‘মিকসের বক্তব্যের ভুল উপস্থাপন বাংলাদেশকে লজ্জায় ফেলেছে’
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:২৯ | আপডেট: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৯:০৫
ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকসের বক্তব্যের ভুল উপস্থাপন বাংলাদেশকে লজ্জায় ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ৩১ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকস নিউ ইয়র্কের কুইন্স এলাকায় তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছিলেন। গ্রেগোরি মিকসের নির্বাচনি আসন জ্যামাইকা এলাকায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি আমেরিকানের বসবাস। যারা ওই এলাকার ভোটারও বটে।’
তিনি বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রসঙ্গক্রমে মার্কিন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি সম্পর্কেও কথা বলেন। তিনি র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন। কংগ্রেসম্যান যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগনেটস্কি আইনের কথা উল্লেখ করেন, যে আইনের অধীনেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বিদেশি যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।’
‘কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে কংগ্রেসেম্যানের বক্তব্যের একটি বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। ওই অনুষ্ঠানে মার্কিন নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ দূতাবাস আমন্ত্রিত না হলেও একটি দলীয় মাধ্যমকে ব্যবহার করে ওই মিকসের বিকৃত করে বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসকে দিয়ে দেশে এবং বিদেশে প্রচার করার ব্যবস্থা করা হয়,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “নিয়মিতভাবে ‘ফ্যাক্টস চেক’ করেন এমন একজন ফ্যাক্টস চেকার প্রমাণ করে দেখিয়েছেন— প্রায় সবগুলো সংবাদমাধ্যমে সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসের পাঠানো সংবাদের ভিত্তিতে প্রতিবেদন করেছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম দূতাবাসের পাঠানো প্রেস রিলিজটি হুবহু প্রকাশ করেছে। ওই ফ্যাক্টস চেকার প্রমাণ করে দেখিয়েছেন— তহবিল সংগ্রহ সভায় উপস্থিত জনৈক ব্যক্তি কংগ্রেসম্যান মিকসকে যে প্রশ্ন করেছেন, সেটিই মিকসের বক্তব্য হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ট প্রভাবশালী বন্ধুরাষ্ট্রের বিদেশ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধানের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমে ধুম্রজাল তৈরি করে শুধু সচেতন মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করেনি, ওয়াশিংটন দূতাবাস বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চরমভাবে হেয় করেছে। কারণ, এরই মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মিকস নিজেই বাংলাদেশ দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে নাকচ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, তার নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।’
তিনি বলেন, “মার্কিন হাউজ অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে তিনি সুস্পষ্টভাবে র্যাব ও এর কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে আমি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক দৃঢ় করা আমি সবসময় সমর্থন করব। আগামি নির্বাচন অবাধ ও তার সুষ্ঠতা নিশ্চিতকরণসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য কাজ করব।’”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এর আগে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত একটি বেসরকারি সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে সেখানে অবস্থিত দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। ব্রাসেলস দূতাবাসের ওয়েবসাইট ভিজিট করলে সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি এখনো দেখা যাবে। সেখানে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মীর মত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, যা দূতাবাসকে রাষ্ট্রের বদলে আওয়ামী লীগের প্রচার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রমাণ।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি একাডেমিশিয়ান, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা যখন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি, নির্বাচনের অনিয়ম, জনগণের ভোটাধিকারসহ হতাশাজনক পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে বই অথবা প্রচারপত্র বা আলোচনার উদ্যোগ নেয়, তখনই এই সরকার তার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে অপকর্ম ঢাকার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। ভণ্ডুল করে দেয় সব আয়োজন।’
‘সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, ব্রাসেলসসহ দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডে আবারও তা প্রমাণ হলো। মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন শহরের কর্মকর্তারা সরকারি দলের অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থেকে দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করেন। এসব ঘটনায় পেশাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুদ্ধ হলেও মৌন থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর