Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজ শুধু প্রাঙ্গণের গল্প

আসাদ জামান
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:০১ | আপডেট: ১ মার্চ ২০২২ ০০:১৩

ফাইল ছবি: বাংলা একাডেমি

অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিন সোমবার (২৮ ফ্রেব্রুয়ারি)। প্রথা অনুযায়ী পয়লা ফেব্রুয়ারি শুরু হলে আজই হতো মেলার শেষ দিন। শেষবেলার বেচা-বিক্রি সেরে রাত ১০টার মধ্যেই স্টল-প্যাভিলিয়ন গোছাতে হতো সবাইকে। কারণ, মেলার জন্য গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ ও নিরাত্তার যে ব্যবস্থা, সেটারও যবনিকা টানতে হয় যথা সময়ে। নইলে যে খরচা বাড়ে!

কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বিলম্বে শুরু মেলা এখন ভরা যৌবনে। সে কারণে গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে পিঁপড়ার সারির মতো মেলার উভয়াংশে দর্শনার্থীদের প্রবেশ। মুহূর্তের মধ্যে প্রাঙ্গণ (বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ) এবং উদ্যান (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লোকে লোকারণ্য। নাহ! আজ আর উদ্যানের গল্প নয়, আজ শুধু প্রাঙ্গণের গল্প।

বিজ্ঞাপন

যেবার অমর একুশে বইমেলার কিয়দংশ মানুষের চাপ এবং ধাক্কায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঠাঁই নিল, সেবার অনেকেরই ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। কারও কারও চোখের কোণে অশ্রুবিন্দু জমেছিল এই ভেবে যে, ‘মেলা আর জমবে না’। কারণ, মায়ের সঙ্গে সন্তানের যে সম্পর্ক, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের সঙ্গে অমর একুশে বইমেলারও সেই সম্পর্ক।

কেউ কেউ বলছিল, মোগল ও ইউরোপীয় শৈলীর সংমিশ্রণে তৈরি ঢাকার ঔপনিবেশিক আমলের বিখ্যাত স্থাপনা বর্ধমান হাউজের কোল থেকে বইমেলাকে রাস্তার ওপারে পাঠালে এর কৌলিন্য নষ্ট হবে। কারও কারও ধারণা ছিল উল্টো। তারা ভেবেছিল- বড় বড় প্রকাশনীর স্টল ও প্যাভিলিয়ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলে গেলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বহু মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনার স্বাক্ষী ‘বর্ধমান হাউজ’ তার জৌলুশ হারাবে। কারণ, সারাবছর সাধারণ মানুষের আনাগোনা না থাকলেও মেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমির সদর দফতর বর্ধমান হাউজের আঙিনা মানুষের পদভারে মুখরিত হয়, জাগ্রত হয়।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু না, কোনো পক্ষের ধারণা বা সংশয় সত্য হয়নি। সোমবার মেলার একাডেমি প্রাঙ্গণাংশে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকার নবাবদের হাতে নির্মিত সুজাতপুর প্যালেস তথা অবিভক্ত বাংলার বর্ধমানের মহারাজা স্যার বিজয় চাঁদ মাহতাবের বাসভবন ‘বর্ধমান হাউজ’ মোটেই জৌলুস হারায়নি। একা হয়ে যায়নি মনীষী রমেশচন্দ্র মজুমদার ও কাজী মোতাহার হোসেনের প্রিয় এই বাসভবনটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য বর্ধমান হাউজ তথা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত।

শুধু তাই নয়, বর্ধমান হাউজের নিচতলার যে কক্ষগুলো ‘জাতীয় লেখক ও সাহিত্য জাদুঘর’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেখানে কৌতুহলী মানুষের ভিড়। বাংলাদেশের প্রথিতযশা লেখক-সাহিত্যিকের কালজয়ী সৃষ্টির অনুলিপি, আলোকচিত্র এবং তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র খুঁটে, খুঁটে দেখছেন। কেউ কেউ উপরের তলা দু’টিতে উঠে সেলফিবাজিতে মেতে আছেন। আর বর্ধমান হাউজের কোলঘেঁষে যে উন্মুক্ত মঞ্চ সেখানে বিশ্রাম নিচ্ছেন পুলিশের প্রায় অর্ধশত সদস্য।

অমর একুশে বইমেলার জন্ম ইতিহাসের সঙ্গে চিত্তরঞ্জন সাহা এবং তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান মুক্তধারার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের কারণেই হয়তো সব প্রকাশনীকে একাডেমি প্রাঙ্গণের বাইরে পাঠালেও মুক্তধারাকে রেখে দেওয়া হয়েছে আগের জায়গায়। নজরুল মঞ্চের সামনে এক ইউনিটের স্টল দিয়েছে মুক্তধারা। তবে জায়গা ধরে রাখতে পারলেও জৌলুশ ধরে রাখতে পারেনি চিত্তরঞ্জন সাহার মুক্তধারা।

মুক্তধারার ম্যানেজার কামরুজ্জামান ও ইউসুফ তুহিনের দেওয়া তথ্য মতে, কাগজে কলমে মুক্তধারার বর্তমান কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহার স্ত্রী বিজলী প্রভা সাহা হলেও মূলত এটি এখন দেখভাল করছেন শ্যালকপুত্র জহরলাল সাহা। তিনিও দেশে থাকেন না, থাকেন কানাডায়। সেখান থেকে যে দিক-নির্দেশনা দেন, সে অনুযায়ীই চলে মুক্তধারা।

মুক্তধারার স্টলে রাখা বইগুলো নেড়ে চেড়ে মনে হলো- নতুন কোনো বই তারা আনেনি। বহুকাল আগে প্রকাশিত সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘তাজউদ্দীন আহমেদের রাজনৈতিক জীবনী’, আবু ইসহাক ইভানের ‘রবীন্দ্রনাথ কবি ও কাব্য’, রামেন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্বাচিত বক্তব্যের সংকলন ‘Bangladesh my Bangladesh’, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘বাঙালীর ইতিহাস’ বইগুলোই পুনঃমুদ্রণ করা হয়েছে।

বিক্রয় প্রতিনিধি ইউসুফ তুহিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন আর নতুন বই খুব একটা প্রকাশ করা হয় না। পুরোনো বইগুলোই রি-প্রিন্ট করা হয়। মুক্তধারাকে যারা ভালোবাসে, তারা এসে এসব পুরোনো বইগুলো খোঁজ করে। রামেন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্বাচিত বক্তব্যের সংকলন ‘Bangladesh my Bangladesh’ বইটা এবারও ভালো চলছে।’

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এবারের বইমেলায় একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানের ১৪২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, এসব স্টল ও প্যাভিলিয়নের বেশিরভাগই সরকারি, বে-সরকারি, শ্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে (এনজিও) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, জয়বাংলা একাডেমি, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর (ডিএফপি), জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, এটুআই ডিজিটাল বাংলাদেশ তথ্যকেন্দ্র, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর অন্যতম।

এসব প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন ও স্টলের মধ্যে দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের প্যাভিলিয়নটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুষ্টিয়া কুঠিবাড়ির আদলে তৈরি এ প্যাভিলিয়নটি দেখে বোঝার উপায় নেই এটি আসল নাকি অনুকৃতি। দ্বিতলবিশিষ্ট কুঠিবাড়ির এই অনুকৃতি তৈরিতে হার্ডবোড, কাঠ, বাঁশ, পেরেক, আঠা, রঙ-এর পাশাপাশি বৈদ্যুতিক লাইটও ব্যবহৃত হয়েছে।

প্যাভিলিয়নের কর্তব্যরত প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের প্রকাশনা সহকারী মো. মুজাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. আতাউর রহমান এবং এডিশনাল ডিরেক্টর মো. মহিদুল ইসলামের আইডিয়া থেকে কুঠিবাড়ির এই অনুকৃতি তৈরি করা হয়েছে। মূলত, প্রতিবছরই মেলায় কোনো কোনো প্রত্ননিদর্শনের অনুকৃতি বানানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার কুঠিবাড়ির অনুকৃতি বানানো হয়েছে।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

টপ নিউজ বইমেলা ২০২২

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর