স্ত্রী খুন: নিজের মামলায়ও জামিন চেয়ে বিফল বাবুল আক্তার
২৫ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:১৭ | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:২৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের জামিনের আবেদন আবারও নাকচ হয়েছে। তবে এবার তিনি জামিন চেয়েছিলেন নিজের দায়ের করা মামলায়, যে মামলায় আদালতের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর আগে তিনি একই ঘটনায় দায়ের হওয়া অপর মামলায় দু’দফা জামিনের আবেদন করে বিফল হন।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান আসামি বাবুল আক্তারের জামিন আবেদন নামঞ্জুরের আদেশ দেন।
মহানগর পিপি মো. ফরিদউদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আসামি বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা শুনানিতে জামিনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিরোধিতা করা হয়। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। এর ফলে বাবুল আক্তারকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।
মিতু খুনের মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৯ জানুয়ারি বাবুল আক্তারকে তার নিজের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। একই ঘটনায় মিতুর বাবার দায়ের করা মামলায় গত বছরের ১৮ আগস্ট ও চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি দুই দফা আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন বাবুল আক্তার।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি করে ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০১৬ সালের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। প্রায় দেড় বছর পর ২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরদিন বাবুল আক্তারের মামলায় আদালতে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়, যাতে উল্লেখ করা হয়- তদন্তে বাদী বাবুল আক্তারের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
ওইদিনই অর্থাৎ ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।
পিবিআই হেফাজতে থাকা বাবুল আক্তারকে ১২ মে মোশাররফের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বর্তমানে বাবুল আক্তার কারাগারে আছেন। ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর মামলার এক আসামি এহতেশামুল হক ভোলা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানান, বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুছাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাকে দিয়ে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুন করায় পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। তার ঘনিষ্ঠ সাইফুল হক, গাজী আল মামুন, মোকলেসুর রহমান ইরাদ এবং আসামি মুসার স্ত্রী পান্না আক্তারও আদালতে জবানবন্দি দেন।
তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এসব জবানবন্দির একপর্যায়ে নিজের মামলায় পিবিআইয়ের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন দাখিল করেন বাবুল আক্তার। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর শুনানি শেষে আদালত বাবুল আক্তারের নারাজি আবেদন প্রত্যাখান করেন। একইসঙ্গে পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনও প্রত্যাখান করে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।
ফলে মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলাটির পাশাপাশি ‘আপাত নিষ্পত্ত‘ করা বাবুল আক্তারের মামলাটিও সক্রিয় হয়ে যায়। দুই মামলার সমান্তরাল তদন্ত করছে পিবিআই।
গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারকে তার নিজের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
সারাবাংলা/আরডি/এএম