বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জেব্রার মৃত্যুতে মামলা করবে মন্ত্রণালয়
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৫৩
ঢাকা: গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত মাসের বিভিন্ন সময়ে ১১টি জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হবে। এছাড়াও, তদন্ত কমিটির ২৪টি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব মো. মোস্তফা কামালসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে জেব্রা মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ঘাসে অতিরিক্ত নাইট্রেটের প্রভাব ও মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে জেব্রাগুলোর মৃত্যু ঘটেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
কমিটির তদন্তে বলা হয়, গত ২ ও ৩ জানুয়ারি যে তিন জেব্রা মারা যায়, তা ধামাচাপা দেওয়া এবং আঘাতজনিত কারণ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে মৃত তিনটির জেব্রার পেট ধারাল কিছু দ্বারা কাটা হয়েছে। কে বা কারা ওই মৃত তিনটি জেব্রার পেট কেটেছে তা উদঘাটন করার জন্য নিবিড় তদন্তের প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কর্তব্যরত ভেটেরিনারি অফিসারের চাহিদা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাফারি পার্ক মেডিকেল বোর্ডের সভা আহবান করবেন বলে বিধান থাকা সত্ত্বেও এতগুলো জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরও জরুরিভিত্তিতে মেডিকেল বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়নি। যা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার শামিল। কোনো প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জিডি করার প্রচলন থাকলেও এক্ষেত্রে থানায় কোনো জিডি করা হয়নি, যা রহস্যজনক।
ওই ঘটনায় গত ২২ জানুয়ারি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব সাফারি পার্ক পরিদর্শন করেন। ওই তারিখ পর্যন্ত ৮টি জেব্রা মারা গেলেও প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি কর্মকর্তা বা কর্মরত অন্য কেউ জেব্রার মৃত্যুর ঘটনা পরিবেশ সচিবকে অবহিত করেননি। এতে প্রতীয়মান হয় প্রথম থেকেই জেব্রা মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য ও সরকারি কর্মচারী আচরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যা দায়িত্ব অবহেলার শামিল। তদন্ত কমিটির এ সকল মতামত বিবেচনায় নিয়ে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ফৌজদারি মামলা ও বিভাগীয় মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুরের প্রাণী মৃত্যুরোধ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য করণীয় বিষয়ে তদন্ত কমিটির সুপারিশকৃত ১১টি স্বল্পমেয়াদী, ৪টি মধ্য-মেয়াদী এবং ৯টি দীর্ঘ মেয়াদি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, জেব্রা মৃত্যুর ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন, দায়-দায়িত্ব নিরূপণ ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ দেওয়ার জন্য পরিবেশ, বন পরিবর্তন জলবায়ু মন্ত্রণালয় গত ২৬ জানুয়ারি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়। কমিটি গত ৩০ জানুয়ারি ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পরবর্তীতে কমিটিতে আরও দুজন বিশেষজ্ঞ সদস্য এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জেলা প্রশাসক, গাজীপুরের প্রতিনিধি হিসেবে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে নেওয়া হয়। তাছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিকে কাজের সহায়তা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য ৩ জন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আর ৮ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি এবং ৩ সদস্য বিশিষ্ট সহায়ক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ১২ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ ১৯ ফেব্রুয়ারি কমিটির সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
তদন্ত কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের মেয়াদ আরো কার্যদিবস বৃদ্ধি করা হয়। তদন্তের স্বার্থে কমিটি, ১. প্যাথলজি বিভাগ ও ফার্মাকোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), ২. কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষনাগার (সিডিআইএল), ৩. কোয়ালিটি কন্ট্রোল (কিউসি) ল্যাব, প্রাণি সম্পদ অধিদফতর, ৪. রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনিষ্টিউিট(আইইডিসিআর), ৫. কেমিক্যাল ল্যাব, বাংলাদেশ পুলিশ ও সিআইডি, এবং ৬. মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে (এসআরডিআই) রাসায়নিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে। সার্বিক তদন্ত শেষে ২০ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
সারাবাংলা/জেআর/এনএস