‘মানুষের নয়, ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে আওয়ামী লীগের’
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৫৯ | আপডেট: ১ মার্চ ২০২২ ০০:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে- মন্ত্রীদের এমন বক্তব্য নাকচ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি, আওয়ামী লীগের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, আওয়ামী লীগের চামচাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর পলোগ্রাউন্ড সংলগ্ন ওয়াজিউল্লাহ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ আজ অদ্ভূত দেশে পরিণত হয়েছে। অদ্ভূত দেশের সরকারের অদ্ভূত আচরণ। এখানে ডিমের হালি ৪০ টাকা, ১৮০ টাকা তেল, ১২৬০ টাকা গ্যাসের চুলা, ৭০ টাকা চাল, ১২০ টাকা ডালের দাম। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে আর সরকার বলছে- দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়নি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে গেছে। অথচ আমরা দেখি না মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, আমরা দেখি আওয়ামী লীগের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আওয়ামী লীগের চামচাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আওয়ামী লীগের মফস্বলের ছাত্রনেতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই হাজার কোটি টাকা পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গেছে, তখনই এভাবে লুটপাট করেছে।’
খালেদা জিয়ার আমলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন একটি সুন্দর বাংলাদেশ ছিল। দ্রব্যমূল্য বাড়েনি, গুম-খুন ছিল না। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হতো না। অথচ এই প্রধানমন্ত্রীর সময় গুম-খুন হচ্ছে। দেশটাকে লুটপাট করে খাচ্ছে। দেশের মানুষ কথা বলতে পারে না। কথা বললে গুম হয়ে যায়, খুন হয়ে যায়। এই প্রধানমন্ত্রী থাকলে দেশে কোনোদিন গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। আর গণতন্ত্র ফিরে না এলে আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব থাকবে না।’
‘বেগম খালেদা জিয়া তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনগণের ভোটের মাধ্যমে। আজকের প্রধানমন্ত্রী তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন জনগণের ভোটচুরি করে। এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো মায়া-দয়া নেই। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। আমি ভোট দিতে পারি না, ভুলে গেছি কীভাবে ভোট দিতে হয়। যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে, এদেশের মানুষ আর কোনোদিন ভোট দিতে পারবে না।’
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘মাত্র দুই কোটি টাকার জন্য সাজা দেওয়া হয়েছে। সরকারকে চ্যালেঞ্জ দিতে চাই, দুই কোটি টাকা বেগম জিয়ার অ্যাকাউন্টে ছিল, এটা যদি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আর রাজনীতি করব না। দুই কোটি টাকা আট কোটি টাকা হয়ে গেছে। একটা টাকাও তসরুফ হয়নি। আসলে বিএনপির নেত্রীর অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা, বিএনপির অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা। এই জনপ্রিয়তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ আর কোনোদিন রাজত্ব করতে পারবে না। এ কারণে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গুম-খুন।’
আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দল মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘মন্ত্রীরা বলছেন, দেশে নাকি কোনো গুম-খুন হয়নি। গুম-খুন যদি না-ই করে থাকেন, তাহলে স্যাংশন দেওয়া হলো কেন? গণতন্ত্রকে হত্যার দায়ে, মানুষ খুনের দায়ে, গুমের দায়ে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। আজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে- আপনারা চোরের দল, আপনারা লুটের দল, আপনারা খুনির দল, আপনারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর দল।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপানারা আমাদের মিছিলে হামলা করেন, মিটিংয়ে হামলা করেন। কিন্তু ক্ষমতা হারালে তারা যখন পালাবে, আপনাদের কী সাথে নিয়ে যাবে? সুতরাং সরকারের অন্যায় আদেশ নয়, রাষ্ট্রের নিয়মনীতি মেনে চলেন।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যখন নির্বাচন হবে, সেদিনই বাংলার জনগণ ভোট দিতে পারবে। ইনশাল্লাহ বিএনপি সেদিন সরকার গঠন করবে। বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না।’
নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান এবং নগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম