মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে চাই— বিহারিদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
৬ মার্চ ২০২২ ১৯:৪৭
ঢাকা: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ আটকে পড়া পাকিস্তানিদের (বিহারি) প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষকে আমরা মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। তারা হয়তো এখানে থাকতে চায়নি। কিন্তু এখন যাবেই বা কোথায়? আর তাদের যে বংশ বৃদ্ধি; তারা তো এখন আমাদের দেশেই জন্মগ্রহণ করেছে। কাজেই তাদের ব্যবস্থাটাও আমাদের করতে হবে।
রোববার (৬ মার্চ) দুপুরে ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১)’ শীর্ষক প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁচকুড়া হাইস্কুল মাঠে যুক্ত ছিলেন।
মুজিববর্ষের অঙ্গীকার- ‘একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না’ উচ্চারণ করার পাশাপাশি ঢাকা শহরে বস্তিবাসী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য উদ্যোগ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কোনো নাগরিক কষ্টে থাকুক সেটা আমি চাই না। কারণ বস্তিতে মানবেতর জীবন-যাপন তারা করে। মানুষের জন্য বাস উপযোগী পরিবেশ না থাকলে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যও নষ্ট হয়।’
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এরা আমাদের দেশের নাগরিক। তাদের সব সুবিধা আমাদের দেখা দরকার। জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তার প্রত্যেকটা নাগরিক যেন অর্থবহ জীবন পায়, সুন্দর জীবন পায় সেটাই আমার লক্ষ্য। আর কিছু না। সেজন্য আমাদের সিদ্ধান্তই হচ্ছে- আমরা তাদের জন্য ঘর করে দেব।’
বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি বিহারিদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু ঢাকা শহরে না, বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বিহারি আছে। তারা পাকিস্তানে যাবে বলে, পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেবে বলে অপশন দিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান কোনোদিন তাদের গ্রহণ করেনি। তাদের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান অনেক টাকা-পয়সাও তুলেছে, অনেক কিছু করেছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তাদের ছেলেমেয়ে হয়ে গেছে, নাতি-পুতি হয়ে গেছে, তাদের বংশ পরম্পরা বেড়ে গেছে। ওই জেনেভা ক্যাম্পের ছোট ছোট জায়গা তারা মানবেতর জীবন-যাপন করে। কিন্তু তারা খুব কর্মঠ। বিভিন্ন কাজ খুব দক্ষতার সঙ্গে করে। যে কারণে আমি চাচ্ছি যে, তাদের জন্য একটা ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। এবং তারা যে যে কাজে পারদর্শী সেই কাজেই যেন তারা নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাও আমাদের করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সেটা হয়তো ঢাকা শহরে ভেতরে ওইটুকু জায়গায় হবে না। যেখানে একটু ভালো এলাকা, ইন্ড্রাস্টি বা কাজ আছে বা তাদের কাজ করার সুযোগ আছে- তাদের জন্য সেই ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে তারা হয়তো ভালোভাবে বাঁচতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষকে আমরা মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। তারা হয়তো এখানে থাকতে চায়নি। তারা এখন যাবেই বা কোথায়? আর তাদের যে বংশ বৃদ্ধি; তারা তো এখন আমাদের দেশেই জন্মগ্রহণ করেছে। কাজেই সেই ব্যবস্থাটাও আমাদের করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘সেইসঙ্গে একটা ভালো খবর দিচ্ছি। ঢাকা শহরে সবার একটা ফ্ল্যাট বা বাড়ি না থাকলে না কি জীবনই থাকে না। জীবন-ই নিরর্থক হয়ে যায়। এই চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে দিতে হবে। আমাদের এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এতে মানুষ খুব সহজেই ঢাকায় কমিউনিকেড করতে পারবে। এক জায়গায় কাজ করে আবার ফেরত যেতে পারবে। সেভাবেই আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেএমসি’র ১০ বিঘার একটা বড় জমি আছে। ওখানে ইতালিয়ান অ্যাম্বাসিসহ আরেকটা অ্যাম্বাসি ছিল। তারা ওখান থেকে সরে যাচ্ছে। বিজেএমসির একটা বাসা ছিল, সেটাও আমি সরিয়ে দিচ্ছি। এই জায়গাটা সম্পূর্ণ খেলার মাঠ হবে। এখানে আর কোনো স্থাপনা নয়, এখানে শুধু মাঠ হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি, গুলশানে জায়গা পাওয়া মুশকিল। কারণ বড়লোকের জায়গা সব, সব পয়সাওয়ালা লোক। কিন্তু গুলশানের ফ্ল্যাট বাড়িগুলো নিয়ে আমার কিছু কমপ্লেইন আছে। কেউ এক ইঞ্চি জায়গা ঠিক মতো ছাড়েনি। দুটো বাড়ির মধ্যে এমন চাপা জায়গা আর ওই জায়গাগুলো ময়লার ডিপো হয়ে থাকে। আমি তো বেশি বের হই না। তারপরও যখন যেখানে যাই একটু দেখার চেষ্টা করি।’
সাবেক সিটি করপোরেশন মেয়র আনিসুল হকের মতো বর্তমান সিটি করপোরেশন মেয়রকেও এ বিষেয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে। এর ভিতরে যতটুকু সন্দুরভাবে করা যায়, সেটা করবেন। ঢাকা শহরটাকে যতদূর সম্ভব সীমিত শক্তি দিয়েও আধুনিকায়ন করা, এটাকে আরও সবুজায়ন করা এবং বসবাস যাতে সুন্দর হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী যে দায়িত্বটা নিয়েছে তা তারা খুব চমৎকারভাবে করতে পারবে। কারণ ২৪ ইঞ্জিনিয়ার্স কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ান এটাও আমার হাতেই সৃষ্টি। তাদের যখনই যে দায়িত্ব দিচ্ছি অত্যন্ত কষ্ট করে করছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে তারা জনগণের পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সবাই মিলে আমাদের এই দেশটাকে গড়ে তুলব। আজকে এখন আর কেউ আন্তর্জাতিকভাবে অবহেলা করতে পারে না। আমরা অন্তত এখন একটা সম্মানজনক অবস্থানে আসতে পেরেছি। এটা আমাদের ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
এ সময় কাঁচকুড়া হাইস্কুল মাঠ প্রান্তে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রমুখ।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম