‘অতি আত্মবিশ্বাসে বাড়ছে সংক্রমণ, পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক’
২৫ জানুয়ারি ২০২২ ২০:০১ | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২২ ২২:৩৮
ঢাকা: দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। নিয়ন্ত্রণে থেকেও করোনা সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে সবার ‘অতি আত্মবিশ্বাস’কে দায়ী করছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে ওমিক্রনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেসরকারি হাসপাতালের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ যখন কমে এসেছিল, তখন মৃত্যুও শূন্যের কোটায় চলে এসেছিল। আমরা ধারণা করেছিলাম করোনা এবার বিদায় হবে। কিন্তু তখন আমাদের জনগণের মধ্যে অতিমাত্রায় কনফিডেন্স চলে এসেছিল। মাস্ক ছাড়া চলাচল করেছি, কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানিনি। কক্সবাজার যারা গিয়েছে, তারা কেউ মাস্ক পরেনি। এসব কারণেই আবার সংক্রমণ বাড়ছে।
আরও পড়ুন- হাসপাতালে যাওয়া রোগীদের ৮৫% ভ্যাকসিন নেননি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে সংক্রমণ শনাক্তের হার এক শতাংশে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই সংক্রমণের হার ৩২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোর ২৫ শতাংশ বেড রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিকে আশঙ্কাজনক বলা যেতে পারে।
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে বৈশ্বিক কারণও দেখছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সারাবিশ্বেই করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সে কারণেও বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। তবে আশার খবর হচ্ছে— ইউরোপে এখন সংক্রমণ কমছে, ভারতেও কমছে। এসব দেশে দৈনিক আক্রন্তের সংখ্যা লক্ষাধিক ছিল। এখন ধীরে ধীরে কমে আসছে।
আরও পড়ুন- করোনায় সংক্রমণ ছাড়াল ১৭ লাখ, শেষ ১ লাখ ১৩ দিনে
ওমিক্রনকে হালকাভাবে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ওমিক্রন মাইল্ড হতে পারে, কিন্ত তার সংক্রমণের ক্ষমতা অনেক বেশি। সংক্রমণ যখন অনেক বেশি হবে, তখন মৃত্যুও বেশি হবে।
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতাল প্রস্তত রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে সরকারি যেসব হাসপাতাল আছে, সেগুলোর ২৫ শতাংশ শয্যা ফিলআপ হয়ে গেছে। এখনো ৭৫ শতাংশ শয্যা খালি রয়েছে। কিন্তু এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে বেডের চাহিদা বাড়বে।
আরও পড়ুন- এক দিনে ২য় সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড, মৃত্যু বেড়ে ১৮
সংক্রমণ অনেক বাড়লেও হাসপাতালে রোগী ভর্তির পরিমাণ কম হওয়ার পেছনে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচির সাফল্যও দেখছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সংক্রমণ বাড়লেও সেই হারে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে না। এর কারণ হচ্ছে ভ্যাকসিন। অনেক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। ফলে হসপিটালাইজেশন কম হবে। আমাদের টার্গেটেড আরও তিন কোটি মানুষ ভ্যাকসিন নেওয়ার বাকি আছে। পরিবহন, শিল্প ও নির্মাণ খাতের শ্রমিকদের ভ্যাকসিন দেওয়া বাকি আছে। তারা এগিয়ে আসেনি ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য। তারপরও তাদের কীভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া যায়, তা নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও এখনো সবাই মিলে চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা বাসার বাইরে মানুষ সেভাবে মাস্ক পরে না। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ওমিক্রন মাইল্ড হওয়ায় কথা চিন্তা করে আমরা যদি ইচ্ছামতো চলাফেরা করি, তাহলে আমাদের ক্ষতি হবে। আমাদের দেশ অনেক ভালো অবস্থায় আছে। আমাদের সব সূচকই ভালো আছে। আমরা যাদি ফেল করি, তাহলে সূচকগুলো ভালো থাকবে না।
আরও পড়ুন- সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যমেলা বন্ধ চায় কারিগরি পরামর্শক কমিটি
চলমান পরিস্থিতিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান জাহিদ মালেক। বলেন, আগেও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা যেভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, এবারও সেভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। আশা করি এবারও আপনার আগেরবারের মতো কাজ করবেন। আমি সব জায়গায়ই আপনাদের কথা বলি।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
করোনা সংক্রমণ টপ নিউজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক