‘৩ মাসের তত্ত্বাবধায়কে পরিবর্তন আসবে না, ২ বছরের জন্য দরকার’
২২ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:০৫
ঢাকা: তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে কোনো পরিবর্তন আসবে না, অন্তত দুই বছরের জন্য একটা জাতীয় বা সর্বদলীয় সরকার দরকার- এমনটিই মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে বীর উত্তম মেজর হায়দার মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মওলানা ভাসানীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ভাসানী অনুসারী পরিষদ এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আগামী নির্বাচন পূর্ববর্তী দুই নির্বাচনকেও ছাড়িয়ে যাবে। আগামী নির্বাচনে প্রধান শিক্ষকদের ব্যাবহার করা হবে এবং জেলা প্রশাসকেরা তো অনুগত আছেই। এসব ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। আমি মনে করি না যে তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে। অন্তত দুই বছরের জন্য একটা জাতীয় সরকার বা সর্বদলীয় সরকার দরকার।’
তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ও মজলুমের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে একটা সঠিক নির্বাচন দরকার। কিন্তু এসরকার আমাদের বাদর খেলা দেখাচ্ছে। এ সরকার মনে করে আমরা সবাই বোকা। আসলে সরকার জনগণ থেকে পুরোপুরি বিছিন্ন। তারা আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমলা দিয়ে সুশাসন কায়েম করা যায় না, ধান্দাবাজি করানো যায়।’
শাবিপ্রবির ছাত্রদের আন্দোলন প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে শাবিপ্রবির ছাত্ররা আন্দোলন করছে। কারণ, ভার্সিটির ভিসি পুলিশ দিয়ে তাদের মেরেছে। উনি আজকেই পদত্যাগ করে ছাত্রদের বলবেন- ‘আমার ভুল হয়েছিল’। পুলিশ দিয়ে কেন ছাত্রদের পেটানো হবে? ভিসির অপরাধ কী, সেটা আমি দেখতে চাই না। শুধু পুলিশ দিয়ে ছাত্রদের পেটানোর জন্য ওদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমি মনে করি, এই ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। কারণ, শিক্ষামন্ত্রীর উচিত ছিল তাদের কাছে গিয়ে মীমাংসা করে দেওয়া। অথচ তিনি তাদের ডেকে পাঠিয়েছেন।’
‘আজ মওলানা ভাসানী থাকলে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না। এইসব ব্যাপারে আমরা এখন কথা বলতে পারি না। জনগণের মুখের কথা একমাত্র মওলানা ভাসানী আমাদের শিখিয়ে গেছেন। কিন্তু তাকে আমরা ভুলে গেছি। আজকে সরকারিভাবে ভাসানীর জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন হয় না’- বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সারা পৃথিবী আমাদের গণতন্ত্র হরণ, অধকার হরণ, খুন-গুম, দুর্নীতি সব কিছুই সম্পর্কে জানে। এখন এই ইস্যুতে মিলিতভাবে সংগ্রাম গড়ে তোলা ছাড়া আমাদের মুক্তি আসবে না।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য নঈম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক হাবীবুর রহমান রিজুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নুর, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ।
উপ-মহাদেশের মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বর, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৫০তম বার্ষিকী ছিল শনিবার (২২ জানুয়ারি)। মুক্তিযুদ্ধকালে দীর্ঘদিন ভারতে থাকার পর ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বদেশের মাটিতে পা রাখেন মওলানা ভাসানী।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় মওলানা ভাসানীকে নিয়ে লেখালেখি শুরু হলে ভারত সরকার তাকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে। তখন তার স্বাস্থ্য ভালো ছিল না। দিল্লি থেকে দেশে ফেরার আগে ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি আসামের ফরিদগঞ্জে এক জনসভায় ভাষণ দেন মওলানা ভাসানী। সেখানে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস, পাকিস্তানের বর্বরতা এবং ২৩ বছরের শোষণের চিত্র তুলে ধরেন। পরের দিন ২২ জানুয়ারি মেঘালয় থেকে ভারত সরকারের একটি জিপে বাংলাদেশের হালুয়াঘাটে পৌঁছেন। তার সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন চিকিৎসক ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম