আরেক জোড়া শিশু ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি
৫ মার্চ ২০২২ ১১:২৫ | আপডেট: ৫ মার্চ ২০২২ ১৪:১৬
ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এবার আরেক জোড়া শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের বাড়ি রংপুরের মাহিগঞ্জ থানার বিহারী গ্রামে।
ভ্যান চালক বাবা মো. খলিল মিয়া ও হালিমা বেগম দম্পতির ঘরে গত দুই মাস আগে যমজ জোড়া শিশু জন্ম নেয়। তাদের প্রথম সন্তান এই জমজ জোড়া শিশু। কিন্তু জন্মের আগে কোনোভাবেই বুঝতে পারেনি যে শিশু দুটি জোড়া লাগানো।
জোড়া শিশুর বাবা খলিল মিয়া জানায়, এটি তাদের প্রথম সন্তান। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর রংপুর সদরের ডেল্টা জেনারেল হাসপাতালে দুপুড় ২টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জমজ দুই শিশুর জন্ম হয়। জন্মের পরই তারা দেখতে পান শিশু দুটি পেট ও বুকের জোড়া লাগানো।
খলিল মিয়া বলেন, ‘শিশু দুটিকে পেয়ে আমরা খুবই খুশি। এখন শিশু দুটিকে আলাদা করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে আনা দরকার।’
জোড়া শিশুকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রংপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী— গত ১ মার্চ বেলা ১২টার দিকে শিশু দুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়।
জমজ শিশুর বয়স দুইমাস ২০ দিন। তাদের নাম রাখা হয় খাদিজা ও আয়েশা।
শুক্রবার (৪ মার্চ) বিকেলে হাসপাতালের পুরনো ভবনের ২য় তলায় ২০৬ নম্বর ওয়ার্ডের গিয়ে কথা হয় জমজ শিশুর পরিবারের সঙ্গে। ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় নানী মাজেদা বেগমের কোলে ঘুমাচ্ছে জোড়া শিশু।
শিশু দুটির চিকিৎসার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে বাবা খলিল মিয়া জানান, তিন বছর আগে হালিমা বেগমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এলাকাতে তিনি ভ্যান চালান। ভ্যান চালিয়ে যে টাকা পাই সেটি দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
তিনি বলেন, ‘জোড়া শিশুকে নিয়ে বড় সমস্যার মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে। শুনেছি এর আগে গাইবান্ধার একটি জোড়া শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছে এই হাসপাতালে। সেই সাহস আমরাও এই হাসপাতালে ছুটে এসেছি। এখানকার চিকিৎসকরা শিশু দুটিকে দেখেছে। উনারা বলেছে আমার বাচ্চা দুটিকে আলাদা করে দেবে। আমি আশা করি বাচ্চা দুটিকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারব।’
জোড়া শিশুটির মা হালিমা বেগম জানান, আয়েশা ও খাদিজার সবকিছুই ঠিক আছে। হাত,পা, পায়খানা ও প্রস্রাবের রাস্তা সবই ঠিক আছে। তবে বুকের কিছু অংশ ও পেটের কিছু অংশও জোড়া লাগানো। শিশু দুটিকে বুকের দুধের পাশাপাশি কৌটার দুধ খাওয়ানো হচ্ছে।
এতে আমাদের অনেক খরচ হয়ে যাচ্ছে। দোয়া করবেন ঢামেক হাসপাতাল থেকে যেন আমার আয়েশা খাদিজাকে সুস্থ করে গ্রামে নিয়ে যেতে পারি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক কাজল বলেন, ‘জোড়া শিশু দুটি ১মার্চ মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শিশু দুটির বুকের কিছু অংশ থেকে পেট পর্যন্ত জোড়া লাগানো। এখন তাদের পরীক্ষা করানো হবে। তাদের শরীরের অবস্থা কেমন সেগুলো দেখা হবে। পরে বোর্ড বসিয়ে রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, আমাদের চিকিৎসকরা সব রোগীকেই প্রাধান্য দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। রংপুরের জোড়া শিশুর যতরকম চিকিৎসা দরকার তার সবকিছুই হাসপাতাল বহন করবে। আগে জোড়া শিশুর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন
ঢামেকে ভর্তির আগেই মারা গেল মাগুরার জোড়া মাথার সেই কন্যাশিশু
চিকিৎসার জন্য হাঙ্গেরি যাচ্ছে জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া
নওগাঁয় জোড়া লাগানো জমজ শিশুর জন্ম
শিশু রাবেয়া-রোকেয়া বাড়ি ফিরল, উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী
সারাবাংলা/একে