এক বছরেই বায়ু দূষণ বেড়েছে ১০ শতাংশ: গবেষণা
২৭ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৫৯ | আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ১০:৫৮
ঢাকা: ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দশ শতাংশ। বায়ুমান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বায়ুমান সূচক (একিউআই) বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাধারণত শীতের মৌসুমে গড় বায়ুমান সূচক বাড়তে দেখা যায়। জুন ও জুলাইয়ে বায়ু দূষণ কমে আসে। শীতকাল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক ঋতু হওয়ায় এই সময়ে ধূলা-বালির পরিমাণও বেড়ে যায়। এর সঙ্গে ইট ভাটা ও সিমেন্ট কারখানা থেকে উৎপন্ন ধূলার মিশ্রণ ঘটলে বায়ু দূষণ বাড়ে। শীতে আর্দ্রতা কম থাকায় এই সময়ে বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণাগুলোর উপস্থিতিও বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন-
- বায়ু দূষণে টানা শীর্ষে ঢাকা
- বায়ু দূষণ: টানা ৩ দিন শীর্ষে ঢাকা
- বায়ু পরিস্থিতি বিপজ্জনক হলেও উদাসীন সরকার
- এক মাস ধরেই জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকার বায়ু
- বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত শহর ঢাকা, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি: তাপস
- ঢাকায় নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে সবচেয়ে বেশি দূষণ
- অবৈধ চারকোল কারখানায় দূষিত পরিবেশ, রোগাক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
২০১৬–২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরের গড় বায়ুমান সূচক
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণার তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল— এই পাঁচ বছরে বায়ু দূষণের যে গড় হার, ২০২১ সালে তা ৭ শতাংশ বেড়ে যায়। আর সুনির্দিষ্টভাবে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে দূষণের পরিমাণ ছিল ১০ শতাংশ বেশি।
এদিকে, ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য হয়নি ঢাকাবাসীর। এসময় বায়ুমান বেশিরভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘চরম অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসের ২৫ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ২১৯ দশমিক ৫২ যা ‘চরম অস্বাস্থ্যকর’।
তথ্য বিশ্লেষণ করে ক্যাপস আরও বলছে, গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩৮ দিন (২ শতাংশ) সময় ভালো বায়ু গ্রহণ করেছে। ৫১০ দিনে (২৬ শতাংশ) বায়ুর মান ছিল চলনসই, সবচেয়ে বেশি ৫৭৭ দিনে (২৯ শতাংশ) বায়ু মান ছিল সংবেদনশীল। এছাড়া ৪৪৩ দিন (২২ শতাংশ) অস্বাস্থ্যকর, ৩৮৫ দিন (১৯ শতাংশ) চরম অস্বাস্থ্যকর এবং ৩৭ দিন (২ শতাংশ) দুর্যোগপূর্ণ বায়ুর উপস্থিতি ছিল ঢাকা শহরে।
ঢাকা শহরের তিনটি স্থানে পরিবেশ অধিদফতর পরিচালিত নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনেও (ক্যামস) বায়ু দূষণের পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি দেখা গেছে।
কোন সময়ে বায়ুর মান কেমন
স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) তথ্য মতে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের মান সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকে রাতে। গত ছয় বছরে গড় বায়ুর মান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা শহরে বিকেল ৪টার পর থেকে বায়ু দূষণের মান খারাপ হতে শুরু করে, যা রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে। এর মধ্যে রাত ১টায় বায়ুমানের গড় সূচক পাওয়া গেছে ১৬২, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ।
সংবাদ সম্মেলনে বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক এবং ক্যাপস প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, রাত ১০টার পর উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রচুর মালবাহী ট্রাক ঢাকা শহরে প্রবেশ করে। এসব যানবাহনের কারণে রাতে প্রচুর বায়ু দূষণ হয়। এছাড়া, ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো ঝাড়ু দেওয়া হয় রাতে। ফলে রাতের বাতাসে ধূলাবালি উড়তে থাকে বেশি। আবার রাতে দিনের চেয়ে তাপমাত্রা কম থাকায় ধূলাবালি বাতাসে বেশি সময় ধরে অবস্থান করে। সে কারণেই রাত ১টার দিকে বায়ুমানের পরিস্থিতি সবচেয়ে বাজে থাকে।
ড. কামরুজ্জামান জানান, পরে রাত ৩টা থেকে বায়ুমানের উন্নতি হয়। আবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বায়ুমান খারাপ হতে থাকে। এর পেছনে অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের চাপ কারণ হতে পারে। বাকি সময় তাপমাত্রা বেশি থাকায় এবং ঢাকায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বায়ুমান কিছুটা ভালো থাকে। বিকেলে অফিস ছুটির সময় পর থেকে ফের বায়ুমানের অবনতি হতে থাকে।
বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। তরই সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাপা নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এস সিদ্দিকী, ইবনুল সাঈদ রানা, ক্যাপসের গবেষণা শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ আল নাঈম এবং যুব বাপার সদস্য সচিব রাওমান স্মিতাসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর