Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুলিশের কঠোর নজরদারি, তবু থামেনি ফানুস বিক্রি

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:৪১ | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৪৭

ঢাকা: থার্টি ফার্স্ট নাইটের স্মৃতি এখনো টাটকা। সেই রাতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কমপক্ষে ৪০টি আগুনের ঘটনা ঘটে ফানুস থেকে। একদিন পরই আবার সাকরাইন উৎসব, তাতে অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে অনেকেই উড়িয়ে থাকেন ফানুস। তবে থার্টি ফার্স্টের সেই অভিজ্ঞতা থেকেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। ফানুস বিক্রিতে চলছে কঠোর নজরদারি।

পুলিশের কঠোর অবস্থানে লাভ হয়নি তেমন একটা। বন্ধ হয়নি ফানুস বিক্রি। রাজধানীর জুরাইন, সূত্রাপুর, চকবাজার, বংশাল ও শাঁখারীবাজার এলাকায় দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ফানুস। তবে ফানুসের বিক্রি চলছে খানিকটা গোপনে। খুচরা দোকানগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি বন্ধ হয়েছে অনেকটাই।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১২ জানুয়ারি) ও বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফানুস বিক্রি সম্পর্কে এসব তথ্য জানা গেছে। যদিও পুলিশ বলছে, তারা ফানুস বিক্রি ঠেকাতে যথেষ্ট তৎপর।

বিভিন্ন উৎসব-পার্বণেই ফানুস অন্যতম অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে গত প্রায় এক দশকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরুৎসাহিত করে আসলেও থার্টি ফার্স্টেও ফানুস ঠেকানো যায়নি। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য বলছে, ঢাকা ওই রাতকে ঘিরে লক্ষাধিক ফানুস বিক্রি হয়েছিল। সারাদেশে এ সংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ। ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা স্পর্শ করতেই আকাশে ওড়ে লাখ লাখ ফানুস। ওই রাতে ঢাকায় কমপক্ষে সাতটি এবং সারাদেশে আরও ৩৩টি স্থানে আগুন লাগে। এর মধ্যে ঢাকার কলাবাগান, মোহাম্মদপুর ও রায়েরবাগ এবং চট্টগ্রামের আগুন ছিল ভয়াবহ।

থার্টি ফার্স্ট নাইটের পর ফানুসের আগুন নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ। বিশেষ করে ১৪-১৫ জানুয়ারি সাকরাইন উৎসবেও বরাবরই ফানুসের বাড়তি চাহিদা থাকায় ফানুস বিক্রিতে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এলাকাভিত্তিক দোকানগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হয়, কেউ যেন ফানুস বিক্রি না করে। বিক্রি করলে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন পুলিশ সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মাঠে ছিল না পুলিশ, ফানুসের আগুনে পুড়ল ঘরবাড়ি

পুলিশের এমন কঠোর অবস্থানে গলির ছোট মুদি দোকানগুলোতে ফানুস বিক্রি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু আড়ালে-আবডালে ফানুসের বিক্রি নেহায়েত কম নয়। রাজধানীর জুরাইন বালুর মাঠ এলাকায় যেসব বড় বড় পাইকারি দোকান রয়েছে, তার প্রত্যেকটিতেই ঘুড়ির সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে ফানুসও। এর মধ্যে বিক্রমপুর স্টোর, কুমিল্লা স্টোর, চাঁদপুর স্টোর, নোয়াখালী স্টোরের মতো দোকানগুলো একেকদিন হাজার হাজার ফানুস বিক্রি করছে। পাইকারিতে একেকটি ফানুস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।

সূত্রাপুর বাজারে বেশ কয়েকটি দোকানে ফানুস বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। তবে ফানুস কিনতে গেলে প্রথমেই বলা হয়, নেই। এরপর জোরাজুরি করলে বলা হয়, ৫০ টাকা করে পড়বে ফানুস। পরে সেই দামেই ক্রেতারা ফানুস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এই বাজারটি সূত্রাপুর থানার লাগোয়া। বলা চলে, অনেকটা পুলিশের সামনে দিয়েই কিনে নিয়ে যাচ্ছে ফানুস।

এর বাইরে শাঁখারীবাজার তো আছেই। ঢাকাবাসীর সবারই জানা, এই এলাকাটিই ঘুড়ি, ফানুস আর বিভিন্ন ধরনের বাজি তৈরির কারখানা। যেকোনো উৎসবে বেশিরভাগ বোমা ও আতশবাজি এই শাঁখারীবাজার থেকেই সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ঘুড়ি উৎসবের ৯০ ভাগও যায় এখান থেকেই। ফানুসেরও সবচেয়ে বড় উৎস এই এলাকা। এখান থেকেও দেদারছে ফানুস বিক্রি হচ্ছে। আগের মতো অলিগলির ফুটপাতে দোকান না বসলেও বিক্রিতে কমতি নেই। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দোকানগুলো থেকে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ফানুস।

আরও পড়ুন- থার্টিফার্স্টে ঢাকার আকাশে ৫০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ আনন্দ! কে দায়ী?

শাঁখারীবাজার এলাকায় কথা হলো বোরহান উদ্দিন সপ্তের সঙ্গে। একটি দোকান থেকে ফানুস কিনে বের হওয়া সপ্ত সারাবাংলাকে বলেন, ৫৫ টাকা দিয়ে একটি ফানুস কিনলাম। দোকানদার অবশ্য বলে দিয়েছে লুকিয়ে নিতে। কারণ পুলিশ দেখলেই ধরবে।

মানিক নামে এক কিশোরের হাতে দেখা গেল দুইটি ফানুস। ১২০ টাকা দিয়ে কিনে পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে সেগুলো নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে।

থার্টি ফার্স্টে ফানুসের কারণে এত আগুন লাগার ঘটনার পরও কেন ফানুস ওড়াতেই হবে— এরকম জানতে চাইলে মানিকের জবাব, ফানুস ওড়ালে কোনো ক্ষতি হয় না। ৩১ ডিসেম্বর আগুন লেগেছিল কয়েক জায়গায় বাতাসের কারণে। তারপরও এটি ক্ষতিকর হলে দোকানেই বা পাওয়া যাবে কেন? ফানুস কেনা বন্ধকরতে হলে দোকানগুলোকে বিক্রি করা বন্ধ করুক। দোকানে না পেলে আর কিনবই বা কীভাবে, ওড়াবই বা কীভাবে?

শাঁখারীবাজারের কয়েকজন দোকানির সঙ্গেও কথা হলো সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের। বললেন, যুগ যুগ ধরে শাঁখারীবাজারে ঘুড়ি, ফানুস আর আতশবাজি বিক্রি করে আসছেন। কখনো ফানুসকে ক্ষতির কারণ মনে হয়নি। ফানুস থেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে দেখেননি। বলতে গেলে থার্টি ফার্স্টেই প্রথম ফানুস থেকে বড় ধরনের আগুনের ঘটনা দেখেছেন। তারপরও অন্যদের দেখাদেখিই সবাই বিক্রি করছেন ফানুস।

ফানুস বিক্রি বন্ধ রাখতে পুলিশের তৎপরতা নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি বলেন, পুলিশ আসে। আতশবাজি ও ফানুসসহ ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর কিছু টাকা চায়। টাকা পেলে ফানুস আর আতশবাজিসহ ছেড়েও দেয়। আবার আগে থেকে টাকা দিয়ে রাখলে আবার ধরেই না।

একইভাবে চকবাজারেও দেদারসে বেচাবিক্রি হচ্ছে ফানুস আর আতশবাজির। এখানকার ব্যবসায়ীদের দাবি, এসব পণ্য বিক্রি বন্ধে কোনো আইন নেই। ফলে পুলিশের পক্ষ থেকে এগুলো বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আইনি ভিত্তি নেই। তারপরও ওপর থেকে চাপ এলে থানা পুলিশের কেউ এসে বলে যায়। পরে আর খবর থাকে না।  অন্যসময় বিট পুলিশ এসে টাকা নিয়ে চলে যায়।

দাহ্য বিবেচনায় ফানুস বিক্রি বন্ধের পক্ষে মত দিলেন ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা মেট্টোপলিটন) দেবাশীষ বর্ধন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘুড়ি ক্ষতিকর নয় বলে বন্ধের প্রয়োজন পড়ে না। কিছু আতশবাজিও তেমন ক্ষতিকর না। তারপরও প্রয়োজন বুছে বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে আতশবাজির ব্যবহার সীমিত করার দরকার আছে। তবে দাহ্য পদার্থ থাকায় ফানুস ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে। তাই এটি নিষিদ্ধই হওয়া প্রয়োজন। এটি উড়ে গিয়ে কোথায় পড়বে, তা কেউ বলতে পারে না। কখনো বাসা বাড়িতে পড়ছে, কখনো বিদ্যুতের তারে পড়ছে, কখনো খড়ের গাদায় পড়ছে। যেখানেই পড়ুক, আগুন লেগে যাচ্ছে। ফলে এটি নিয়ে কঠোর অবস্থান থাকা প্রয়োজন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি, মিডিয়া) ফারুক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ফানুস বন্ধে আমরা যথেষ্ট তৎপর রয়েছি। থানা পুলিশ এলাকাভিত্তিক কাজ করেছে। ডিএমপি ফানুস নিষিদ্ধ করেছে। এবার দুয়েক জায়গায় বিক্রি হলেও আগামীতে আরও বেশি কঠোর হবে পুলিশ। কারও হাতে ফানুস আর আতশবাজি থাকলে তাকে ধরতে বলা হয়েছে। ফানুস আর আতশবাজি রেখে তারপর তাদের ছাড়তে বলা হয়েছে।

ফানুস বিক্রি আইনত নিষিদ্ধ নয়— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডিসি মিডিয়া বলেন, ডিএমপি অ্যাক্ট অনুযায়ী কমিশনার যেসব বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেন, সেটিও এক ধরনের আইন। ফলে ফানুস বিক্রি বন্ধে পুলিশের তৎপরতার আইনি ভিত্তি নেই— এটি ভুল ধারণা।

২০২০ সালে প্রবারণা পূর্ণিমায় ওড়ানো ফানুস । ফাইল ছবি

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

টপ নিউজ থার্টি ফার্স্ট ফানুস থেকে আগুন ফানুস বিক্রি সাকরাইন উৎসব

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর