আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণমূলক হতে হবে
১৩ মার্চ ২০২২ ২১:৪১ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২২ ০৯:৪৭
ঢাকা: নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে সব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন, যেন আগামী নির্বাচনটি ইনক্লুসিভ (অংশগ্রহণমূলক) হয়।
রোববার (১৩ মার্চ) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিবদের উপস্থিতিতে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ইসি এই সংলাপে ৩০ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানালেও এতে অংশ নেন মাত্র ১৩ জন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারের প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, সবার মতামত নিয়ে ইভিএম ব্যবহারের নিরাপদ পদ্ধতি বের করতে হবে। এছাড়া এনআইডি সংশোধনে নাগরিকরা যেন ভোগান্তি শিকার না হন, সেদিকেও কমিশনের দৃষ্টি রাখতে হবে।
আরও পড়ুন- গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সকলের সহযোগিতা চেয়েছি: সিইসি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, দ্বাদশ নির্বাচন যেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক হয়, নতুন কমিশনকে সেই চেষ্টা করতে হবে। দেখতে হবে, নির্বাচনে যেন কোনো ধরনের সহিংসতা না হয়। নারীরা যেন বেশি মাত্রার নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, তাদের মধ্যে সেই আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার ও সংসদ বজায় রেখে কীভাবে নির্বাচন জবাবদিহিতামূলক করা যায়, কমিশনকে এখনই সেটি নিয়ে ভাবতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার ইসি সংলাপে অংশ নিয়ে বলেন, নতুন ইসি দায়িত্ব নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রস্তাব যদি রাজনৈতিক দলগুলো আমলে না নেয়, তাহলে ইসির দায়িত্ব পালন করা কঠিন হবে। যেহেতু সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সেহেতু ইসিকে বুঝতে হবে— বল সরকারি দলের কোর্টে রয়েছে।
তিনি বলেন, ১০ জনের তালিকা থেকে পাঁচ জনকে নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করা হয়েছে। উচিত ছিল সার্চ কমিটির ১০ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা। কিন্তু তালিকা প্রকাশ না করায় অনেকটা লুকোচুরি মাধ্যমে এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপের আয়োজন নতুন কিছু নয়। কিন্তুর আগের ইসির সংলাপ করলেও তারা কারও মতামত নেয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে ১৩টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি কমিশন সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে। বাকি ১০টি কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি।
নতুন কমিশন নিয়ে তিনি বলেন, নতুন কমিশনের পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনই আমলা। সরকারের সুবিধাভোগী। সরকারের সুবিধা নিয়ে কিভাবে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে এখন ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আর যদি সম্ভব না হয় তাহলে আপনাদের অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ইয়াহিয়া বলেন, দেশে ভোটারদের প্রযুক্তিজ্ঞান কম। মেশিনও ব্যয়বহুল। এটি যে হ্যাক করা যায় না, তার প্রমাণ দিতে হবে। গরীব ভোটার প্রযুক্তি বোঝে না। অথচ তাদের ওপর প্রযুক্তি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। ভোটারদের নির্যাতন করার অধিকার কমিশনের নেই।
অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিকে নজর দিতে হবে। থানা বা উপজেলায় পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রায় ১৭-১৮ বছর ধরে পদন্নোতি বঞ্চিত। তাদের পদবঞ্চিত রেখে কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এছাড়াও বিগত প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ বিভিন্ন নির্বাচন কমিশনার ও সচিব প্রশিক্ষণ ভাতা এবং সম্মানি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে কমিশনকে সর্তক থাকতে হবে।
সংলাপে উপস্থিত শিক্ষাবিদদের মধ্যে আরও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আনোয়ার হোসাইন, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম আবুল কাশেম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, ড. আখতার হোসেন, লায়লুফার ইয়াসমিন, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. এ এফ এম মফিজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির প্রো ভাইস চ্যান্সেলর ড. নিয়াজ আহম্মেদ খান।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর