পারুর জন্যে কয়েক ছত্র
৩ মার্চ ২০২২ ১৬:৫৪
আফসানা কিশোয়ারের কবিতা পড়ছি সেই দুই হাজার চার সাল থেকে। একজন কবির বয়সের সঙ্গে ধীরে ধীরে পূর্ণতায় পৌঁছানোর প্রক্রিয়ায় পাঠক হিসেবে আমি তার আনন্দিত একজন স্বাক্ষী।
কবি যখন বলেন—
‘প্রেমকে এবং অভ্যাসকে পাশাপাশি রাখতেই
দেখবে ফুরিয়ে যাবে ঘাসফুল বিকেল,
অভ্ররাঙা আবেগ বেলুন।’ (গোপন অক্ষর)
তখন মনে হয় প্রাত্যহিকতা থেকে আমরা দু-চার দিনের যে ছুটি নেই তা দিয়ে মুক্তি আদতে মেলে না। তার চেয়ে কবির ভাষায়—
‘শালিকের হলুদ ঠোঁটে গভীর রোদ হয়ে
তোমার ক্লান্তিগুলো মুছে দেই গোপন
অক্ষরের অভিসারে।’ (গোপন অক্ষর)
এমন করাই শ্রেয়। অভিযোজিত হওয়া যাপিত সময়ের সঙ্গে উত্তম তো বটেই স্বস্তিদায়কও। তাই বলে কি মানুষের অন্তরের যে লেনদেন তা থেমে থাকে এই ইট-কাঠ-পাথরের নাগরিক জীবনে?
থাকে না বলেই সম্ভবত এমন নিষ্প্রভ শহরে দূরে থাকা কোনো মানবীয় কাঠামোর ক্লান্তি ধুয়ে ঝর্ণা হয়ে বৃষ্টি নামে—
‘এই অবাক শহরে আমি জানি
সব নিষ্ঠুর দালান ভিজিয়ে একদিন বৃষ্টি নামবেই,
সেদিন তোমার ঘাড়ের উপরের চুল সরিয়ে যে প্রজাপতি আঁকা ট্যাটু তাতে ঠোঁট রাখব নিশ্চিত,
ঘন হয়ে আসা নিঃশ্বাসে উল্টে যাবে পাশার দান,
তোমার নাকফুলের পাশে নাক ঘঁষে বৃষ্টি জল ও ঘামবিন্দু
শুষে নিতে নিতে তলপেটের ত্বক দশ আঙুলে মেপে নেব;’ (বৃষ্টির নিচে ট্যাটু বিলাস)
এমন চোখের সামনে ভেসে যাওয়া অক্ষরের আহ্বানের পর কোন সেই প্রেমাষ্পদ চুপটি করে বসে থাকতে পারবে!
আফসানা কিশোয়ারের প্রেমের দুরন্ত আলাপ কবিতার বই ‘পুনশ্চঃ ইথারে পারু’র পাতায় পাতায়। ঘৃণা ও দ্বেষের ক্লেদে মানবীয় সম্পর্ক যখন ঝুযছে প্রতিনিয়ত এই বিশুদ্ধ প্রেমের অকাতর প্রকাশ আমাদের কবির সঙ্গে এক ভালোবাসাপূর্ণ গ্রহ নির্মাণে আশাবাদী করে তোলে নিঃসন্দেহে। এবং পাঠক মাত্রই ‘পারু’ হতে চান। তবে কবি দেবদাস হবেন কি না তা তিনি নিজেই ভালো বলতে পারবেন।
পাঠক হিসেবে আমার আগ্রহের জায়গা কবির বিস্ফোরকসম ছোট ছোট অণুকাব্য, চার থেকে আট লাইনে হাইকু স্টাইলে বহু কথা সংক্ষেপে বলে ফেলা। এই বইতে আমরা তেমন বাহান্নটি অনুপদ্য পাই।
‘ভালো মানুষ ভালোবাসে না
একক কাউকে
তাকে কেন যেন দুইন্যার দায়িত্ব
ডাকে হ্যামিলনের বাঁশি ফুঁকে’
একগামীতাকে কটাক্ষ করতে এর চেয়ে বেশি শব্দ কবি ব্যয় করেননি।
‘স্বপ্নে বাস্তবে তুমি
কেন করব আয়ু ক্ষয়
রেপ্লিকা চুমি!’
মন যার কাছে দেওয়া, তার সঙ্গে আত্মিক সম্বন্ধ স্থাপিত হলে অভিনয়ের প্রাত্যহিকতা থেকে বের হয়ে আসার কী তীব্র অঙ্গীকার আমরা মাত্র তিনটি লাইনে পাই!
প্রথমে ভেবেছিলাম ‘উড়োচিঠি’ কেন কবিতার বইয়ে? পড়তে গিয়ে দেখি এ তো কাব্যিক সুরায় ভাসা দীর্ঘ চরণের পদ্যমাত্র!
‘তোমার ফেলে যাওয়া আনমনা নুপুর, ঝরাপাতার আইল থেকে তুলে নিয়ে বুকের উপর রেখে একটানা বোলের রিনঝিন শুনে গেছি আমি কত না সুনসান দুপুর।’ কবিতা নয় এ বাক্য? এর চেয়ে বাঙ্ময় কবিতা আর কি হবে!
বিরহ, আনন্দ, ছন্দ, আশা, বিষাদ, স্নো, নির্বাসন, মহাদেশীয় দূরত্ব সব মিলেমিশে একাকার এক মলাটের ভাঁজে।
উপভোগ্য পাঠের আফসানা কিশোয়ারের বারোতম কাব্যগ্রন্থ বের হয়েছে ২০২২-এর একুশে বইমেলায়।
যেভাবে বইটি সংগ্রহ করবেন
বইয়ের নাম: পুনশ্চঃ ইথারে পারু
প্রকাশক: একাডেমিক প্রেস অ্যান্ড পাবলিশার্স লাইব্রেরি (এপিপিএল)
স্টল নম্বর: ৫৬৫-৫৬৬
প্রচ্ছদ: আবু হাসান
মূল্য: ১৫০ টাকা
বিকাশের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে চাইলে 01401466950 নম্বরে ২০০টাকা পাঠিয়ে ঠিকানা জানাতে হবে, কুরিয়ার করা হবে। কবির পূর্ববর্তী ১৬টি বই বিনামূল্যে ডাউনলোড করে পড়া যাবে www.afsanakishwar.com ওয়েবসাইট থেকে।
সারাবাংলা/পিটিএম