জীবনের শেষ কটা দিন ঘরে থাকতে চান রহিমা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:৩৬ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৪:১১
লালমনিরহাট: জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের কাশীরাম মুন্সীর বাজার এলাকার মৃত্যু মতিয়ার রহমানের স্ত্রী রহিমা বেগম (৮০)। মুক্তিযুদ্ধোকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীরা মেরে ফেলে তার স্বামীকে। এখন থাকেন তিস্তা পাড়ের জরাজীর্ণ একটি ভাঙা টিনের চালায়।
তিন ছেলের ঘরে ঠাঁই হয়নি বৃদ্ধা রহিমার। বয়সের কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না। উল্টো বড় ছেলের রেখে যাওয়া সন্তানের জন্য অন্যর বাড়ি হাত পেতে খাবার যোগাড় করেন তিনি। এরপরও এখন পর্যন্ত জোটেনি একটি ভিজিডি কার্ড বা মাথা গোঁজার মতো একটি সরকারি ঘর।
জানা গেছে, এলাকার মানুষের সহযোগিতায় কোনো রকমে চলে রহিমার সংসার। এর মাঝে ভেঙে যায় বড় ছেলের সংসার। মায়ের অভাবের সংসারে নাতনিকে নিয়ে একটি ভাঙা টিনের চালায় কোনো রকমে দিন পার করেছেন তিনি। একটি ঘরের আকুতি নিয়ে দীর্ঘ দিন উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে মেম্বার চেয়ারম্যান সহ সবার কাছে গেলেও কারও কাছে আশার বাণী শুনতে পায়নি এই বৃদ্ধা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকটি টিন দিয়ে তৈরি একটি চালা ঘর। সেখানে নাতনিকে নিয়ে কোনোমতে কষ্টে বসবাস করছেন রহিমা। আর বৃষ্টিতে যেন থাকাই দায় হয়ে যায় ওই চালায়। তিন ছেলে এবং এক মেয়ে থেকেও অভাবের তাড়নায় নাতনিকে নিয়ে অন্য বাড়িতে হাত পেতে খাবার যোগাড় করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান জানান, রহিমা বেগমের বড় ছেলে ঢাকায় রিকশা চালিয়ে কোনো রকম পরিবার চালায়। মেজো ছেলে চায়ের দোকানে কাজ করে। সেজো ছেলে ভুগছেন মরণ রোগে। আর ছোট ছেলে যদিও কিছু দিত কিন্তু এক বছর ধরে করোনার কারণে তারও সংসার চলানো দায় হয়ে পড়েছে। সারাদিন মানুষের বাড়ি বাড়ি হাত পেতে রাতে একটু ভালোভাবে ঘুমাতেও পারেন না এই বৃদ্ধা।
বৃদ্ধা রহিমা বেগম জানান, একটু বৃষ্টিতে ভিজে যায় বিছানাপত্র। তবুও বেঁচে থাকার তাগিদে ভাঙা টিনের চালায় রাতভর ছটফট করে নাতনিকে নিয়ে থাকেন। বাকি দিন কটা দিন ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটি সরকারি ঘর চান তিনি।
এ বিষয়ে তুষভাণ্ডার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর ইসলাম আহমেদ বলেন, ‘জানতে পেরেছি তার ছেলে-মেয়ে থেকেও নেই। খুব কষ্ট করে চলেন ওই বৃদ্ধা। থাকার মতো ঘর নেই। ভাঙা একটি টিনের চালায় নাতনিকে নিয়ে বসবাস করেন। তাই তার জন্য একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।’
সারাবাংলা/এনএস