শিক্ষকদের আনা খাবার ফিরিয়ে দিলেন শিক্ষার্থীরা
২৪ জানুয়ারি ২০২২ ২০:১১ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২২ ২০:২৫
অনশনরত শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষকরা। তবে অনশনে অটল শিক্ষার্থীরা সেই খাবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষকরা শাবিপ্রবি উপাচার্যের জন্যও খাবার এনেছিলেন। তাদের সেই খাবারও উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পাঠাতে দেননি।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে শাবিপ্রবি উপাচার্য ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন শিক্ষকরা। এর আগে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দুই কাউন্সিলরের নিয়ে আসা খাবারও একইভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
বিকেলে খাবার নিয়ে এসেও শিক্ষার্থী বা উপাচার্যকে দিতে না পেরে শাবিপ্রবি প্রক্টর ড. আলমগীর কবীর বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা অহিংস আন্দোলন করে আসছেন। তবে গতকাল থেকে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। এতে উপাচার্যের সমস্যা হচ্ছে। তিনি কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। তিনি হার্টের রোগী, তাকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। তাই তাকে দেখার জন্য আমরা কিছু খাবার আর ওষুধ নিয়ে এসেছিলাম।
আরও পড়ুন-
- ক্ষমা চাইলেন ভিসি ফরিদ
- শাবিপ্রবিতে ফের ভিসির কুশপুত্তলিকা দাহ
- ‘উপাচার্য পদের মূল্য বেশি নাকি শিক্ষার্থীর প্রাণ’
- শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সমর্থনে শিক্ষকদের প্রতীকী অনশন
- শাবিপ্রবিতে অনশন চালিয়ে যাওয়া ২০ শিক্ষার্থী হাসপাতালে
- উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলন অনভিপ্রেত: ঢাবি শিক্ষক সমিতি
- ৬ষ্ঠ দিনে অনশন— সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই শাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের
তিনি বলেন, কিন্তু আমাদের ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আমি আমার শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করব, তারা যেন এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসেন।
তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে কারও পক্ষ থেকে আনা খাবারই তারা গ্রহণ করতে পারবেন না। অন্যদিকে অনশনের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো উপাচার্য তার দিক থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য এক চুলও ছাড় দেওয়ার কোনো মনোভাব দেখাননি। ফলে তার কাছেও বাইরে থেকে কোনো খাবার ঢুকতে দিতে তারা রাজি নন।
এর আগে, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কামরান খাবার নিয়ে যান শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের খাবার গ্রহণ করেননি এবং তারা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চাইলে তারও অনুমতি দেননি।
শিক্ষার্থীরা দুই কাউন্সিলরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শাবিপ্রবি বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী ছাড়া আমরা কারও খাবার গ্রহণ করতে পারছি না। তবে আপনাদের আগমনে আমরা খুশি হয়েছি।
এর আগে, অসদাচরণের অভিযোগ এনে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানায় গত রোববার নিজের বাসভবনে যাওয়ার সময় উপাচার্যকে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম ওয়াজেদ মিয়া ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এবং উপাচার্যকে মুক্ত করে তার বাসভবনে নিয়ে যায়। এতে অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।
এদিকে, পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের পর জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এছাড়া ঘটনা তদন্তে ৮ সদস্যের কমিটি করা হয়। এর মধ্যেই সোমবার বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শাবিপ্রবি ভিসির কার্যালয়, একাডেমিক ভবন, কন্ট্রোলার অফিসসহ বিভিন্ন আবাসিক হলে তালা দেন।
এরপর গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন ২৮ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি ১৩ জন অনশনরত অবস্থায় উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন। পাঁচ দিন পেরিয়ে তাদের অনশন ষষ্ঠ দিনে পৌঁছালেও উপাচার্য তার অবস্থানে অনড় রয়েছেন।
আরও পড়ুন-
- অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ শাবিপ্রবি
- এবার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শাবিপ্রবি
- শাবিপ্রবিতে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, ২ ঘণ্টা পর ভিসি মুক্ত
- আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খরচ দেবে শাবিপ্রবি প্রশাসন
- এবার ৩ দফা দাবিতে ভিসি ভবনের সামনে শাবিপ্রবি ছাত্রীরা
- শাবিপ্রবি আন্দোলন: পুলিশের মামলায় আসামি কয়েকশ শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/টিআর