ড. কামালকে আইনি নোটিশ
৯ মার্চ ২০২২ ১৯:২৩ | আপডেট: ৯ মার্চ ২০২২ ২১:২৭
ঢাকা: বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ও গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেনের নামে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে গণফোরামেরই একাংশের দুই নেতারা। কাউন্সিল আয়োজনের অনুমতি দিয়েও কমিটি গঠনের পর নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে এ সংক্রান্ত বিষয় অস্বীকার করে ড. কামাল প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে নোটিশে।
বুধবার (৯ মার্চ) গণফোরামের একাংশের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও নির্বাহী সভাপতি আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ এই নোটিশ পাঠিয়েছেন ড. কামালকে।
অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, গত ৩ ডিসেম্বর মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বে গণফোরামের কাউন্সিল হয়েছে। ড. কামাল হোসেন নিজেই চিঠি দিয়ে কাউন্সিল আয়োজনে সম্মতি জানিয়েছিলেন। এরপর কাউন্সিল হয়েছে, গণফোরামের নতুন কমিটি হয়েছে। এখন আমরা দেখছি, আগামী ১২ মার্চ মোকাব্বির খানের নেতৃত্বে আবার গণফোরামের সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। এই সম্মেলনে উপস্থিত হলে ড. কামালের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আইনজীবী মহসিন রশিদ আরও বলেন, ড. কামাল হোসেনের অনুমতি নিয়েই আমরা সম্মেলন করেছি। পরে কাউন্সিল থেকে গণফোরামের নতুন কমিটি নির্বাচন করা হয়। কমিটির নেতাদের নাম উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনে চিঠিও দেওয়া হয়। কিন্তু ড. কামাল হোসেন গত ৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে পাল্টা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, এই সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন-
- সহজে মিটছে না গণফোরামের কোন্দল
- নির্বাহী কমিটি নিয়ে ফের জটিলতা গণফোরামে
- গণফোরামের সভাপতি মন্টু, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত
- গণফোরামে কোনো ভুল বুঝাবুঝি ও বিভেদ নেই: ড. কামাল
- ড. কামালকে ছাড়াই গণফোরামকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ
- ড. কামালকে নিয়েই পথ চলতে চায় গণফোরামের বিদ্রোহীরা
- মন্টুর গণফোরামের সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে ২ চিঠি ড. কামালের
- রাজনীতিতে এসে ‘মন ভেঙেছে’ রেজা কিবরিয়ার, গণফোরাম থেকে পদত্যাগ
মহসিন রশিদ বলেন, তিনি (ড. কামাল) আমাদের কাউন্সিল আয়োজনে সম্মতি দিয়েছেন। কাউন্সিলের পর নতুন কমিটিকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। আবার নির্বাচন কমিশনে পাল্টা চিঠিও দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২০ ধারায় অপরাধ করেছেন। তাই আমরা তাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি।
৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে ড. কামাল পাল্টা চিঠি দেওয়ার ঘটনায় আদালতে একটি রিটও দায়ের করা হয়েছে বলে জানান মহসিন রশিদ। তিনি আরও বলেন, আগামী ১২ মার্চ মোকাব্বির খানের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম কাউন্সিল করলে এবং সেখানে ড. কামাল হোসেন উপস্থিত হলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে মতবিভেদের জের ধরে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে গণফোরাম গড়ে তোলেন ড. কামাল। সে সময় দলটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু।
সময়ের পরিক্রমায় গণফোরামে বিভক্তি দেখা দেয়। ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল দলের বিশেষ কাউন্সিলের পর গণফোরামের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। ওই সময় মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে বাদ দিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার পর গণফোরাম কার্যত দু’টি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরপর দুই অংশের মধ্যে বহিষ্কার, পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে রেজা কিবরিয়া গণফোরাম থেকে সরে দাঁড়ালে সেই অংশের নেতৃত্বে উঠে আসেন মোকাব্বির খান। উভয় অংশই ড. কামালকে নিজেদের নেতা হিসেবে মেনে আসছেন।
এর মধ্যেই মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের অংশটি গত ৩ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে। সেখানে মন্টুকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট সুব্রতকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা হয়। গণফোরাম নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হওয়ায় নবনির্বাচিত কমিটির বিষয়টি তারা চিঠি দিয়ে জানায় কমিশনকে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এই কমিটির সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই জানিয়ে ড. কামাল চিঠি দিলে গণফোরামের বিভক্তি নিয়ে নতুন করে জটিলতা দেখা দেয়। এদিকে মোকাব্বির খানের নেতৃত্বাধীন অংশ ১২ মার্চ কাউন্সিল ঘোষণা করলে তা আবার বিরোধ উসকে দিয়েছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর