Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যেভাবে লিথিয়াম শিল্পে চীনের কাছে পিছিয়ে পড়ছে আমেরিকা

রবার্ট রেপিয়ার
২১ জানুয়ারি ২০২২ ১১:৫৯ | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:১৯

জ্বালানি তেল শিল্পের শুরুর দিকে দ্রুত বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেট্রোলিয়াম উৎপাদক ও ভোক্তা হিসেবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন হ্রাস ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে তেল আবিষ্কারের ফলে পেট্রোলিয়াম শিল্পে মার্কিন আধিপত্য ম্লান হয়ে যায়। বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান ধরে রাখলেও দেশটি ক্রমে বিদেশি তেলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

বহু আগেই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, পেট্রোলিয়ামের জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভরতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি জাতীয় নিরাপত্তা সমস্যা। ১৯৭৩ সালে এই সমস্যাটি বড় আকারে সামনে আসে। সে সময় পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলোর জোট- ওপেক’র সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছে তেল রফতানি নিষেধাজ্ঞা চালু করে।

নিষেধাজ্ঞার ফলে সরবরাহ ও চাহিদায় ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তেলের দাম চারগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়— যা গভীর বিশ্ব মন্দায় অবদান রাখে। বিদেশি তেলের উপর নির্ভরতা কয়েক দশক ধরে আমেরিকান পররাষ্ট্র নীতিকে প্রভাবিত করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক সামরিক সংঘাতে অবদান রেখেছে।

শেল ওয়েল বিপ্লবের ফলে জ্বালানি তেলের উৎপাদন ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে দ্বিতীয়বারের মতো জ্বালানি তেলে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ পায় দেশটি। কিন্তু বিশ্বে শক্তির উৎস এখন রূপান্তরের মধ্যে রয়েছে। তেল শিল্পের বিবর্তন সম্পর্কে আমরা যে পাঠ শিখেছি, জ্বালানি শক্তির নতুন উৎসের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

গত শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী পরিবহন শিল্পের ব্যাপক উন্নতিতে প্রধান কাঁচামাল ছিল পেট্রোলিয়াম। কিন্তু পরবর্তী শতাব্দীতে এই জায়গা দখল করে নিচ্ছে লিথিয়াম। মার্কিন গাড়ি নির্মাতারা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করতে চায়। এর ফলে লিথিয়ামের ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে।

ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ানচার্জ কর্তৃক প্রকাশিত একটি শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে— “হিসেবে করে দেখা গেছে, ২০৩৪ সাল নাগাদ বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ৫ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত লিথিয়ামের প্রয়োজন হবে। যুক্তরাষ্ট্র এই চাহিদার সামান্য একটি মাত্র ভগ্নাংশ নিজে উৎপাদন করে। অন্যদিকে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী লিথিয়ামের মোট উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। তবে এর মধ্যে বড় অংশ ব্যাটারিতে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট বিশুদ্ধ নয়।”

বিজ্ঞাপন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন তার পেট্রোলিয়াম চাহিদা পূরণের জন্য শেষ পর্যন্ত বিদেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, তেমনই লিথিয়ামের জন্যও দেশটি পরনির্ভরশীল হওয়ার পথে রয়েছে। বিপি স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে লিথিয়ামের মোট মজুতের ৭.৯ শতাংশ রয়েছে চীনের হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আছে ৪ শতাংশ। (লিথিয়ামের অধিকাংশ মজুত দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায়)। তবুও চীন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম লিথিয়াম উৎপাদক দেশ। উৎপাদনের দিক থেকে ২০২০ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে।

চীনের এই লিথিয়াম আধিপত্য দৈবক্রমে ঘটেনি। গত এক দশকে চীন তার লিথিয়াম শিল্প গড়ে তুলতে ৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। একই সময়ে মার্কিন বিনিয়োগ চীনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে পড়েছে। এর ফলে চীন একটি শক্তিশালী লিথিয়াম সাপ্লাই চেইন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

চীন লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। যদি লিথিয়ামকে পেট্রোলিয়ামের সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে এক্ষেত্রে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি হলো শোধনাগার এবং কেমিক্যাল প্ল্যান্টের সমান—যা পেট্রোলিয়ামকে ব্যবহার উপযোগী পণ্যে পরিণত করে। ঠিক এই জায়গাটিতে যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়ছে।

চীন বিশ্বব্যাপী লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি সাপ্লাই চেইনের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং গত দুই বছরে এর বাজার শেয়ার আরও ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ওপেক যেমন সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন, লিথিয়ামের ক্ষেত্রে চীন তেমনই একটি একক নিয়ন্ত্রক দেশ হয়ে উঠতে পারে।

[ফোবর্সের সিনিয়র কন্ট্রিবিউটর রবার্ট রেপিয়ার এর নিবন্ধ। ভাষান্তর আতিকুল ইসলাম ইমন।]

সারাবাংলা/আইই

টপ নিউজ লিথিয়াম লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর