রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় পূর্ব ইউরোপে শক্তি বাড়াচ্ছে ন্যাটো
২৪ জানুয়ারি ২০২২ ২০:৪৩ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:২৮
ঢাকা: ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসন সামনে রেখে পূর্ব ইউরোপে শক্তি বৃদ্ধি করছে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো। জোটটি আকাশ, ভূমি ও সমুদ্রে রাশিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। ন্যাটো প্রধানের বিবৃতিকে ‘পশ্চিমা বাতুলতা’ বলে সমালোচনা করেছে রাশিয়া।
জেনস স্টলটেনবার্গ বিবৃতিতে বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতিতে ন্যাটো মিত্ররা তাদের সম্মিলিত প্রতিরক্ষার জন্য রণতরী, যুদ্ধবিমান এবং স্থলসেনাদের প্রস্তুত করছে। মার্কিন প্রশাসনও পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছে।’
বিবৃতিতে ন্যাটো প্রধান জানান, রাশিয়াকে নিবৃত্ত করতে বাল্টিক সাগরে একটি ফ্রিগেট রণতরী পাঠাচ্ছে ডেনমার্ক। এছাড়া ওই অঞ্চলে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করছে লিথুয়ানিয়া। পূর্ব ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়ায় ৪টি যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে স্পেন। এছাড়া কৃষ্ণ সাগরে ন্যাটোর নৌবহরে আরও তিনটি রণতরী পাঠাচ্ছে দেশটি। বুলগেরিয়ায় দু’টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে নেদারল্যান্ডস। পূর্ব ইউরোপের আরেক দেশ রোমানিয়ায় স্থল সেনা পাঠাচ্ছে ফ্রান্স।
এর আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইউক্রেনকে সামরিক সমর্থন দেওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এক যৌথ বিবৃতিতে মন্ত্রীরা জানান, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইইউ। মন্ত্রীরা বিবৃতিতে বলেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক আগ্রাসনের ব্যাপক পরিণতি এবং গুরুতর মূল্য দিতে হবে রাশিয়াকে।’ মন্ত্রীদের এ ঘোষণার পরপরই ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে সামরিক শক্তি বাড়ানোর ঘোষণা দিলো।
ন্যাটোর প্রধান নরওয়ের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্টলটেনবার্গ তার বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘যেসব সদস্য ন্যাটোতে অতিরিক্ত সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে আমি তাদের স্বাগত জানাই। ন্যাটো জোটের পূর্বাঞ্চলকে শক্তিশালী করাসহ সকল মিত্রদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। সম্মিলিত প্রতিরক্ষা জোরদার করাসহ সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতিতে আমরা সবসময় সাড়া দেব।’
আরও পড়ুন- রুশ হামলার সম্ভাব্য তারিখ জানালেন ইউক্রেনের শীর্ষ জেনারেল
মূলত ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলের পর থেকেই পূর্ব ইউরোপে আস্তে আস্তে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে ন্যাটো। বর্তমানে পূর্ব ইউরোপের এস্টোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডে যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চারটি বহুজাতিক যুদ্ধদল অবস্থান করছে। এবার ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ হামলার আশঙ্কায় পূর্ব ইউরোপে অস্ত্রের যোগান ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি করছে ন্যাটো।
সম্প্রতি ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সদস্য রাষ্ট্র ইউক্রেন যেন ন্যাটোতে যোগ না দেয় এমন নিশ্চয়তা দাবি করে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে মস্কো। ইউক্রেন মনে করছে, রাশিয়া যে কোনো সময় সামরিক হামলা চালাতে পারে। তবে রাশিয়া বরাবরই বলে আসছে, সামরিক হামলা চালানোর কোনো উদ্দেশ্য নেই। যদিও ইউক্রেন সীমান্তে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সবরকমের প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান করছে রুশ সামরিক বাহিনী। এছাড়া চলতি সপ্তাহে ভূমধ্যসাগর ও প্রতিবেশী বেলারুশে সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে মস্কো—যা ইউক্রেনে হামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি বলে মনে করছে ন্যাটো।
আরও পড়ুন
- ইউক্রেনে ঢুকে পড়তে পারে রাশিয়া
- পূর্ব ইউক্রেনে ভাড়াটে সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো
- ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা বাল্টিক দেশগুলোর
- মার্কিন নাগরিকদের একাংশকে ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ
- ইউক্রেন সীমান্তে উত্তেজনা: প্যারিসে চতুর্পক্ষীয় বৈঠক
- রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠিয়েছে আমেরিকা
- চীন-তাইওয়ান, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত— ২ ফ্রন্টে যুদ্ধ করবে আমেরিকা?
সারাবাংলা/আইই