‘তিস্তার পানি বণ্টনে সহযোগিতার ক্ষেত্র এখনও রয়েছে’
২২ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:৩৮
ঢাকা: তিস্তা নদীর পানি বণ্টন বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র এখনও রয়েছে। এটি কেবল এক পক্ষের লাভের বিষয় হতে পারে না। মানুষ ও প্রকৃতি ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গী মাথায় রেখে সমাধানের পথ বের করতে হবে। নদীর পানি শাসনের ক্ষেত্রে প্রকৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে বেরিয়ে আসার সময় এসেছে।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত ‘তিস্তা নদী অববাহিকা: সংকট উত্তরণ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ৭ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন ২০২২ এর শেষ দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এসব কথা বলেন। একশনএইড বাংলাদেশ তিন দিনব্যাপী এ ভার্চুয়াল পানি সম্মেলন আয়োজন করে।
সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ‘মানুষ নদীর সঙ্গে বসবাস করে। কিন্ত নদী সংক্রান্ত আলোচনায় সাধারণত তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। পটুয়াাখালীর কলাপাড়ায় পানি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ধারণাটি স্থানীয় সম্প্রাদায়ের লোকদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এসেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সম্প্রদায়-ভিত্তিক পানি জাদুঘরটি ২০১৪ সালে একশনএইড বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। এই পানি জাদুঘর এখন আইডিয়া জেনারেশন, নদী-ভিত্তিক তৃণমূল মানুষের কণ্ঠস্বর, শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম এবং গ্লোাবাল ওয়াটার মিউজিয়ামের সাথে নেটওয়াার্কিংয়ের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।’
দ্য গ্লোাবাল নেটওয়ার্ক অফ ওয়াটার মিউজিয়ামের নির্বাহী পরিচালক ড. এরিবার্তো ইউলিস বলেন, ‘তিস্তা নদী অন্যান্য নদীর মতোই পরিবর্তনের প্রতীক। পানি সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সহযোগিতা ও ভালো অনুশীলন প্রয়োজন। যে কোনো পানি জাদুঘর তৈরি করার সময় আমাদের কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথাই নয়, সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপের কথাও মাথায় রাখা উচিত।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরিয়াল ফেলো শহীদুল হক বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে আমরা তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আরও ভালো সহযোগিতার পথ খুঁজে পেতে পারি। আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডার, জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আরও মিথস্ক্রিয়া হওয়া দরকার। জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনা করেও ভিন্ন ন্যারেটিভে এগিয়ে যাওয়া উচিত।’
সরকারকেন্দ্রিক কাঠামোর পরিবর্তে বৃহত্তর জনগণকেন্দ্রিক কাঠামোকে বেছে নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মানসিকতার পরিবর্তন ও কাঠামো পরিবর্তনের আহ্বান জানান সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব।
অ্যাসোসিয়েশন অব ভলান্টারি অ্যাকশন ফর সোসাইটির (আভাস) নির্বাহী পরিচালক এবং একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ পরিষদের সদস্য রহিমা সুলতানা কাজল তার বক্তব্যে কীভাবে একশনএইড বাংলাদেশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পটুয়াখালীর কালাপাড়ার পানি জাদুঘর প্রান্তিক মানুষের অধিকার রক্ষার মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে, সেটি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করার ফলে নদী কেন্দ্র্রীক সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তথাকথিত উন্নয়ন করতে গিয়ে পানির সুষম বণ্টন হচ্ছে না। ফলে ব্যবহারযোগ্য পানির অভাব দেখা দিয়েছে। নদীর পানি ব্যবহার নিয়ে যে সব আইন রয়েছে, সেসব আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না।’
কাউনিয়া কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান শ্বাশ্বত ভট্টাচার্য বলেন, ‘নদী মরে গেলে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জনজীবনও মরে যায়। সেই জনজীবন যদি নদীকেন্দ্রীক জীবিকা ও শ্রম থেকে বিচ্যুত হয় এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমের মধ্যে না থাকে, তাহলে হাজার বছরের লালিত সংস্কৃতিও নষ্ট হয়ে যায়।’
সম্মেলনের শেষ দিনে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন নেপাল আইএসইটির উপদেষ্টা অজয় দীক্ষিত, লিভিং ওয়াটারস মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অ্যাডজান্ট প্রফেসর ড. সারা আহমেদ ও এওএসইডিও-এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফিন।
সারাবাংলা/এজেড/একে