নৌ পথে সক্রিয় আইস-ইয়াবা চক্র: র্যাব
৩ মার্চ ২০২২ ১৫:৫২ | আপডেট: ৩ মার্চ ২০২২ ১৬:৪৬
ঢাকা: ১২ কেজি আইস (ক্রিসটাল মেথ), এক লাখ পিস ইয়াবা এবং দুইটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ পাঁচ মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এদের মধ্যে মো. জসিম উদ্দিন ওরফে জসিম (৩২), মকসুদ মিয়া (২৯), মো. রিয়াজ উদ্দিন (২৩), শাহিন আলমকে (২৮) মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া এবং মো. সামছুল আলমকে (৩৫) কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব বলছে, আইস মিয়ানমার থেকে দেশে ঢোকে নৌ পথে; আবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও আইস পাঠানো হয় নৌ পথেই।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে পাঁচ কেজি আইসসহ দুই জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। তারই সূত্র ধরে পরবর্তীতে আরও বেশ কয়েকজনকে আইসসহ গ্রেফতার করা হয়। আইস সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে নজরদারি অব্যাহত রাখে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে র্যাব গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় র্যাব-১৫ ওই সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে আইস, ইয়াবা ও অস্ত্র ছাড়াও ৯ রাউন্ড গোলাবারুদ, বার্মিজ সিম কার্ড, বার্মিজ মুদ্রা, মোবাইল ফোনসহ নগদ এক লাখ ৬৪ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা মাদক চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ওই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতাররা মিয়ানমারের মাদকচক্রের যোগসাজসে দেশে অবৈধ আইস কারবারের সঙ্গে জড়িত হয়। গ্রেফতার জসিমের নেতৃত্বে মাদক সিন্ডিকেটের কার্যক্রম চলে। দেশে ওই চক্রের ১২-১৫ জন সদস্য রয়েছেন। এই চক্রটি মূলত সোনাদিয়াকেন্দ্রিক। ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, বরিশাল ইত্যাদি এলাকায় বিভিন্ন কৌশলে মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা অবৈধ মাদক আইস এবং ইয়াবা পৌঁছাত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক সময়ে তারা নৌ পথকে প্রাধান্য দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করত।
র্যাব জানায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে ট্রলারের মাধ্যমে মিয়ানমারের মাদক চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশের এই চক্রের কাছে ইয়াবা ও আইসের চালান হস্তান্তর করে। সাগরপথে মাদকের চালান গ্রহণ করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর জন্য এ চক্রের সদস্যরা ২০-২৫ দিন পর্যন্ত জেলের ছদ্মবেশ নিয়ে গভীর সমুদ্রে থাকে। মালামাল নিয়ে সুবিধাজনক সময়ে তারা সোনাদিয়া দ্বীপে চলে যায়। সেখান থেকে ইয়াবা-আইসের চালান সোনাদিয়া এবং মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রটি সোনাদিয়া থেকে দুইটি বোটে নোয়াখালীর হাতিয়াতে আইস-ইয়াবার চালান নিয়ে যাওয়া হত। এভাবে বহন করা মাদকের চালান হাতিয়ায় পৌঁছলে চক্রটির হাতিয়ার সদস্যরা মাদক সংরক্ষণ করেন।
সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মেঘনা হয়ে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া বা ঢাকার আশেপাশে অথবা সুবধিাজনক স্থানে পাঠানো হত মাদক। ঢাকা ছাড়াও বরিশাল-পটুয়াখালী অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করত তারা। মাদকের চালান মুন্সিগঞ্জে পৌঁছানোর পর রাজধানীর একটি চক্র আইস-ইয়াবার চালান নিয়ে সড়কপথসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কৌশলে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসতো, জানায় র্যাব।
গ্রেফতার জসিম দীর্ঘ ৫-৭ বছর ধরে লবণের ব্যবসার আড়ালে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। সে মূলত মিয়ানমারের মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমন্বয় করত। জসিমের নেতৃত্বে চক্রটি প্রথমে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসতো পরবর্তীতে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ক্রিস্টাল আইসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর থেকে তারা মিয়ানমার থেকে ক্রিস্টাল আইস নিয়ে আসাও শুরু করে। গ্রেফতারকৃত জসিম রাজধানী হতে কয়েকটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেতনানাশক মাদক সিডাকটিভ ইনজেকশন সংগ্রহ করে নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতো।
গ্রেফতার শাহীন আলম জসিমের অন্যতম প্রধান সহযোগী। সে সাগর ও নৌ পথে মাদক পরিবহনের মূল দায়িত্ব পালন করে। তার বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মানবপাচার ও মারামারি সংক্রান্ত ২টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার অপর সদস্য শামছুল আলমের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় অস্ত্র ও মারামারি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত মকসুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতি সংক্রান্ত ৬টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত শাহীন, সামসু ও মকসুদ মাদক বহন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করত। গ্রেফতার রিয়াজ উদ্দিন মাদক পরিবহনে নজরদারির জন্য এস্কর্ট বোটে অবস্থান করতো, জানায় র্যাব। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/একেএম