাহকদের টাকায় মশিউর নিজে ধানমন্ডিতে তিন কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনেন। তার প্রিয়াশ ও সিএইচআর মডেলের দু’টি দামি গাড়ি রয়েছে। এছাড়া কোম্পানির চারটি টাটা পিকআপও রয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি মশিউর দুবাই পালানোর জন্য ভিসা ও বিমান টিকিট কেনেন। কিন্তু তার আগেই মশিউর ও তার সহযোগী রনি র্যাবের জালে ধরা পড়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
আকাশনীল ই-কমার্স ই-কমার্সে প্রতারণা ইফতেখারুজ্জামান রনি টপ নিউজ মশিউর রহমান ওরফে সাদ্দাম