দেশের সবচেয়ে বড় তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রার উদ্বোধন ২১ মার্চ
১৪ মার্চ ২০২২ ১৪:৩০ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২২ ১৫:৫৮
ঢাকা: অবশেষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী ২১ মার্চ এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন তিনি পটুয়াখালীতে অবস্থিত পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন এবং দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা করবেন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুই বছরের বেশি সময় পর স্বশরীরে কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
সোমবার (১৪ মার্চ) বিদ্যুৎ ভবনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, পায়রা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১৩২০ দিয়ে শুরু করা হলেও আমাদের লক্ষ্য ১২০০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের। এটা বিভিন্নভাবে হবে। সারা বাংলাদেশে গ্যাস সংযোগে সংযুক্ত করতে চাই।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নিশানবাড়িয়ায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ উদ্যোগে চুক্তি হয়। এরপর বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড গঠিত হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত এক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি-সজ্জিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ন্যূনতম জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। এছাড়াও কয়লাভিত্তিক এ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় কয়লা ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি বন্দরের নিজস্ব টার্মিনালে পৌঁছায়। কয়লা ব্যবহারের পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। শ্রমিকদের জন্য রয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিট থেকেই ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে দক্ষিণাঞ্চলের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এর আগে গোপালগঞ্জ থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে তা চালু করা হয়। গোপালগঞ্জের গ্রিড থেকে রাজধানীর আমীনবাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ কাজ চলছে। যা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, মাত্র ৩৭ মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে যা বিশ্বে সবচেয়ে কম সময়ে নির্মাণ করা হয় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়বে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তি সইয়ের পর ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ সহায়তা দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
উল্লেখ্য, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরেও দীর্ঘ দিন বসে ছিল এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত বছর মার্চে এটি উদ্বোধনের কথা থাকলেও করোনার কারণে তা পেছাতে পেছাতে এবার ২১ মার্চে ঠেকেছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধনের দিনই দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ