Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জমজমাট বইমেলায় বই মেলা ভার!

আসাদ জামান
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২০:৩২ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:৫১

‘এক ড্রইংরুম-বিহারিণী গিয়েছেন বাজারে স্বামীর জন্মদিনের জন্য সওগাত কিনতে। দোকানদার এটা দেখায়, সেটা শোকায়, এটা নাড়ে, সেটা কাড়ে, কিন্তু গরবিনী ধনীর (উভয়ার্থে) কিছুই আর মনঃপূত হয় না। সব কিছুই তার স্বামীর ভাণ্ডারে রয়েছে। শেষটায় দোকানদার নিরাশ হয়ে বললে, ‘তবে একখানা ভাল বই দিলে হয় না?’ গরবিনী নাসিকা কুঞ্চিত করে বললেন, ‘সেও তো ওঁর একখানা রয়েছে।’

মোটামুটি যাদের পাঠাভ্যাস আছে, তারা এতক্ষণে নিশ্চয়-ই বুঝতে পেরেছেন উপরের গদ্যাংশটুকু কোথা থেকে ধার করা হয়েছে। আর যারা বুঝতে পারেননি, তারা একটু ভাবতে থাকুন। আমিও সবিস্তারে বলতে থাকি ধার-দেনার প্রয়োজন পড়ল কেন?

বিজ্ঞাপন

অমর একুশে বইমেলার ১৩ তম দিন রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) উত্তর-পশ্চিম কোণের প্রবেশ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়ন পর্যন্ত আসার পর চোখ আটকে গেল এক ষোড়শীর ফটোশুটে। এ আর নতুন কী? না, নতুন কিছু নয়। তবে এই ফটোশুটের বিশেষত্ব হলো- ষোড়শীর হাতে একখানা বই ছিল! আর ওই বইটার পাতা উল্টিয়ে পড়ার ভঙ্গিমায় ফটোশুট করছিলেন তিনি।

মহৎ এই কাজে তাকে সাহায্য করছিলেন তার তিন বন্ধু। যাদের হাত ছিল বইশূন্য। অর্থাৎ চারজন বন্ধুর ‘একখানা রয়েছে’- যা সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে উল্লেখিত ঘটনার মতোই।

চার বন্ধু মিলে একখানা বই নিয়ে ফটোশুটে মেতে ওঠা এক বিশেষ ইঙ্গিত বহন করে। এটা যেন পুরো বইমেলার প্রতীকী চিত্র। হয়তো বা মেলা শেষে বেচা-বিক্রির হিসাব মেলালে দেখা যাবে- দশ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে! কিন্তু একবার ভাবুন তো- ৪২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই ১০ কোটি টাকা ভাগ করে দিলে প্রতিজনের ভাগে কত টাকা পড়ে। কোনো অবস্থাতেই তা ২ লাখ ৩৮ হাজার টাকার বেশি নয়। অর্থাৎ ত্রিশ দিনের বেচা-বিক্রি ২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। প্রতি দিন গড়ে ৮ হাজার টাকার মতো। অধিকন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে মোট বিক্রির সিংহভাগ যায় হাতে গোনা কয়েকটি বড় প্রকাশনীর ঝুড়িতে।

বিজ্ঞাপন

বৃক্ষশোভিত বিস্তৃত পরিসরে দেশের অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি বলয় স্বাধীনতা যাদুঘরের জলাধার ঘেষা জমজমাট এই বইমেলায় বইশূন্য হাত বড়ই বেমানান লাগে। মেলায় আসা মানুষগুলো যেন শুধুই দর্শনর্থী- পাঠক বা বইয়ের ক্রেতা নন। অথবা বই কিনে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকি নিতে চান তারা।

অথচ ‘বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয়নি। বই কেনার বাজেট যদি আপনি তিনগুণও বাড়িয়ে দেন, তবু তো আপনার দেউলে হবার সম্ভাবনা নেই। মাঝখান থেকে আপনি ফ্রাঁসের মাছির মত অনেকগুলি চোখ পেয়ে যাবেন, রাসেলের মত এক গাদা নূতন ভুবন সৃষ্টি করে ফেলবেন’- এমন পরামর্শ বহুকাল আগে বাঙালিকে দিয়ে গেছেন বাংলা সাহিত্যে রম্যবোধের স্রষ্টা সৈয়দ মুজতবা আলী।

তার মানে এই নয় যে, মেলায় আসা প্রতিটা মানুষ ব্যাগ ভরে বই কিনবে। আবার এটাও নয় যে, বইমেলা থেকে সবাই খালি হাতে বাসায় ফিরবে। তাহলে চাওয়াটা কী? চাওয়াটা হলো মেলায় আসা মানুষদের মধ্যে মোটামুটি একটা অংশ বই কিনবে, বইয়ের ঘ্রাণ শুকতে শুকতে বাসায় ফিরবে। বই পড়বে, মন ও মননে বইকে ধারণ করবে।

এই চাওয়ার সাথে পাওয়ার যোগসূত্র খুঁজতে রোববার মেলার বর্হিগমন পথে দাঁড়িয়ে ১০০ জনকে পর্যবেক্ষণ করে মাত্র সাত জনের হাতে বই পাওয়া গেছে। বাকি ৯৩ জন খালি হাতেই মেলা থেকে বেরিয়েছেন। এই জরিপে সময় লেগেছে সাড়ে ১৪ মিনিট। ছুটির দিন হলে চিত্র হয়তো ভিন্ন রকম হতো।

কথা হয় মেলা থেকে খালি হাতে ফেরা সাইদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও জাকির হোসেনের সঙ্গে। এ প্রতিবেদককে তারা বলেন, ‘মেলায় আসলেই বই কিনতে হবে, বিষয়টি এ রকম নয়। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, তাই মেলায় ঢুঁ মেরে গেলাম। বই কেনার প্রয়োজন হলে অন্য সময় প্রস্তুতি নিয়ে আসব।’

‘আপনাদের তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, শুধু মানুষের পেছনে লেগে থাকেন’- বলেন ইন্দিরা রোড থেকে মেলায় আসা জাকির হোসেন।

বই বিক্রির বাস্তব চিত্র সম্পর্কে ধারণা নিতে মেলার উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত ৪৫৯ (দ্বৈতা প্রকাশ), ৪৬১ (দেশ পাবলিকেশন্স) এবং ৫০৩ (সুচয়নী পাবিলশার্স) স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে।

দেশ পাবলিকেশন্সের বিক্রয় প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিন ইউনিট নিয়ে আমাদের এই স্টল আমরা সাজিয়েছি। বেশ কিছু নতুন বইও আমরা মেলায় এনেছি। কিন্তু পাঠক মিলছে না। বেচা-বিক্রির অবস্থা খুবই খারাপ। মেলা দেখে জমজমাট মনে হলেও বই কেনার লোক খুব কম।’

সুচয়নী পাবলিশার্সের বিক্রয় প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বই বিক্রি মোটামুটি। স্টলে প্রচণ্ড ভিড় থাকলেও বেশির ভাগ মানুষ বই দেখে ফিরে যায়। বই কিনতে আসা লোকের সংখ্যা খুবই কম।’

তবে আশার কথা শোনালেন দ্বৈতা প্রকাশের কর্ণধার শাহীদ মাহমুদ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত বাচ্চাদের জন্য বই প্রকাশ করি। আমাদের বিক্রি খুবই ভালো। যারা ছোট বাচ্চা নিয়ে মেলায় আসেন, তারা বই কিনেই ঘরে ফেরেন।’

বিষয়টা হয়তোবা ঠিক। ছোটদের মন রক্ষায় বড়রা বই না কিনে পারেন না। কিন্তু মেলার ১৩তম দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানাংশে ঘণ্টাকাল ঘোরাফেরার পর যেটা মনে হয়েছে, জমজমাট এই বইমেলায় দর্শনার্থীদের হাতে বই মেলা ভার।

ছবি: সুমিত আহমেদ, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

টপ নিউজ বইমেলা ২০২২

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর