পুলিশকে বিশ্বমানের করে তৈরি করা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
২৮ জানুয়ারি ২০২২ ২০:৫৮ | আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ২১:১০
ঢাকা: বাংলাদেশকে পুলিশকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, পুলিশ সত্যিকারের জনগণের পুলিশ হয়ে উঠছে। তারা সবসময়ই জনগণের পাশে থাকে। করোনাকালে পুলিশ যেভাবে জনগণকে সেবা দিয়েছে, তা সত্যিই অভূতপূর্ব। সেই পুলিশকে আমরা বিশ্বমানের পুলিশ হিসেবে তৈরি করতে চাই। এজন্য যা যা করা দরকার, আমরা তাই করছি।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে পুলিশ সপ্তাহ ২০২২-এর পঞ্চম দিনের সমাপনী অধিবেশনে রাজারবাগ অডিটোরিয়াম ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন।
বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপাররা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিগত দিনে দেশে সন্ত্রাসবাদের যেভাবে উত্থান হয়েছে সেখানেও পুলিশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন পালন করেছে। ২০১৩ সালে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী আন্দোলনের নামে দেশে যে হত্যা-সন্ত্রাস চালিয়েছিল, তা আপনারা দেখেছেন।
জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশ ‘রোল মডেল’ হিসেবে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে দেশ জঙ্গিমুক্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি), অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটসহ (এটিইউ) বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিট করা হয়েছে। পুলিশের জন্য যখন যেটা প্রয়োজন, আমরা সেটাই করে যাচ্ছি। পুলিশ স্টাফ কলেজকে বিশ্বমানের করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা বর্তমানে যেভাবে কাজ করছেন, ভবিষ্যতেও সেভাবেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরও সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের বেশকিছু যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করেছেন। কিছু অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেছেন। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে যেসব দাবি-দাওয়া পূরণ করতে পারব, সেগুলো অচিরেই পূরণ করা হবে। যেসব দাবিদাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শের প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে আমরা তার সঙ্গে কথা বলব।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য তাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন। পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর যেসব দাবি এসেছে, এর অধিকাংশই যৌক্তিক। পুলিশের দক্ষতা বাড়াতে আরও যা যা প্রয়োজন, তা করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনীকে আমরা ঢেলে সাজিয়েছি। নতুন নতুন ইউনিট সৃজন করেছি, জনবল বাড়িয়েছি। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেসব ইউনিট প্রয়োজন ছিল, সেগুলো আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি।
জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, পুলিশ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কঠিন দায়িত্ব পালন করে। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের আইনশৃঙ্খলা ঠিক না থাকলে, শান্তি বজায় না থাকলে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেভাবে এগোবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমানে দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নতি হচ্ছে। এ অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে সরকারের প্রতিটি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সভায় উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিনিয়র সচিব বলেন, আপনাদের দাবি খুবই ন্যায়সঙ্গত, যৌক্তিক। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এগুলো সমাধান করব।
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। দেশে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায়, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক থাকায় শিল্পায়ন ও নগরায়ন হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। দেশে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
জঙ্গি সন্ত্রাস দমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে।
পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি সম্পর্কে আইজিপি বলেন, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের মহাকাব্যিক অর্জন হয়েছে। পুলিশের জন্য অর্থ বরাদ্দ ‘ব্যয় নয়, বিনিয়োগ’। কারণ পুলিশের সক্ষমতা বাড়লে, পুলিশ উন্নত ও আধুনিক হলে এর সুফল ভোগ করবে দেশ ও দেশের জনগণ।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। ‘দক্ষ পুলিশ, সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে পুলিশ সপ্তাহ ২০২২ গত ২৩ জানুয়ারি বর্ণাঢ্য বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করেন।
করোনা সংক্রমণ রোধে পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন সংক্ষিপ্ত করা হয়। পাঁচ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহে মোট ১০টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মতবিনিময়, আইজিপির সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মেলন, প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মতবিনিময় ইত্যাদি।
ফাইল ছবি
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর