Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গণ-পেনশনের নামে লুটের কায়দা-কানুন করছে সরকার’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৩২ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০১:২৪

ঢাকা: গণ-পেনশনের নামে সরকার আরেকটা ‘লুটের কায়দা-কানুন’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই অভিযোগ করেন। ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি’ এবং ‘উপজেলা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি’র দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে একটা লুটেরার দলে পরিণত হয়েছে। সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, এখন নাকি গণ-পেনশন দেবে। আমরা যেটা বুঝতে পারছি- এটা আরেকটা লুটের কায়দা-কানুন তারা করতে যাচ্ছে। মানুষের কাছ থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে নেবে। ৬০ বছর পরে দেবে। এরপর মধ্যে মারা গেলে আর ফেরত পাবে না। তারা পরিষ্কার করে কিছু বলছে না। যদিও এটা পাস হয়নি কিন্তু এই প্রস্তাব তারা নিয়ে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে কী করে মানুষের পকেট কাটা যায়, সেই ব্যবস্থা তারা করেছে।এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে লুটপাট করছে না। তারা মানুষকে বিপদে ফেলছে। আজকে সমস্ত বাংলাদেশে একটাই সমস্যা। সমস্যা হচ্ছে-আওয়ামী লীগ। মানুষ এখন আওয়ামী লীগকে তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করতে শুরু করেছে। মানুষ গালিও দেয়- এই তুই মানুষ না আওয়ামী লীগ।’

দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন প্রতিদিন যে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে ট্রাকে করে সেখানে লাইন লম্বা থেকে লম্বা হচ্ছে। সেই লাইনে মধ্যবিত্তরাও যাচ্ছেন। কারণ তাদেরও প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসের দাম প্রতিবছরে ২/৩ বার করে বাড়ানো হচ্ছে, বিদ্যুতের দাম ধাপে ধাপে প্রতি বছর ২/৩/৪ বার করে বাড়ানো হচ্ছে, আজকে পানির দাম বার বার করে বাড়ানো হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

‘এর কারণ একটাই- এই সরকার তার নিজের এবং সমস্ত প্রশাসন যন্ত্রকে দুর্নীতির একটা স্বর্গ রাজ্য বানিয়ে দিয়েছে। পানির দাম বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে যে, ওয়াসার যে এমডি আছেন তাকে তিনবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার বেতন কত জানেন? কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। এই যে অপচয়, এই যে একজন বিশেষ লোককে দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া সেই কাজটা করছে সরকার। আজকে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি একটা সর্বগ্রাসী ব্যধিতে পরিণত হয়েছে’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘চালের দাম বাড়ছে কেন? উৎপাদনের তো ঘাটতি আছে। প্রতিবছর সরকারকে ৫৭ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে। মিথ্যা কথা বলেছে তারা, মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। বিদ্যুতের দাম কেন বাড়াতে হচ্ছে। যে চুরি তারা করেছে, কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট অথবা বিদ্যুতের যন্ত্রসামগ্রী আমদানি করতে যা ব্যয় করছে সেখানে এত বেশি পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে যে দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকছে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, গণতান্ত্রিক লড়াই করেছে-এটা সত্য। তাদেরকে আমি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই, এই গুম করে, খুন করে, হত্যা করে, নির্যাতন করে কোনো দিন জনগণের আন্দোলনকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। কোনো দিন যায়ও নি।’

জনগণের অর্থ ব্যয়ে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশের একটি সংস্থা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে সেনশন দিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এটাকে দূর করার জন্য তারা (সরকার) লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। মাসে ২০ হাজার ডলার দিতে হবে তাদের। এতদিন তো লম্বা লেকচার মারলেন, অনেক কথা বললেন। এখন কেন এই লবিস্ট নিয়োগ করছেন।’

বিজ্ঞাপন

‘কারণ একটাই যে, জনগণের টাকা, ট্যাক্সের টাকা তা দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে জনগণের ওপর নির্যাতন করা, গুম করা, খুন করা তাকে হালাল করছেন, তাকে আড়াল করতে চাইছেন। ওই যে কয় না- ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, সেই ধর্মের কল বাতাসে নড়ছে। এখন চর্তুদিকে ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। আর উপায় নাই। যতই ওলট-পালট করেন, যতই লবিস্ট নিয়োগ করেন আর যতই পাল্টা ডিগবাজী দিতে থাকেন, সুন্দর কথা বলেন লাভ নেই’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সরকারের অপশাসন, এই সরকারের দুর্নীতি, এই সরকারের অত্যাচার, এই সরকারের সিন্ডিকেট আজকে জনগণের নাভিশ্বাসের কারণ হয়েছে। আজকে ট্রাকের থেকে খাদ্য ক্রয়ের জন্য হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছে, মধ্যবিত্ত মানুষ গরীব হয়ে গেছে, দারিদ্র্যের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘হঠাৎ দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতি স্বাভাবিক নয়। লাফিয়ে লাফিয়ে তেলের দাম বাড়ছে, চালের দাম বাড়ছে। কী বাড়ছে না? তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এদেশের মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নাই। হয় গুলি খেয়ে মরতে হবে, না হয় জেলে গিয়ে মরতে হবে, নয় তো এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণে আমাদের মাঠে নামতে হবে।’

ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ইউনুস মৃধার সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, শ্যামা ওবায়েদ, নাসির উদ্দিন অসীম, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, আজিজুল বারী হেলাল, আবুদস সালাম আজাদ, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, জাসাসের হেলাল খান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজমুদার, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্র দলের ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/একেএম

গণ-পেনশন টপ নিউজ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন

বাসচাপায় ২ কলেজছাত্র নিহত
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর