সৎ ও সাহসী হওয়াই শরীফ উদ্দিনের অপরাধ?
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:৫৮ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:৫৯
দুর্নীতির মৌচাকে ঢিল ছুড়ে মহাবিপদে পড়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন এবং প্রাণনাশের হুমকির মুখে আছেন। গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, চাকরিচ্যুত হওয়ার পর শরীফ উদ্দিন বলেছেন, ‘আমি এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমি রাষ্ট্রের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি অন্যায়ের শিকার, জুলুমের শিকার। আমি সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।’
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুদক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০০৮–এর ৫৪(২) বিধি অনুযায়ী দুদক চেয়ারম্যান মো. মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করেন। তিনি সর্বশেষ পটুয়াখালী দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তাকে চাকরিচ্যুত করার ঘটনায় দুদকের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় তার সহকর্মীরা মানববন্ধন করেছেন।
পটুয়াখালীতে মানববন্ধনে দুদক কর্মচারী আইন ৫৪ (২) ধারাকে বিতর্কিত আইন দাবি করে, এটি বাতিলসহ শরীফ উদ্দিনকে চাকরিতে বহালের দাবি জানান জেলা দুদক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাঁরা বলছেন, শরীফ উদ্দিন সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দুর্নীতি দমনে যে সংস্থার ভূমিকা পালন করার কথা, সেই সংস্থা থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান নেওয়ার কারণে একজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার ঘটনাটি অনভিপ্রেত। এতে দুর্নীতি দমন না হয়ে দুর্নীতিবাজরাই উৎসাহিত হবে।
জানা গেছে , শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, রোহিঙ্গাদের ২০টি এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা করেন। এতে তিনি অনেকের ‘চক্ষুশূল’ হয়ে উঠেছিলেন। গত বছরের ১৬ জুন তাকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়।
শরীফ উদ্দিন জানিয়েছেন, পটুয়াখালীতে বদলি হলেও তার পরিবার চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকে। তিনি ছুটিতে পটুয়াখালী থেকে চট্টগ্রামে যেতেন। পটুয়াখালীতে বদলির পরও তাঁকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল। হুমকি পেয়ে গত ৩০ জানুয়ারি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় তিনি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে শরীফ উদ্দিন অভিযোগ করেন, ৩০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুই ব্যক্তি তাঁর বাসায় এসে তাঁকে হুমকি দেন। বলেন, তিনি দুদকে কীভাবে চাকরি করেন, তা তারা দেখে নেবেন। এ ছাড়া তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়।
বিষয়টি তিনি তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছিলেন। তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে জীবননাশের হুমকি পাওয়ার ১৬ দিনের মাথায় তাকে চাকরি থেকে অপসারণের ঘটনাটি অস্বভাবিক। সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত থাকার পরও আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দেওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের পরিচালকসহ ইসির চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন শরীফ উদ্দিন।
একইভাবে অবৈধভাবে গ্যাসসংযোগ প্রদান করায় সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলামের (বিএসসি) বড় ছেলে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন শরীফ উদ্দিন।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়েসংলগ্ন কলাতলী বাইপাস রোড এলাকায় পিবিআই অফিস তৈরির জন্য এক একর জমি অধিগ্রহণে জালিয়াতি, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে খালাসি পদে ৮৬৩ জনকে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপকসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন শরীফ উদ্দিন।
এইসব রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তদন্ত করতে গিয়েই শরীফ উদ্দিন ফেঁসে গেছেন বলে মনে করার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।
বিষয়টি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এত দিন আমরা বিভিন্ন চলচ্চিত্রে দেখেছি, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কারণে সৎ পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা সরকারি কর্মকর্তাকে প্রভাব খাটিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়। এখন তা বাস্তবে দুদকে দেখলাম। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এলাকায় বড় প্রকল্প ও সরকারি অফিসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শরীফ উদ্দিনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সাহসী। তিনি কারও সঙ্গে আপস করেননি। তাকে কেন চাকরিচ্যুত করা হলো, তা দুদকের পরিষ্কার করা উচিত।’
যে ক্ষমতাবলে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেই দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২)-তে বলা হয়েছে, ‘এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ না দর্শাইয়া কোনো কর্মচারীকে ৯০ দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা ৯০ দিনের বেতন পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’
অবশ্য এই আদেশকে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, সংবিধানের ১৩৫ (২) নম্বর অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, ‘অনুরূপ পদে (প্রজাতন্ত্রের অসামরিক পদে) নিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে তাহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার যুক্তিসংগত সুযোগ দান না করা পর্যন্ত তাহাকে বরখাস্ত, অপসারিত বা পদাবনমিত করা যাইবে না।’
কক্সবাজারে তিন লাখ কোটি টাকার ৭২টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের শুরুতেই ভূমি অধিগ্রহণে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার সহায়তায় দুর্নীতির এ জাল বিস্তারের তথ্য পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কিছু কর্মকর্তার নামও এ চক্রে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিনটি প্রকল্পে দুর্নীতির জন্য পৃথক তিনটি মামলা করে দুদক। তদন্তকারী কর্মকর্তার ৭৫০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ২৩ পদস্থ কর্মকর্তাসহ মোট ৪৪ জন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়।
এ ছাড়া দুদকের তালিকায় দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে সাতজন রাজনৈতিক নেতার নাম রয়েছে, যাঁদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা, মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান এবং কক্সবাজার যুবদলের সভাপতি। এ ছাড়া প্রতিবেদনে কক্সবাজারের পাঁচজন সাংবাদিক, আটজন আইনজীবী, দুজন ব্যাংকারের নাম উঠে আসে, যাঁরা কোনো না কোনোভাবে ওই দুর্নীতি ও দালাল চক্রের অংশ হিসেবে কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, তাঁরা সবাই সরকারি অর্থ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের না দিয়ে আত্মসাৎ করতে ভূমিকা রেখেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন দাবি করেন, স্থানীয় পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণ কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি থাকলেও মূলত কাজটি মাঠপর্যায়ে সার্ভেয়াররা করে থাকেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তিনি অনুমোদন দেন। তাঁর ভাষ্য, ‘জেলা প্রশাসন থেকে আমরা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে দেখেছি। কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।‘
যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তারাই যদি তদন্তের দায়িত্ব পালন করে তাহলে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ না পাওয়ারই কথা। দুদকের পক্ষে তদন্ত পরিচালনাকারী কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘কক্সবাজারের কয়েকটি মেগা প্রকল্পের দুর্নীতি অনুসন্ধানে আমি সরকারি কর্মকর্তা, প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা ও একটি দালাল চক্রের রোষানলে পড়ি। তারা আমাকে তাদের নাম তদন্তে না দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু দুর্নীতির প্রমাণ থাকায় আমি তাতে সম্মত হইনি। তাদের হত্যার হুমকিতে আমি জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত আছি।’
দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান মনে করেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে আমাদের এখানে সব সময়েই একটি দুষ্টচক্র কাজ করে। এ চক্রের কারণে প্রকৃত ভূমিমালিকেরা ক্ষতিপূরণের অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়। ওই চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এ ধরনের দুর্নীতির লাগাম টানা যাবে না।‘
দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)গঠন করা হয়েছিল অনিয়ম-দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে। কিন্তু দুদকের তৎপরতায় দেশে দুর্নীতি কি কমেছে? মনে হয় না। বরং এই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদাধিকারীদের কণ্ঠেই শোনা গেছে অসহায় কাতরোক্তি- দুদক হলো নখদন্তহীন বাঘ। এই বাঘ নিজেদের কাজের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের মনে ভীতি সৃষ্টি করতে না পারলেও এবার একজন সৎ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে ঠিকই ভয় দেখাতে পেরেছে! দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব পালন করা যে সংস্থার সাংবিধানিক কর্তব্য সে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার পর সেই কর্তব্য পালনে নিষ্ঠার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হলেও অনেক খারাপ মানুষের সহায় হয়েছে। ।
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন চাকরিবিধির দোহাই দিয়ে বলেছেন, শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় তাকে অপসারণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো তিনি যদি সংস্থার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার মতো কাজ করে থাকেন তাহলে তাকে আগে কখনো সতর্ক করা হয়েছিল কি? তিনি যদি অন্যদের ফাঁসানোর অপচেষ্টা করে থাকেন তাহলে তাকে একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কেন? সহকর্মীরা যাকে সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে চেনেন তাকে চাকরিচ্যুত করে কীভাবে দুদকের ‘ভাবমূর্তি রক্ষা’ হবে সে ব্যাখ্যা কি দুদকের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে? উইচ হান্টিংয়ের পথে না হেঁটে দুদকের উচিত হবে শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি পুনর্বিচনা করা এবং তিনি যাতে কোনো মহলের প্রভাবে অন্যায় হয়রানি-হেনস্থার শিকার না হন তা নিশ্চিত করা।
শরিফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে দুদকের কর্মীদের অংশগ্রহণে মানববন্ধনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। যা অভূতপূর্ব ও উদ্বেগজনক। দুদক কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির বিষয়ে সংস্থার নেতৃত্বকে ধোঁয়াশা দূর করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
৭ বছরের চাকরি জীবনে শরীফ উদ্দিন আগাগোড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েও বিশেষ কোনো মহলের নেপথ্য কলকাঠি নাড়ানোয় চাকরিচ্যুত হতে হলে ঘটনাটি ভবিষ্যতের জন্য একটি মন্দ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক