‘দুর্ঘটনা হলেই ড্রাইভারকে পেটাবেন, এটা ঠিক না’
১২ জানুয়ারি ২০২২ ১২:৪৪
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই, দোষ কার সেটা পরে দেখা যাবে। কাজেই সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারকে মারা, দুর্ঘটনা হলেই ড্রাইভারকে পেটাবেন, গাড়িতে আগুন দিবেন, গাড়ি পোড়াবেন, এটা কিন্তু ঠিক না। আইন কেউ হাতে তুলে নেবেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারাই দেখবে আইনগত কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকালে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত প্রকল্পগুলোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো হল—ঢাকা এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহিদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস; সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ মহাসড়ক; বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগসড়ক; রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর চেংগী নদীর উপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতুর উদ্বোধন।
গণভবন প্রান্ত ছাড়াও শহিদ রমিজ উদ্দীন পথচারী আন্ডারপাস, সিলেট সেনানিবাস ও রাঙ্গামাটি নানিয়ারচর সেতু প্রান্ত ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল।
সবাইকে ট্রাফিক রুলস মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। হয়ত কেউ যানবাহনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পরে গেল। তখন ড্রাইভারের মনে একটা ভয় থাকে, আমি যদি এখন গাড়ি থামাই আমাকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলে দেবে। সেই ভয়ে সে গাড়ি চালিয়ে যায় এবং যে মানুষটা পরে যায় সে হয়ত বেঁচে যেত। কিন্তু পরে ভীত হয়ে যখন গাড়ি চালায় তখন চাকার তলে পিষ্ট হয়ে একটা মানুষের জীবন চলে যায়।
মহাসড়কে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ করে তা বাস্তবায়নের কাজ চলছে বলেও এসময় উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০২০ আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করেছি। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের কাঙ্খিত যে কর্মসূচি সেটা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এমনকি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ৫০ বছর পূর্তির কর্মসূচিও আমরা ব্যাপকভাবে নিয়েছিলাম কিন্তু ভার্চুয়ালি করতে হয়েছে।
করোনার আবার নতুন একটা ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে। তাই সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্দেশনাগুলি মেনে চলার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আরও উন্নত হোক সেটাই চাই। তার ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন আরও দ্রুত হবে, অর্থনৈতিকভাবে আমরা স্বাবলম্বি হব এবং ২০২২ সালেই আমাদের বেশ কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, কাজেই আওয়ামী লীগ সরকারে আসার ১৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই ১৩ বছরে বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিকভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে উন্নতি আমরা করতে পেরেছি, এটা আমাদের জাতির প্রতি, আমাদের দেশের মানুষের জন্য, সাধারণ মানুষ, তৃণমূল পর্যায়ের যে মানুষগুলি সেই মানুষের প্রতি আমাদের যে প্রতিশ্রুতি সেটারই বাস্তবায়ন।
যে চেতনা নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন , সেই চেতনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাংলাদেশ হবে বিশ্বে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ এবং আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমরা এগিয়ে যাব, বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। সেটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতির জন্য ইতোমধ্যেই কিন্তু আমাদের পদক্ষেপ নিয়েছি।
তিনি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ডেল্টা প্ল্যানসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়ন করে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ থামিয়ে দিতে পারবে না। সেটাই আমরা চাই।
এসময় উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলোর নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকটি জায়গায় রাস্তা বা সেতু নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন একটা কাজ ছিল। বিশেষ করে আন্ডারপাস নির্মাণের বিষয়টা। বক্স পুশিং করে আন্ডারপাস নির্মাণ কিন্তু আমাদের প্রথম অভিজ্ঞতা। আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে এটা সম্পন্ন করে একটা নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যদিও বক্স পুশিং প্রযুক্তি অত্যন্ত ব্যয়বহুল, কিন্তু আমি মনে করি যে সম্পূর্ণ সড়কের চলাচল ব্যবস্থা অব্যাহত রেখে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন হল। আগামীতে আমাদের যতগুলি কাজ করব, এভাবেই করে ফেলব যেন মানুষের কোনো অসুবিধা না হয়।
এসময় গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সারাবাংলা/এনআর/এসএসএ