কোনো বিলে আমার স্বাক্ষর নেই: লিয়াকত লাকি
১৬ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৫৪ | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২২ ২০:০১
ঢাকা: শিল্পকলা একাডেমির দুটি বিল নিয়ে আমার কাছে প্রশ্ন এসেছে। সেই সব কোনো বিলে আমি স্বাক্ষর করিনি। আমার কাছে সব ডকুমেন্ট আছে। কোনো বিলে আমার স্বাক্ষর নেই। একেবারেই নেই বলে জোর দাবি করেছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি।
রোববার ( ১৬ জানুয়ারি) বিকেলে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকের জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে তিনি এই দাবি করেন।
লাকি বলেন, ‘কোনো বিলে আমার সই নেই। অভিযোগ যা এসেছে, তার অধিকাংশই অপপ্রচার।’
কারা আপনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে লাকি বলেন, ‘সেটি বলব না। তবে সবারই শত্রু থাকতে পারে। আপনারও শত্রু আছে।’
আরও পড়ুন: শিল্পকলার ডিজি লিয়াকতকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুদক
একজন পরিচালককে কীভাবে সচিবের দায়িত্ব দিলেন জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমিতে গত ৪৭ বছরে এরকম ৮-১০ জনকে এমনকি ১৫ জনকে সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একজন উপ-সচিবকেও সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রমাণ চাইলে আপনাকে আমরা কাগজ দেব। আর শিল্পকলা একাডেমির বিধি অনুযায়ী মহাপরিচালক তিনি প্রধান নির্বাহী হবেন। আর ২৬ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। ওটা তো ২১ কোটি টাকা হবে। তার মধ্যে ৮ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি টাকা।’
লিয়াকত লাকি আরও বলেন, ‘যে সব বিল বকেয়া থাকে সেগুলো প্রতি ৩০ জুন পরিশোধ করতে হয়। আর এই সময়ের মধ্যে সবকিছু শেষ করতে হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো আগে যে, সচিব ছিলেন তিনি ২ শতাধিক নথি তিনি পেন্ডিং রেখে চলে গেছেন। আমার যে কর্মচারীগুলো রয়েছে তাদের যদি বেতন না দেই, বোনাস না দেই তাহলে তো তারা দাপিয়ে মরবে।’
ব্য্ক্তিগতভাবে চেক ইস্যু করা হয়েছে কিন্তু তারা জানে না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি একদম না। মনে রাখবেন, আই অ্যাম লাকি। আমি আবারও বলছি, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।’
এর আগে, সকাল ৯টা ৫২ মিনিটের দিকে লিয়াকত আলী লাকী দুদক কার্যালয়ে আসেন। দুদক উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়ার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া লাকির দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২ জানুয়ারি। ৬ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লাকিকে তলব করে দুদক। আর ৫ জানুয়ারি অভিযোগ অনুসন্ধানে শিল্পকলা একাডেমির দুই অর্থবছরের বাজেট ও ব্যয়সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে শিল্পকলা একাডেমির ঢাকা কার্যালয়ে বরাদ্দ করা বাজেট ও ব্যয়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংবলিত নথির ফটোকপি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে অব্যয়িত ৩৫ কোটি টাকা ২০২১ সালের ৩০ জুনে ব্যয়করণ-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র তলব করা হয়। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান আয়োজন-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংবলিত নথির ফটোকপি, ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ব্যয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন ভাউচার-ক্যাশ বই এবং শিল্পকলা একাডেমি নামীয় সোনালী ব্যাংক (সেগুনবাগিচা শাখা) অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্টের কপি চাওয়া হয়।
দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ জুন শিল্পকলা একাডেমির সচিব নওশাদ হোসেন বদলি হলে সেদিন নতুন আদেশ জারি করে একাডেমির চুক্তিভিত্তিক পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিমকে সচিবের দায়িত্ব তুলে দেন লাকী।
৩০ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে প্রায় ২৬ কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
সারাবাংলা/এসজে/একে